Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

স্কুলের পথে ক্রেনে পিষ্ট মেয়ে, জখম বাবা

বৃহস্পতিবার সকালে বেলেঘাটা-সিআইটি (হেমচন্দ্র নস্কর) রোডের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম ঘটে ওই এলাকায়।

শ্বেতা দাস।

শ্বেতা দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৩
Share: Save:

সাইকেলের পিছনে ক্যারিয়ারে বসে মেয়ে। তাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গলি ছেড়ে বড় রাস্তায় উঠেছিলেন বাবা। সেই সময়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি ক্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় শ্বেতা দাস (১৪) নামে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীটি। গুরুতর জখম বাবা রবি দাসকে ভর্তি করা হয়েছে একটি নার্সিংহোমে।

বৃহস্পতিবার সকালে বেলেঘাটা-সিআইটি (হেমচন্দ্র নস্কর) রোডের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম ঘটে ওই এলাকায়। ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী ক্রেনটি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর করা হয় আরও একটি ক্রেন-সহ পুলিশের গাড়িও। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বেলেঘাটা থানা ঘেরাও করে জনতা। সব মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ, ভাঙচুর চলে। দুপুরের পরে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

স্থানীয় মানুষ জানাচ্ছেন, সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে মেয়েকে সাইকেলে নিয়ে বেলেঘাটা-সিআইটি রোডের পাশে শুঁড়াকন্যা স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন জোড়ামন্দিরের রাধামাধব গার্ডেন লেনের বাসিন্দা রবি দাস। গলি থেকে সিআইটি রোডে ওঠার সময় ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই একমুখী রাস্তাটি দিয়ে শুধু ফুলবাগান থেকে সিআইটির দিকে যাওয়ার কথা। মাঝখানে রয়েছে ডিভাইডার। সেই রাস্তা ধরে তখন সিআইটির দিকে একটি ক্রেন যাচ্ছিল। রবিবাবু মেয়েকে নিয়ে ভুল পথে সিআইটি রোড পেরিয়ে উল্টো দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখনই উল্টো দিক থেকে আসা ক্রেনটি তাঁদের ধাক্কা মারে।

ক্ষোভ: শ্বেতার মৃত্যুর পরে উত্তেজিত জনতা জ্বালিয়ে দেয় ঘাতক ক্রেনটি। বৃহস্পতিবার বেলেঘাটা। নিজস্ব চিত্র

প্রত্যক্ষদর্শী তন্ময় দাস বলেন, ‘‘ক্রেনের ধাক্কায় প্রথমে সাইকেলটি উল্টে পড়ে। ডিভাইডারের দিকে পড়ে যাওয়ায় হাত-পা ভেঙে গেলেও প্রাণে রক্ষা পান বাবা। কিন্তু মেয়েটি রাস্তার মাঝখানেই ছিটকে পড়ে। তার পরে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টাও করে। কিন্তু ব্রেক কষলেও চালক ক্রেনটি থামাতে পারেনি। মেয়েটিকে পিষে দেয় ক্রেনটি।’’

খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই বেলেঘাটা থানার পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে। কিন্তু তার আগেই মৃত্যু হয় তুলির। এর পরেই ক্রেনটি ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গোটা সিআইটি রোড লোকে লোকারণ্য। দাউদাউ করে জ্বলছে ক্রেনটি। পুলিশ, দমকল আগুন নেভাতে চেষ্টা করছে। ভাঙচুর চলছে অন্য ক্রেন, পুলিশের গাড়িতে। রাস্তায় ছড়ানো কাচ। এর মধ্যেই স্থানীয়েরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বেলেঘাটা থানায়। ক্রেন চালককে গ্রেফতার করে মামলা রুজু করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ কোনও মতে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে গাড়িতে আগুন ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার দায়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধেও পাল্টা একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

সরু গলির মধ্যে ছোট্ট বাড়ি আসবাবপত্রের ব্যবসায়ী রবিবাবুর। খবর পেয়ে ভিড় জমে যায় সেখানেও। বড় মেয়ে রাখী ও স্ত্রী তনিমাদেবীকে তত ক্ষণে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বাপের বাড়িতে। মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি বাড়িতে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়া ইস্তক ঘরের মধ্যে কেঁদে চলেছেন তুলির (শ্বেতার ডাকনাম) জে‌ঠিমা শক্তি চৌধুরী। বলছেন, ‘‘স্কুলে যাবে বলে তাড়াহুড়ো করে মেয়েটা খেয়ে বেরোল। কখন ফিরবে কে জানে!’’

মেয়ের খবর তখনও জানেন না বাবাও। এ দিন নার্সিংহোমে আহত রবিবাবু বলেন, ‘‘ছিটকে যাওয়ার সময় দেখলাম, তুলি উঠে দাঁড়িয়েছে। ভাবলাম, যাক!’’ তার পরেই রবিবাবুর প্রশ্ন, ‘‘তুলি কোথায়?’’ কাঁদতে কাঁদতে বাবা বলেন, ‘‘আমায় তুলে নাও, মেয়েটার যেন কিছু না হয় ভগবান!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crane Run Over child Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE