প্রতীকী চিত্র
‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর গবেষকদের একাংশ উৎসবের মরসুম সম্পর্কে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী দেড় মাস সংক্রমণের দিক থেকে খুব ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অধ্যায় হতে চলেছে। যেখানে সামান্য অসতর্কতাও হু-হু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
তবে শুধু আশঙ্কা প্রকাশই নয়, বাস্তবেও যে তা-ই ঘটবে, সংক্রমণের অভিমুখ ও জনসাধারণের আচরণ দেখে তেমনটাই মনে করছেন অনেকে। কারণ, ‘করোনা-ক্লান্তি’র জেরে ধ্বস্ত জনতার মাস্ক পরায় অনীহা এসেছে, হাত ধোয়ার অভ্যাস ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে এবং দূরত্ব-বিধি না মানার প্রবণতা তাদের মধ্যে স্পষ্ট। তাই ভিড়ে ঠাসাঠাসি করেই সব বাজারে পুজোর কেনাকেটা চলছে। একটি শ্রেণি মাস্ক পরছে ঠিকই, কিন্তু সেই সংখ্যা এতটাই নগণ্য যে, জনস্রোতের কাছে তার গুরুত্ব থাকছে না।
আরও পড়ুন: পুজোর ভিড়ই ডাকবে বিপদ, আতঙ্কে পুলিশ
এই পরিস্থিতি উৎসবের মরসুমেও বজায় থাকলে সংক্রমণের হার যে বাড়বেই, তাতে কোনও সন্দেহ নেই বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শদাতা তথা ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ়, ডাইনামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’ (সিডিডিইপি)-র ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণের বক্তব্য, ‘‘উৎসবের সময়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতেই হবে। অন্য কোনও উপায় নেই। কারণ, এখনও পর্যন্ত যা যা আমরা কোভিড ১৯ সম্পর্কে জেনেছি, তাতে এটা পরিষ্কার যে, জমায়েত হলে সংক্রমণ বাড়বেই। একাধিক সমীক্ষাও সে দিকেই নির্দেশ করছে।’’
সিডিডিইপি-র নিজস্ব পর্যালোচনাতেই উঠে এসেছে যে, দেশের সব জায়গায় একসঙ্গে করোনা সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছচ্ছে না। বরং বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্ন ভাবে একাধিক বার (মাল্টিপল) সংক্রমণ ঘটছে। উৎসবের মরসুমে এই তথ্যও ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। কারণ, পুজোয় জমায়েতের কারণে যদি সংক্রমণের হার বাড়ে, তা হলে আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে করোনা। ‘ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ফর ভাইরোলজি’র প্রেসিডেন্ট অনুপম বর্মার কথায়, ‘‘সংক্রমণ ঠেকাতে গেলে উৎসবের সময়ে মাস্ক পরতেই হবে। হাত ধোয়া ও দূরত্ব-বিধিও পালন করতে হবে আরও সতর্ক ভাবে। এর কোনও বিকল্প নেই।’’
আরও পড়ুন: ‘ডিজ়িজ় এক্স’ প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য
যদিও এ নিয়ে জনসাধারণের বিশেষ হেলদোল রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তাই উৎসবের সপ্তাহ দুয়েক আগে পুজোর বাজারে মাস্কহীন ‘অসতর্ক’ জনতাকে দেখে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ। যার প্রেক্ষিতে পুজোর ক’দিন শহরের রাস্তায় জনস্রোত আটকাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিল ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’।
রাজ্যে সর্বশেষ লকডাউন হয়েছে গত ১১ সেপ্টেম্বর। এর সপ্তাহখানেক বাদে ছিল মহালয়া এবং বিশ্বকর্মা পুজো। চিকিৎসক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের বক্তব্য, ওই সময় থেকেই রাজ্যে প্রতিদিনের করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছে। নিজেদের বক্তব্য বোঝাতে সংক্রমণের একটি রেখচিত্র তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির সঙ্গে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যৌথ মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক, চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ এবং চিকিৎসক হীরালাল কোঙার।
গত ১৭ মার্চ এ রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছিল। যৌথ মঞ্চের বক্তব্য, গত সাত মাসে রাজ্যে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত রোখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের সব স্তরের ভূমিকা রয়েছে। সেই কঠিন পরিশ্রমে চোনা ফেলে দিতে পারে পুজোর মধ্যে ‘অসতর্ক’ মনোভাব। চিকিৎসকদের বক্তব্য, যেমন ওনামের পরে কেরলে কোভিড সংক্রমণ এক ধাক্কায় সাড়ে সাতশো শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে! সংক্রমণ রোধে নবরাত্রিতে গর্বা নাচ বাতিল করেছে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র। এই আবহে পুজোর সময়ে যাতে কোনও ভাবেই শহরের রাস্তায় মানুষের ঢল না নামে, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছে যৌথ মঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy