প্রতীকী ছবি
সবার ঝুঁকি মাপছেন যাঁরা, তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়? এমনটাই জানতে চেয়ে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর কলকাতা দফতরে আসছে একের পর এক ফোন আর হোয়্যাটসঅ্যাপ।
শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল থেকে এক ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্ট উদ্বিগ্ন গলায় জানালেন, সেখানকার করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা ব্যক্তিদের লালারস এবং রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। অথচ সে জন্য যে মাস্ক বা ‘পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট’ (পিপিই) প্রয়োজন, তা হাসপাতালে কার্যত অমিল। মালদহের কালিয়াচক-১ ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতালের এক ল্যাব টেকনোলজিস্ট আবার জানিয়েছেন, সেখানে রোগীর ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। যাঁদের অনেকেই ভিন্ রাজ্য বা বিদেশে কাজে যাওয়া শ্রমিক। করোনার ভয়ে ঘরে ফেরা সেই ব্যক্তিদের অনেকেরই ঠান্ডা লেগে জ্বর-কাশি হয়েছে। তাঁদের রক্ত-লালারস পরীক্ষা করতে হচ্ছে এন-৯৫ মাস্ক ছাড়া।
একই অভিযোগ জানিয়ে শুক্রবার মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের দফতরে মুর্শিদাবাদের লালগোলা কৃষ্ণপুর হাসপাতাল, উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ, পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক গ্রামীণ ও মহকুমা হাসপাতাল, নদিয়ার কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতাল, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ এবং বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে ফোন-মেসেজ আসে। রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে কী হচ্ছে? সেখানে মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ রয়েছে। সেখানকার চিকিৎসকেরা পিপিই-র নিরাপত্তা নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডের রোগীদের থেকে লালারস ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছেন। জেলার অন্য হাসপাতালে ওই বিভাগ না থাকায় সেই কাজ করছেন টেকনোলজিস্টরাই।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের তৃণমূলপন্থী এই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সমিত মণ্ডল জানালেন, বেলেঘাটা আইডি এবং রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলি ছাড়া অন্য সব হাসপাতালে এই সমস্যার সামনে পড়েছেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা। করোনা-পরিস্থিতিতে এন-৯৫ মাস্ক ও হাত পরিষ্কারের স্যানিটাইজ়ারের অভাবে তাঁরা কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। এই আতঙ্কে কিছু হাসপাতালে কাজ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। ১৭ মার্চ বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সমিতবাবু বলেন, ‘‘২০১৯ সালের মার্চে ৭২৫ জন ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টের ইন্টারভিউ নিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। এখনও তাঁদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় টেকনোলজিস্ট কম। এ দিকে, লালারস-রক্ত নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা ন্যূনতম নিরাপত্তা না পেলে কী করে কাজ করবেন? ওঁরা কাজ বন্ধ করলে তো পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে।’’
জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, বহির্বিভাগ বা জরুরি বিভাগে অসংখ্য রোগী কাশি-সর্দি-জ্বর নিয়ে আসছেন। যাঁদের অনেকেই আতঙ্কে ভিন্ রাজ্য বা বিদেশ থেকে আসার তথ্য গোপন করছেন। তাঁদের রক্ত-লালারসের নমুনা সংগ্রহ করতে টেকনোলজিস্টরা ন্যূনতম মাস্ক পাচ্ছেন না।
একই অভিযোগ আশা কর্মী ইউনিয়নের প্রধান ইসমত আরা খাতুনেরও। বাড়ি-বাড়ি ঘুরে মানুষকে সচেতন করা, জ্বর-সর্দির রোগী বা বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে আশা-কর্মীদের। অথচ তাঁদের মাস্ক বা হাত পরিষ্কারের স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছে না। এই আশা-কর্মীরা আবার শিশু ও গর্ভবতীদের নিয়েও কাজ করেন। ফলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ইসমত।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য দু’জনেই জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে সরকারি বুলেটিনের বাইরে কোনও মন্তব্য করার অনুমতি তাঁদের নেই। রবিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সব স্বাস্থ্যকর্মী এবং আশা-কর্মীদের জন্য এককালীন বিমা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তবে এতেও স্বস্তি মিলছে না তাঁদের। প্রশ্ন, ‘‘জীবনই যদি সুরক্ষিত না থাকে, তবে টাকা পেয়ে কী হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy