Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Donald Trump

ট্রাম্পের মন্তব্যের পরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন মিয়ারা

রক্তক্ষয়ী গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মাদক সমস্যায় জেরবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট দেশ হেটি থেকে বহু মানুষ প্রতিবছর আমেরিকায় আসেন ও শরণার্থীর তকমা পেয়ে আইনি ভাবেই এ দেশে বসবাস করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
বস্টন শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:০৫
Share: Save:

একটা বানানো খবর কয়েক দিনের মধ্যে কিছু মানুষকে কতটা সমস্যায় ফেলতে এবং একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে সেটা, ওহায়োর স্প্রিংফিল্ড শহরের হেশিয়ান কমিউনিটির অভিজ্ঞতা থেকে তা বোঝা যায়।

রক্তক্ষয়ী গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মাদক সমস্যায় জেরবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট দেশ হেটি থেকে বহু মানুষ প্রতিবছর আমেরিকায় আসেন ও শরণার্থীর তকমা পেয়ে আইনি ভাবেই এ দেশে বসবাস করেন। কারও সাতে-পাঁচে না থাকা এই মানুষগুলি হঠাৎই খবরের শিরোনামে, এবং তার কারণটাও খুবই মর্মান্তিক। এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থী— কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রথম বিতর্কের সময়ে ট্রাম্প হঠাৎ বলে বসেন, আমেরিকা অনুপ্রবেশকারীতে ভরে গিয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই অন্য দেশ থেকে পালিয়ে আসা অপরাধী। ট্রাম্প বিশেষ ভাবে স্প্রিংফিল্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি শুনেছেন যে অভিবাসীরা প্রতিবেশীদের পোষ্য কুকুর-বিড়াল চুরি করে খাচ্ছে। এই মন্তব্যটি স্প্রিংফিল্ডে বসবাসকারী হেশিয়ানদের পক্ষে শুধু অপমানজনক নয়, বেশ বিপজ্জনকও হয়ে উঠেছে।

স্প্রিংফিল্ডের বাসিন্দা মিয়া পেরেজ় নামের এক জন হেশিয়ান মা এবং পেশায় শরণার্থীদের আইনজীবী জানান, তাঁর ন’বছরের মেয়ের স্কুল বোমাতঙ্কের জন্য দু’বার খালি করতে হয়েছিল। তা ছাড়া, বাচ্চা মেয়েটিকে স্কুলে তার সহপাঠীরা সমানে প্রশ্ন করে চলেছে, কুকুর বা বেড়াল কেমন খেতে! বিতর্কের পরের সপ্তাহে চার দিনের মধ্যে স্প্রিংফিল্ডের সাইমন কেন্টিন এবং কেনউড এলিমেন্টারি স্কুল থেকে শুরু করে ক্লার্ক স্টেট কলেজ, উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরের অন্যান্য জায়গায় বোমা এবং বন্দুক হামলার অসংখ্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই শহরে হেশিয়ান অধিবাসীদের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি এবং স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট ভীত হয়ে পড়েছেন। এই রকম ত্রিশটিরও বেশি হুমকি আসার জন্য সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল এক সপ্তাহ।স্কুল-কলেজ খোলার পরে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের আগেই এই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন রিপাবলিকান দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জে ডি ভ্যান্স। ভ্যান্সের কথায়, ‘‘আমার উদ্দেশ্য, শরণার্থী সঙ্কটের আসল ছবিটা তুলে ধরা। বাইডেন ও হ্যারিসের শরণার্থী-নীতির ফলে আমাদের দেশের কী অবস্থা হচ্ছে, তা সবার সামনে নিয়ে আসা। ফলে কথাটা ঠিক না ভুল, তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই।’’

প্রসঙ্গত, যে মহিলার একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে স্প্রিংফিল্ডের হেশিয়ানদের সম্পর্কে এই কথা ছড়ায়, তিনি নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর ওই মন্তব্যের পিছনে কোনও ‘তথ্য’ ছিল না। হেশিয়ানদের এ ভাবে ঘৃণার শিকার হতে হচ্ছে দেখে তিনি ‘যথেষ্ট লজ্জিত’ বলেও জানান এরিকা লি নামের ওই মহিলা। ওই ফেসবুক পোস্টে এরিকা লিখেছিলেন যে, পাশের বাড়ির পোষ্য বিড়ালটি হারিয়ে গিয়েছে এবং স্থানীয় এক হেশিয়ানের সঙ্গে তিনি ওই বিড়ালটিকে দেখেছেন। গত মাসে রাস্তার একটি বিড়ালকে মারার জন্য গ্রেফতার হওয়া অ্যালেক্সিস টেলিয়া ফেরেল নামের ২৭ বছর বয়সি এক মানসিক ভারসাম্যহীন হেশিয়ান শরণার্থীর ছবি দিয়ে এরিকার সেই ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়। যাতে ভিত্তি করেই একের পর এক মন্তব্য করে গিয়েছেন ট্রাম্প ও ভ্যান্স।

স্প্রিংফিল্ডের পরিস্থিতি এতটাই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল যে, ওহায়োর রিপাবলিকান গভর্নর মাইক ডিওয়াইন তাঁর নিজের দলের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে এই ধরনের ‘ভিত্তিহীন’ মন্তব্য করতে বারণ করেন। স্প্রিংফিল্ডের হেশিয়ানদের অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেছেন গভর্নর ডিওয়াইন।তবু আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন মায়ার মতো শরণার্থীও। তাঁদের মনে আরও প্রশ্ন, কী হবে ট্রাম্প-ভ্যান্স জুটি নির্বাচনে জিতলে!

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump USA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy