Advertisement
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পড়ুয়াদের স্কুলে ডেকে রেজিস্ট্রেশন, আপত্তি জানালেন শিক্ষকেরাই

স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সংক্রমণ এড়াতে যাবতীয় বিধি মেনেই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

খাতা জমা দেওয়া ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য কেষ্টপুরের একটি স্কুলে পড়ুয়ারা। লাইনে মানা হয়নি দূরত্ব-বিধি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য 

খাতা জমা দেওয়া ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য কেষ্টপুরের একটি স্কুলে পড়ুয়ারা। লাইনে মানা হয়নি দূরত্ব-বিধি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য 

  নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০২:২২
Share: Save:

করোনার দাপটে স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে ছ’মাসেরও বেশি আগে। তার পর থেকে স্কুলে ঢোকার অনুমতি দেয়নি শিক্ষা দফতর। এ বার অবশ্য তার ব্যতিক্রম ঘটল। রেজিস্ট্রেশনের জন্য স্কুলে আসতেই হল একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের। স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সংক্রমণ এড়াতে যাবতীয় বিধি মেনেই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশের মতে, একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের এই রেজিস্ট্রেশন তাদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য। এখন যারা একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে এবং রেজিস্ট্রেশন করাতে আসছে, তাদের উচ্চ মাধ্যমিক ২০২২ সালে। এই করোনা পরিস্থিতিতে রেজিস্ট্রেশন-পর্বটা এখনই না করে কয়েক মাস পিছিয়ে দেওয়াই কি সঙ্গত হত না? পড়ুয়াদের স্কুলে ডেকে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ওই শিক্ষকেরা।

গত কয়েক দিন ধরেই কলকাতার বেশ কিছু স্কুলে রেজিস্ট্রেশন-পর্ব চলছে। যেমন, সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একটি ক্লাসঘরেই পড়ুয়ারা সকলে বসে রেজিস্ট্রেশনের ফর্ম পূরণ করছে। প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এক-একটি বেঞ্চে দু’জন করে পড়ুয়া বসে ফর্ম পূরণ করছে। ওরা স্কুলে আসার আগে ক্লাসরুম খুব ভাল ভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।”

দেবব্রতবাবু জানান, রেজিস্ট্রেশন ফর্মে ছবির নীচে পড়ুয়াদের সই করতে হয়। সেই সই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে মিলিয়ে দেখা হয়। সই করার সময়ে যাতে কোনও রকম ভুলভ্রান্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতেই স্কুলে এসে ফর্ম পূরণের এই ব্যবস্থা।

সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ফর্ম ভরছে একাদশ শ্রেণির ছাত্রেরা। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

শিক্ষা দফতর জানিয়েছিল, রেজিস্ট্রেশন ফর্ম দু’ভাবে পূরণ করা যাবে। পড়ুয়ারা নিজেরা স্কুলে এসে তা পূরণ করতে পারবে। নইলে তাদের অভিভাবকেরা স্কুলে এসে ফর্ম নিয়ে গিয়ে সন্তানদের দিয়ে সই করিয়ে তা জমা দিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু অভিভাবকেরা ফর্ম জমা দেওয়ার পরে যদি দেখা যায়, তাতে কোনও ভুল আছে, তা হলে কিন্তু সেই ফর্ম বাতিল হয়ে যাবে। দেবব্রতবাবু জানান, সেই কারণেই তাঁরা পড়ুয়াদের স্কুলে এসে ফর্ম পূরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানালেন, তিনিও ছাত্রদের স্কুলেই ডেকেছেন। তার জন্য স্কুলকে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। শুভ্রজিৎবাবু বললেন, “করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য-বিধি মেনেই সব কিছু করতে হবে। তবে তার দায়িত্ব শুধু স্কুলের নয়। অভিভাবকদেরও। যতই সাবধানতা অবলম্বন করি না কেন, একটা আশঙ্কা তো থেকেই যায়।” শুভ্রজিৎবাবুর মতে, কলকাতা শহরের অনেক স্কুলেই জায়গা খুব কম। তাই সব ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সব কিছু করা কঠিন হয়ে যায়। সে কথা মাথায় রেখে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কয়েক মাস পিছিয়ে দেওয়াই যেত।

কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনের মতে, পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে তার পরে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন-পর্ব শুরু হলে ভাল হত। ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বললেন, “২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক ও টেস্ট পরীক্ষা কবে হবে, তা দ্রুত ঘোষণা করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই ঘোষণা না করে যেগুলি পরে করলেও চলত, সেগুলি তড়িঘড়ি করা হচ্ছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই শেষ পর্যন্ত পড়ুয়াদের স্কুলে ডেকে আনা হল। কয়েকটি স্কুলে একসঙ্গে অনেক পড়ুয়া ফর্ম পূরণ করেছে বলে শুনেছি। এ বার কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হয়, তা হলে তার দায়ভার কে নেবে? এই প্রক্রিয়াকে কয়েক মাস পিছিয়ে দিলে কারও কোনও ক্ষতি হত না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus COVID-19 Corona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE