ইঁদুর। হ্যাঁ, ইঁদুরবাহিনী। নকশার ত্রুটি বা ঝালাইয়ের সমস্যা কিংবা খারাপ মানের ইমারতি দ্রব্যের কোনওটাই নয়। কেবল ইঁদুর বাহিনীই হাল খারাপ করে দিয়েছে কলকাতার একটি পুরনো সেতুর।
তিন বছর আগে ইঁদুরকাণ্ডে ঢাকুরিয়া ব্রিজ নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। প্রায় ৫৩ বছরের পুরনো সেতুটির পেটে, সেতুর রাস্তা থেকে ফুট চারেক নীচের মাটি আলগা করে দিচ্ছিল ইঁদুরবাহিনী। সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে স্রেফ জোড়াতালি দিয়ে মেরামতি হয়। পুরনো আর কোনও সেতুরই তেমন রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। ক্রমেই জীর্ণ হচ্ছে এগুলি। ভবিষ্যতে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে স্বীকার করেছে কলকাতা পুরসভা, কেআইটি এবং রাইটস— তিনটি সংস্থাই।
তাদের বক্তব্য, পোস্তায় গণেশ টকিজের কাছে নির্মীয়মাণ সেতু ভেঙে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণ— কলকাতার পুরনো সেতুগুলোর অবস্থাও ভাল নয়। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার ঠিক মতো না হওয়ার ফলে সেগুলো থেকেও অদূর ভবিষ্যতে বিপদ দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন
এই থামের ওপর সেতু! শিউরে ওঠেন ইঞ্জিনিয়ার
২০১৩ সালে ঢাকুরিয়া ব্রিজের নাম বদল করে রাখা হয় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সেতু। কিন্তু, নামকরণই শুধু হয়েছে, সেতুর নিমার্ণকাজে সংস্কার হয়নি। সেই সময়ে দেখা যায়, সেতুর কিছু অংশে গর্ত। সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব ‘রাইটস’-কে দেয় পুরসভা। ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয় সেতুর উপর দিয়ে। তার পর কি পর্যাপ্ত মেরামতি হয়েছে?
কলকাতা পুরসভার ডিজি (রাস্তা) সৌমিত্র ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘না, তা হয়নি। সেতুটির পুরনো নকশা, নথি এ সব মেলেনি। আমরা ‘রাইটস’-কে এ সব দেখতে বলি। ওদের এক কোটির উপর টাকাও দিয়েছি। কতটা কাজ হয়েছে, ওরা বলতে পারবে।’’
৩৮০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর মাঝের অংশ অর্থাৎ রেলের উপরের অংশ ৮০ মিটার। সেতুটির পেটে ইঁদুর মোটা মোটা গর্ত করে দেওয়ায় সঙ্কট দেখা দিচ্ছিল গাঁথনির। ‘রাইটস’-এর গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার তরুণ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু দিন সেতুটির নকশা এবং নথি সংগ্রহের চেষ্টা করেও পাইনি। তার পর আমাদের বিভাগের হাত থেকে অন্য বিভাগকে সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওরা কংক্রিট দিয়ে ইঁদুরের গর্ত ভরে দিলেও স্থায়ী কাজ হয়নি।’’ কেন হয়নি? ‘রাইটস’-এর এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘এর পর বিষয়টি ঝিমিয়ে যায়। এ ব্যাপারে সে ভাবে কোনও নির্দেশ আসেনি।’’
সে তুলনায় আরও দক্ষিণে সুকান্ত সেতুর নির্মাণ-পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভাল হলেও যে কোনও সময় অন্য দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। বছর কুড়ি আগে ওই সেতুর উপর থেকে একটি মিনিবাস অপর একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে রেলিং ভেঙে নীচে পড়ে যায়। বেশ কয়েক জন হতাহত হয় তাতে। এর পরেও নানা দুর্ঘটনা ঘটেছে ওই সেতুতে। সমস্যা হচ্ছে, সেতুর ঠিক মাঝ বরাবর রাস্তা পার হওয়া নিয়ে। ঠিক নীচে যাদবপুর স্টেশন থেকে সেতুর দু’পাশের সিঁড়ি দিয়ে যাত্রীরা উপরে উঠে রাস্তা অতিক্রম করেন। তাতেই ওঁদের কারও কারও সঙ্গে ধাবমান গাড়ির ধাক্কার আশঙ্কা। ২৩ বছর বয়সের সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। মাঝের এক্সপ্যানশন জয়েন্ট ক্ষয়ে গিয়েছিল। ২০১৪-র জুন মাসে পূর্ত দফতর সেটি মেরামত করে। পূর্ত দফতরের এক পদস্থ অফিসার উপরের যান-দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘আমরা পুলিশকে বলেছি, ওখানে ট্রাফিককর্মী মোতায়েন করতে। সেক্ষেত্রে আশঙ্কার মাত্রা কমবে।’’ পুলিশের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা বিবেচনা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy