জুঁই বিশ্বাস, সৌমিতা চক্রবর্তী, শ্বেতা মেটা।
২০১০-এ ছিল মাত্র ১২০০। ২০১৪-য় মোদী হাওয়ায় বিজেপি-র ভোট বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ফলাফলে তৃণমূলের পিছনে থাকলেও বামেদের টপকে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি-র ওই উত্থান ভাবিয়ে তুলেছিল শাসক দলকেও। জায়গাটি আবার রাজ্যের যুব এবং আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের খাসতালুক নিউ আলিপুরে। কলকাতা পুরসভার ৮১ নম্বর ওয়ার্ডে। যেখানে বাসিন্দাদের প্রায় ৪০ ভাগ অবাঙালি। সেই হিসেব মাথায় রেখেই অনেকে অন্য ‘অঙ্ক’ কষতে শুরু করেছেন। যদিও দিল্লির সেই পালা বদলের হিসেব এখানকার মিশ্র-অগ্রবাল-পাণ্ডে-মিন্নি পরিবারের লোকেরা মাথায় রাখতে নারাজ। তাঁদের কাছে নিউ আলিপুরের হাল একদা শহরের ‘পশ’ এরিয়া বলে পরিচিত বালিগঞ্জকেও টেক্কা দিয়েছে।
টানা ১৫ বছর তৃণমূলের আধিপত্য থাকা ওই ওয়ার্ড এ বারও দলের কাছে ‘নিশ্চিত’ হলেও লোকসভার ওই ফল নজর কাড়ছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। মোদীর আহ্বানে যে স্রোত নিউ আলিপুরে তাদের দলকে ‘আশা’ জুগিয়েছিল, এ বারও তা ধরে রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। অন্য দিকে, ৮ হাজার থেকে ফের ২ হাজারের ঘরে তাঁদের ফিরিয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তৃণমূল প্রার্থী তথা মন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ জুঁই বিশ্বাস।
এক সময়ে সিপিআই-এর দখলে ছিল এই এলাকা। তৃণমূলের জন্মের পর থেকে তা দলের দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বস্ত সহচর অরূপ। একমাত্র ‘মোদী-ঝড়’ বাদ দিলে প্রায় সব ভোটেই তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ বামেরাই ছিল। এ বারও বাম প্রার্থীকেই তাদের মূল প্রতিপক্ষ বলে মনে করছে তৃণমূল।
কেন?
সিপিআই-এর প্রার্থী সৌমিতা চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র ভবিষ্যত নেই। মোদী আলোও ফিকে হয়ে গিয়েছে। এখানে ওঁদের সংগঠনই নেই।’’ বামেরা যা-ই বলুক না কেন, নিউ আলিপুরের মেন রাস্তায় পোস্টার-ব্যানারে নিজেদের তুলে ধরতে কসুর করেনি বিজেপি। প্রার্থী আইনজীবী শ্বেতা মেটা গত বারও লড়াই করেছিলেন। পুর-পরিষেবা দেওয়ার আর্জি নিয়েই ছুটছেন অবাঙালি-বাঙালি এলাকায়।
এ থেকে পি ১৫টি ব্লক-সহ গোটা কয়েক বস্তি এবং গলি নিয়ে তৈরি হয়েছে ৮১ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে ৩৬ হাজার ভোটার। গত নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী। গত পাঁচ বছরে কতটা কাজ হয়েছে?
বিজেপি-র শ্বেতা বললেন, ‘‘পুর-পরিষেবা দিতে ব্যর্থ কাউন্সিলর।’’ তা শুনে রীতিমতো বিরক্ত ‘ও’ ব্লকের বাসিন্দা ইন্দ্র অগ্রবাল। তাঁর কথায়, ‘‘এই এলাকার নাগরিক হিসেবে গর্বিত আমরা।’’ ৫০ বছর ধরে নিউ আলিপুরে ‘ই’ ব্লকে রয়েছেন শ্রীরূপা মিশ্র। বললেন, ‘‘একটা সময়ে তো এখানে ফুটপাথই ছিল না। এখন ফুটপাথের দু’ধারে সাজানো বাগান দেখে মন জুড়িয়ে যায়।’’ জঞ্জাল সাফাইয়ের ব্যবস্থাও এলাকার পরিবেশকে সুস্থ রেখেছে বলে মনে করেন এ ব্লকের পদ্মা মিন্নি, নীলম পাণ্ডেরা। ‘এফ’ ব্লকের পুরনো বাসিন্দা অনিমা মল্লিক জানালেন, এক সময়ে জলে ডুবে থাকত বাড়ির সামনের রাস্তা। এখন সে সব অতীত। মনেই পড়ে না এখানে জল জমত।’’ অর্থাৎ, পুর-পরিষেবার উপরে নির্ভর করে যে পুরভোট, তার প্রায় সব ক’টাতেই মানুষকে ‘স্বস্তি’ দিতে সক্ষম বলে মনে করছেন প্রার্থী তথা বিদায়ী কাউন্সিলর জুঁই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy