হাওড়া ব্রিজে চলছে তল্লাশি। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র।
বর্ষবরণের রাতে বাইকবাহিনীর দাপট রুখতে কড়া হাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে ব্যারাকপুর ও বিধাননগর পুলিশ। কলকাতা পুলিশের মতো বেপরোয়া বাইকবাহিনীকে রুখতে দুই কমিশনারেট এলাকারই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই শুরু হবে নাকা চেকিং। পাশাপাশি, দুই এলাকারই সমস্ত পানাশালার উপরে বিশেষ নজরদারি চালানো হবে বলেই জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
দুই কমিশনারেট সূত্রে খবর, দুর্গাপুজোর সময়ে প্রতিটি এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যে ধরনের নজরদারি ব্যবস্থা করা হয়, বর্ষবরণের রাত থেকে শুরু করে আগামী তিন-চার দিন থাকবে ঠিক তেমনটাই। নাকা চেকিংয়ের পাশাপাশি থানা স্তরের নজরদারি এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় থাকবে রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড ও রিজার্ভ ফোর্স। জানা গিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাধারণ পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি পথে থাকবেন ডেপুটি কমিশনার, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পর্যায়ের অফিসারেরাও। একাধিক জায়গায় থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তৈরি রাখা হবে বম্ব স্কোয়াডও।
বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে ৩১ ডিসেম্বর সকাল থেকেই সল্টলেক, নিউ টাউনের কয়েকটি শপিং মল, বিনোদন পার্কে ভিড় উপচে পড়ে। রাত বাড়ার সঙ্গেই বাড়ে ভিড়ের মাত্রাও। গত বছর ভিড়ের পাশাপাশি পুলিশের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছিল বাইকবাহিনীর দাপটও। এক পুলিশকর্তা জানান, সেই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে এ বার ভিআইপি রোড, ই এম বাইপাস-স্টেডিয়াম কানেক্টর, বেলেঘাটা কানেক্টর থেকে গোটা রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়েতে চলবে বিশেষ চেকিং। বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘বড় রাস্তাগুলির পাশাপাশি বাগুইআটি, নিউ টাউন-সহ কিছু এলাকায় বিশেষ ভাবে নজরদারি চালানো হবে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, বর্ষবরণের রাতে শব্দবাজির দৌরাত্ম্যও বাসিন্দাদের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে অভিযোগও জমা
হয় পুলিশের কাছে। খেয়াল রাখা হবে সে দিকটিও।
অন্য দিকে, বিধাননগরের বিভিন্ন পানশালা ও বিনোদন পার্কে যাতায়াতের জন্য অধিকাংশ মানুষই ব্যবহার করেন বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, কল্যানী এক্সপ্রেসওয়ে। তাই ওই সমস্ত রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে রীতিমতো পুলিশ চেক পোস্ট করে মোটরবাইক ও গাড়ি পরীক্ষা করা হবে বলে জানান ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে পানশালাগুলির উপর তাঁদের দল নিয়ে নজরদারি চালাবেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-রা। থাকবে সাদা পোশাকের পুরুষ ও মহিলা পুলিশবাহিনী। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রতিটি পানশালাকে তাঁদের সিসিটিভি ঠিক রাখতে বলা হয়েছে। টহলদারি পুলিশ প্রয়োজন মনে করলে মাঝেমধ্যে পানশালায় গিয়ে ফুটেজও খতিয়ে দেখতে পারে।’’ নজর রাখা হবে খড়দহ, কামারহাটি, ব্যারাকপুর-সহ কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারের
বিভিন্ন পিকনিক স্পটের উপরেও। প্রতি কাজের জন্যই এক একটি এলাকা বা জোন ভাগ করে এক জন এসিপি-র নেতৃত্বে বিশেষ দল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
ব্যারাকপুর পুলিশ সূত্রে খবর, নজরজারিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বি টি রোডেও। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, বর্ষবরণের বিকেল থেকেই ওই রাস্তা ধরে কলকাতার দিকে বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করে বাইকবাহিনী। রাতে ফেরার সময়ে সেগুলিই দাপিয়ে বেড়ায় বি টি রোডের ডানলপ, দক্ষিণেশ্বর, ব্যারাকপুর এলাকায়। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ বলেন, ‘‘বর্ষবরণের
রাতে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তাই সব রকম ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নিয়ম ভাঙলে কাউকেই রেয়াত করা হবে না।’’
এ দিকে, মঙ্গলবার রাতে টহল দেওয়ার সময়ে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে এক যুবককে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তাঁকে আটক করে পুলিশ। জহরুল ইসলাম (২৬) নামে ওই যুবক জেরায় জানান, তিনি বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বাসিন্দা। ভারতে আসার বৈধ নথি না থাকায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার বিধাননগর আদালতে তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। কেন ও কী ভাবে তিনি এ দেশে আসেন, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি জহরুলের কাছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান সল্টলেক পুলিশের এক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy