Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

অস্ত্রোপচারে গলা থেকে বেরোল লোহার কোঁচ

রোগীকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তাঁর গলা আর কান এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছিল মাছ ধরার পাঁচমুখী লোহার কোঁচ। কানের লতি ভেদ করে গিয়েছিল সেটি। রক্তে ভেসে যাচ্ছিলেন রোগী। প্রায় নেতিয়ে পড়া সেই সঙ্কটজনক রোগীকে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নতুন জীবন দিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। 

কোঁচ ফুঁড়ে এ ভাবেই ক্ষতবিক্ষত হন বিশ্বজিৎ।

কোঁচ ফুঁড়ে এ ভাবেই ক্ষতবিক্ষত হন বিশ্বজিৎ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

রোগীকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তাঁর গলা আর কান এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছিল মাছ ধরার পাঁচমুখী লোহার কোঁচ। কানের লতি ভেদ করে গিয়েছিল সেটি। রক্তে ভেসে যাচ্ছিলেন রোগী। প্রায় নেতিয়ে পড়া সেই সঙ্কটজনক রোগীকে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নতুন জীবন দিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

সোমবার সকালে প্রতিদিনের মতোই কাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন বনগাঁর বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক বিশ্বজিৎ টিকাদার। অভিযোগ, পিছন থেকে লোহার কোঁচ নিয়ে অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন দুই প্রতিবেশী। সঙ্গে সঙ্গে পরিজনেরা প্রথমে তাঁকে নিয়ে বনগাঁ হাসপাতালে যান। সেখান থেকে রেফার করা হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আসতে গিয়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পরিবার সূত্রের খবর, প্রথমে তাঁকে জরুরি বিভাগে দেখানো হয়। প্রাথমিক পরীক্ষা করে দ্রুত অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব নেন ইএনটি চিকিৎসক স্বপন ঘোষের নেতৃত্বে অলোকেন্দু বসু, ইন্দ্রনীল খাটুয়া ও মৈনাক মৈত্র এবং তিন অ্যানাস্থেটিস্ট অনসূয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্পিতা দাস ও মাসুক আলিকে নিয়ে গঠিত একটি দল। চিকিৎসকেরা জানান, লোহার রডের বাইরের অংশ প্রথমে কাটা হয়। তার পরে সিটি স্ক্যান-সহ অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, নীচের মাড়ি ছুঁয়ে কানের লতি পর্যন্ত এঁফোড়-ওফোঁড় হয়ে রয়েছে সেটি।

চিকিৎসক অলোকেন্দু বসু জানান, প্যারোটিড গ্ল্যান্ড অর্থাৎ লালা গ্রন্থিকে ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল রডটি। তাতে গ্রন্থির নালীপথের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে অন্য স্নায়ু এবং রক্তজালিকার ক্ষতি হয়নি। এ ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে টিউব ঢোকানো সম্ভব না হওয়ায় ট্র্যাকিয়া ফুটো করে টিউব ঢোকানো হয়েছিল। সে পথেই অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া হয় রোগীকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে রডটি যদি সামান্য উপর-নীচ হত, তা হলে হৃৎপিণ্ড থেকে আসা ধমনীর ক্ষতি হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হত রোগীর।

অস্ত্রোপচারের পরে ওই ব্যক্তি। নিজস্ব চিত্র

অলোকেন্দুবাবু বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের সময়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়েছিল, কারণ প্যারোটিড গ্ল্যান্ড বা তার পাশের স্নায়ু সামান্য ক্ষতি হলে রোগীর মুখ বেঁকে যেত কিংবা খাবার সময়ে লালা বেরোনো বন্ধ হয়ে জীবনযাপন ব্যাহত হত।’’

বিশ্বজিৎবাবুর ভাই সত্যজিৎবাবু বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুদের জন্যই নতুন জীবন পেলেন দাদা। আরও দশ-পনেরো দিন পর্যবেক্ষণে রেখে ওঁকে ছাড়া হবে বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Hospital Critical Operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE