Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Health

দুই হাসপাতাল ঘুরে বাবার কোলে মৃত্যু হল মেয়ের

রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়ের বুকের উপরে ভেঙে পড়েছিল ছাদের চাঙড়।

বিপজ্জনক: ছাদের এই অংশ (বাঁ দিকে) খসে পড়েই আঘাত পায় সুমাইয়া (ডান দিকে)। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বিপজ্জনক: ছাদের এই অংশ (বাঁ দিকে) খসে পড়েই আঘাত পায় সুমাইয়া (ডান দিকে)। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২৯
Share: Save:

রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়ের বুকের উপরে ভেঙে পড়েছিল ছাদের চাঙড়। ছোট মেয়ের চিকিৎসা করাতে বাবা ছুটেছিলেন পর পর দু’টি সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু অভিযোগ, কোথাও মেয়েকে ভর্তি করে ন্যূনতম পর্যবেক্ষণে রাখা হয়নি। একটি হাসপাতালে শুধু আহত মেয়েটির এক্স-রে করে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যটিতে তাকে শুধু ইঞ্জেকশন দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর খানিক পরে বাড়ি ফিরে আসার পথে বাবার কোলেই মারা যায় মেয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার ভোরে।

মৃতার নাম সুমাইয়া সারা (১১)। কামারহাটির বাসিন্দা, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া সোমবার রাতে মায়ের পাশে ঘুমিয়েছিল। রাত ২টো নাগাদ ছাদের চাঙড় ভেঙে তার বুকের উপরে পড়ে। তার পরেই বুকে যন্ত্রণা শুরু হয়।

সুমাইয়ার বাবা মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, ‘‘মেয়ের বুকে যন্ত্রণা করছিল। বাড়ির কাছেই সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। সেখানে মেয়েকে শুধু এক্স-রে করে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলল। আমরা মেয়েকে নিয়ে আর জি কর হাসপাতালে গেলাম। সেখানে জরুরি বিভাগ থেকে প্রথমে পাঠানো হল সাত তলায়। সেখানে এক্স-রে দেখে মেয়েকে ইঞ্জেকশন দিল। তার পরে বলল বাড়িতে নিয়ে চলে যান।’’

সুমাইয়ার পরিবারের লোকজন জানান, ৪টে নাগাদ সুমাইয়াকে নিয়ে আর জি কর থেকে বেরিয়ে তাঁরা বাড়ির দিকে রওনা দেন। সাড়ে ৪টে নাগাদ সুমাইয়ার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। একবার বমিও করে সে। এর কিছু ক্ষণের মধ্যে বাবার কোলেই মারা যায় ১১ বছরের ওই বালিকা।

ঘটনার পরে তাই দুই সরকারি হাসপাতালের ভূমিকা নিয়ে এক গুচ্ছ প্রশ্ন তুলছে সুমাইয়ার পরিবার। তাঁদের প্রশ্ন, চিকিৎসকেরা কেন বুঝতে পারেননি সুমাইয়ার কতটা আঘাত লেগেছিল?

সুমাইয়ার পিসি রুকসানা পারভিন বলেন, ‘‘শরীরে বাইরে থেকে কোনও আঘাত দেখা যাচ্ছিল না। তবে ও নিশ্বাস নিতে পারছিল না। বুকে ব্যথা হচ্ছিল। নিশ্চয় ভিতরে কোনও সমস্যা ছিল। আর জি করে এক্স-রে রিপোর্ট দেখে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’’

এই ঘটনায় অবাক বিশেষজ্ঞেরাও। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পাঁজর ভেঙে হৃদ্‌যন্ত্র কিংবা ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও মৃত্যু হতে পারে। বুকে আঘাত লাগলে মেরুদণ্ডে প্রথমে ছোট চিড় ধরলেও পরে তা বড় আকার নিতে পারে। শরীরের ভিতরে কোনও শিরা-ধমনী প্রথমে অল্প ছিঁড়ে গেলেও পরে তা বড় হয়ে বেশি রক্তক্ষরণে মৃত্যু হতে পারে।’’ ফলে চিকিৎসকরদের একাংশ মনে করছেন, দুর্ঘটনার পরে ওই বালিকার শরীরের ভিতরের কী অবস্থা, তার পরীক্ষা সম্ভবত হয়নি। কেন আর জি কর হাসপাতালে ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে ওই বালিকা মারা গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে স্বাস্থ্য দফতরও।

রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘কেন সাগর দত্ত থেকে রেফার করা হল তা যেমন খতিয়ে দেখা হবে, তেমনি একটি ইঞ্জেকশন দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে রোগী মৃত্যু হল কেন, তা-ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।’’

কামারহাটি জুটমিলের তাঁত বিভাগের কর্মী মহম্মদ সেলিম জানান, আর জি কর থেকে বাড়ির কাছে এসেই বমি করে সুমাইয়া। তার পরেই নেতিয়ে পড়ে সে। আর কথা বলেনি সুমাইয়া। শ্রমিক কলোনির নিউ লাইনের একটি দশ বাই দশ ঘরে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সেলিমের সংসার।

এ দিন শ্রমিক কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, সুমাইয়ার দেহ বাড়ির বাইরের শোয়ানো। একটু দূরে বসে কাঁদছেন সেলিম। তাঁর কথায়, ‘‘আর জি কর ইঞ্জেকশন দিয়ে বলেছিল বাড়িতে এনে বিশ্রামে রাখতে। ভেবেছিলাম সকালে আবার ডাক্তার দেখাব। কিন্তু সুযোগ পেলাম না।’

মা রিজাওনা নেজ বলেন, ‘‘সুমাইয়া ও ছোট মেয়ে জেনাব জারাকে নিয়ে খাটে ঘুমিয়েছিলাম। কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজে চোখ খুলে দেখি সুমাইয়ার বুকের উপর চাঙড় ভেঙে পড়েছে। পাশে শুয়ে থাকা জেনাবের মাথাও ফুলে গিয়েছে।’’

এ দিন সুমাইয়াদের ঘরে ঢুকে দেখা গেল, বিছানায় ছড়িয়ে রয়েছে চাঙড়। আশপাশের ঘরগুলিরও একই রকম বিপজ্জনক অবস্থা।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Hospital Refusal Patient Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE