বিধাননগর পুর এলাকার আদর্শপল্লির একটি বাড়িতে বসানো হয়েছে পানীয় জল তৈরির এমন ব্যবস্থা। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির মধ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোরিংয়ের যন্ত্র বসানো। যার মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ জল ভূগর্ভ থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে রাজারহাট-গোপালপুর ও রাজারহাট-নিউ টাউন বিধানসভা এলাকায়। অভিযোগ, এর পরে সেই জল শোধন করে বোতল ও বড় বড় ড্রামে ভরে পানীয় জল হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে এলাকায়। শুধু তা-ই নয়, পরিশোধনের পরেও বিপুল পরিমাণ জল স্রেফ নর্দমায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে!
এমনই পরিস্থিতি বিধাননগর পুরসভার ১ থেকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহভাগ এলাকায়। অভিযোগ, ভূগর্ভস্থ জল তুলে তা পরিশোধন করে পানীয় জল হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে। যা পুরোপুরি বেআইনি। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ গত বছর বিশ্ব জল দিবসে বিধাননগর পুরসভাকে স্মারকলিপি দিয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, এর প্রভাব পড়ছে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উপরে। কিন্তু মানুষের প্রয়োজনের দিকটি গুরুত্ব পেলে সে ক্ষেত্রে যাতে পরিশোধিত অংশের বাইরের জল পুনরায় মাটিতে রিচার্জ করানো যায়, তার ব্যবস্থা করা উচিত বলেও পুরসভাকে বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে তখন জানানো হয়েছিল।
বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, বিজ্ঞান মঞ্চ জানানোর আগে ২০২২ সালে এ নিয়ে পুর বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা হয়। তার পরে জল সরবরাহ বিভাগের তরফে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিদের এ নিয়ে জানাতে বলা হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ জল তোলা ঠেকানো নিয়ে পুরপ্রতিনিধিদের কাউকে তেমন ভাবে সদর্থক ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ। এমনকি, রাজারহাট এলাকায় পরিশোধিত জলের সংস্থান না থাকায় এই ধরনের জলের ব্যবসা বন্ধ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে, এই আশঙ্কাও বৈঠকে প্রকাশ করেন এক পুরকর্তা।
কতটা নিরাপদ ওই জল? পরিশোধনের পরে কি আদৌ বাকি জল (অপরিশোধিত) আবার মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক পঙ্কজকুমার রায় জানান, উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করলে অপরিশোধিত জল মাটিতে আবার ফেরত পাঠানো সম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘তবে, এ ভাবে তৈরি পানীয় জলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। পুরসভাগুলির সে সব দিকে নজর দেওয়া দরকার। উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করলে অপরিশোধিত জল মাটিতে রিচার্জ করানো যায়। কিন্তু সেই পরিকাঠামো তৈরির জন্য পুরসভাগুলিকে সক্রিয় হতে হবে। কারণ, এ ক্ষেত্রে মাটির নীচের জলের স্তর নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ একই সঙ্গে ওই সব পানীয় জল প্রস্তুতকারী সংস্থার ‘স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেট’ (সুইড)-এর ছাড়পত্র রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিভাগ।
বিধাননগর পুরসভার দাবি, এই ধরনের কোনও শংসাপত্রই সংশ্লিষ্ট জল ব্যবসায়ীদের নেই। মেয়র পারিষদ তুলসী সিংহরায় বলেন, ‘‘আমরা বিজ্ঞান মঞ্চের চিঠি পেয়েছি। কিন্তু জল রিচার্জের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? জল তোলাই তো বেআইনি। আমরা যে ক’টি অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, সে সব প্রকল্পের কারও পুরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা সুইডের শংসাপত্র ছিল না। কোথায়, কতগুলি এমন জলের কারখানা চলছে, সেটাও তো আমাদের ঠিক মতো কেউ জানান না।’’
সেই কাজ তো পুরপ্রতিনিধিদের। তা হলে কি তাঁরা খবর রাখেন না? তুলসী জবাব দেননি। যদিও যাঁরা এ ভাবে জলের ব্যবসা করছেন, তাঁদের দাবি, তাঁরা অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স, শংসাপত্র, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেয়ে যান।
কী ভাবে? ২০ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজিপল্লির বাসিন্দা ভীম দাসের বক্তব্য, ‘‘লোক আছে। সল্টলেকের জল অফিস থেকে সব কাগজ করে দেয়। আমাদের বেআইনি কিছু নেই।’’ তবে ওই জল অফিস কোথায়, তা তিনি জানাতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy