Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

মা উড়ালপুলে ফের মাঞ্জায় কাটল গলা

ঘুড়ির মাঞ্জা যে এ বার তাঁর গলায় বসেছে, তা টের পেয়েই বাইকের গতি কমিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন বেলুড়ের বাসিন্দা সুরেশবাবু।

ঘুড়ির মাঞ্জায় আহত সুরেশ মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র

ঘুড়ির মাঞ্জায় আহত সুরেশ মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সুরেশ মজুমদার শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৮
Share: Save:

পরমা উড়ালপুলে ফের ‘ভিলেন’ ঘুড়ির সুতো!

ঘুড়ির সুতোর ফাঁসে মোটরবাইক আরোহীদের গলা কাটার ঘটনা তাঁর জানা ছিল। তাই উড়ালপুলে উঠতেই বাইকের গতি কমিয়ে দিয়েছিলেন প্রাক্তন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সুরেশ মজুমদার। কিন্তু উড়ালপুল থেকে নামার কিছুটা আগেই তিনি টের পেলেন, গলায় টান পড়ছে। বাইকের লুকিং গ্লাসে দেখলেন, গলা দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে।

ঘুড়ির মাঞ্জা যে এ বার তাঁর গলায় বসেছে, তা টের পেয়েই বাইকের গতি কমিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন বেলুড়ের বাসিন্দা সুরেশবাবু। তত ক্ষণে তাঁর জামা রক্তে ভেসে গিয়েছে। কোনও মতে রুমাল বেঁধে ওই ব্যক্তি নিজেই ছুটলেন স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে তাঁর গলায় চারটে সেলাই করা হল। পরমা উড়ালপুলে চিনা মাঞ্জার ‘মৃত্যুফাঁদ’ যে এখনও বহাল তবিয়তেই রয়েছে, ফের তার প্রমাণ মিলল এই ঘটনায়।

২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় পরিবেশ আদালতের চেয়ারম্যান, বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, গোটা দেশে চিনা মাঞ্জা তৈরি, বিক্রি, কেনা ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। তার পরেও যে কিছু হয়নি, তার প্রমাণ মিলেছিল ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সৌপর্ণ দাশ ওই উড়ালপুল দিয়ে যাওয়ার সময়ে তার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটে। মাঞ্জা সুতোয় গলা, হাতের তালু, আঙুল কাটার পাশাপাশি তাঁর পিঠে থাকা ব্যাগ ফালা ফালা হয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পরে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বিষয়টির তদন্ত শুরু করে। এমনকি, তারাও রাজ্যকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়কে কার্যকর করতে বলেছিল। কিন্তু কিছুই যে বন্ধ হয়নি, তার উদাহরণ বেলুড়ের ওই প্রাক্তন ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের ঘটনা।

সুরেশবাবু থাকেন বেলুড়ের শিবচন্দ্র চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। গলায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় এ দিন সকালে বাড়িতে বসে তিনি জানান, গত রবিবার রুবি হাসপাতালে এক আত্মীয়কে দেখে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ পরমা উড়ালপুল ধরে ফিরছিলেন তিনি। যুবক বয়স থেকেই বাইক চালাচ্ছেন সুরেশবাবু। ৩৫-৪০ কিলোমিটার বেগে বাইক নিয়ে তিনি যখন উড়ালপুলের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছন, তখন ঘটে ঘটনাটি। সুরেশবাবু বলেন, ‘‘ঘুড়ির সুতোর ফাঁসে ওই উড়ালপুলে যে দুর্ঘটনা ঘটে, তা জানা ছিল। তাই খুব সতর্ক হয়েই বাইক চালাচ্ছিলাম। কিন্তু বুঝে উঠতে পারলাম না কখন, কোথা থেকে সুতোটা এল। বাইকের গতি বেশি হলে হয়তো আর প্রাণে বাঁচতাম না।’’

সুরেশবাবু জানান, পুরো ঢাকা হেলমেট পরে তিনি বাইক চালাচ্ছিলেন। আচমকাই তাঁর গলায় টান লাগে এবং তীব্র জ্বালা করতে শুরু করে। তখনই তিনি লুকিং গ্লাসে দেখতে পান, গলা দিয়ে রক্ত ঝরছে। কোনও মতে বাইকটি উড়ালপুলের উপরে দাঁড় করিয়ে গলায় রুমাল চেপে ধরেন তিনি। তত ক্ষণে তাঁর জামাও রক্তে ভিজে গিয়েছে। সুরেশবাবু বলেন, ‘‘রুমাল চাপার পরেও রক্ত ঝরছিল। কয়েক জন বাইকচালককে দাঁড়াতে বললেও তাঁরা পাশ কাটিয়ে চলে যান। তখন নিজেই রুমালটা গলায় বেঁধে উড়ালপুল থেকে নেমে হাসপাতালে যাই।’’ হাসপাতালে ঢোকার আগে রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের বিষয়টি জানান সুরেশবাবু। তিনি জানান, তপসিয়া থানা ও ট্র্যাফিকের ওই পুলিশকর্মীরাও তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে আসেন। পার্ক সার্কাস এলাকার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সুরেশবাবুকে।

কোনও ভাবেই রক্ত বন্ধ করতে না পারায় চিকিৎসকেরা শেষে সুরেশবাবুর গলার ক্ষতে সেলাই করেন। এর পরে ওই পুলিশকর্মীরাই তাঁকে জানান, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি কড়েয়া থানা এলাকায়। তাঁরাই সুরেশবাবুকে কড়েয়া থানার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। তবে তপসিয়া থানার পুলিশ সুরেশবাবুর থেকে লিখিত অভিযোগ নেয়। পরে খবর পেয়ে যান বাড়ির লোকেরা। এলাকার প্রবীণ নাগরিকদের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সুরেশবাবু। তার সভাপতি বিপ্লব গোস্বামী বলেন, ‘‘ও যে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে, এটাই রক্ষে।’’

এ দিন বাড়িতে বসে সুরেশবাবু বলেন, ‘‘কিছু গিলতে গেলেই গলায় যন্ত্রণা হচ্ছে। এর পরে আর ওই রাস্তা দিয়ে কোনও দিন যাব কি না, এখন সেটাই ভাবছি।’’ এ দিনও পরমা উড়ালপুলের ওই জায়গায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, রেলিংয়ে মাঞ্জা সুতোর জট পাকিয়ে রয়েছে। ওই উড়ালপুল দিয়ে যাতায়াতকারীদের অভিযোগ, প্রায়ই দেখা যায়, আশপাশ থেকে অনেক ঘুড়ি উড়ালপুলের উপরে উড়ছে। কিন্তু তাদের আটকাবে কে? এই প্রশ্নই এখনও রয়েছে সৌপর্ণ থেকে সুরেশবাবুর মতো আরও ভুক্তভোগীদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Kite Thread Flyover Parama Accident Injured
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE