গণেশ প্রসাদ
মাঝেরহাট সেতুর দুর্ঘটনায় চোট পাওয়ায় স্বামী গণেশ প্রসাদকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর মোবাইলে এই খবর পেয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে শ্রীরামপুর থানা এলাকার মাহেশ থেকে এসএসকেএম-এ ছুটে এসেছিলেন গণেশের স্ত্রী রানি প্রসাদ।
কিন্তু দুর্ঘটনায় পাওয়া চোটের চিকিৎসা করতে করতে মাত্র কয়েক দিনের মাথাতেই চিকিৎসকেরা যা জানিয়েছেন, তাতে আপাতত ভাগ্যের উপরে সব কিছু ছে়ড়ে দিয়েছেন কার্যত দিশেহারা রানি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গণেশ এক ধরনের বিরল মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত। সুস্থ হওয়ার কোনও আশা চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখাতে পারেননি। একমাত্র উপার্জনকারী স্বামীর এ রকম অবস্থায় কী করবেন, তা-ও জানেন না রানি। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা শাশুড়ি আর বছর পাঁচেকের শিশুপুত্র। নিজেও খুব বেশি পড়াশোনা করেননি। স্বামীর কিছু হলে কী করে সংসার চলবে, কী ভাবে ছেলেকে বড় করবেন, আপাতত সেই ভাবনাই গ্রাস করেছে রানিকে।
শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলের কর্মী গণেশকে বছর ছয়েক আগে বিয়ে করেছিলেন রানি। প্রেম করে বিয়ে। কিন্তু মাস কয়েক আগে হঠাৎ করেই জুটমিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন গণেশ। গত ৪ সেপ্টেম্বর কাজ খুঁজতেই কলকাতায় এসেছিলেন। সে দিন স্বামী ঠিক কোথায় গেছেন, সেটা জানতেন না রানি।
সে দিন বিকেলে ফোন এলে রানি জানতে পারেন, মাঝেরহাটের সেতুভঙ্গে জখম হয়েছেন তাঁর স্বামীও। তাঁকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের আইটিইউ-এ। আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে ছুটে এসেছিলেন তিনি। রানির বলেন, ‘‘গণেশের হাত-পায়ে চোট ছিল। মাথাতেও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। সেই মতো সিটি স্ক্যান করা হয়। আর তখনই জানা যায়, ওর মাথার ভিতরে একটি টিউমার রয়েছে।’’ রানি আরও জানান, রক্তক্ষরণের জন্য অস্ত্রোপচার করলেও চিকিৎসকেরা টিউমারটিকে বার করতে পারেননি। কারণ সেটি এমন জায়গায় রয়েছে যে অস্ত্রোপচার করে বার করা যাবে না। এরই মধ্যে টিউমার কোন ধরনের তা জানার জন্য করানো হয় বায়োপ্সি। সেই রিপোর্ট আসার আগে গণেশ একটু সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। ন’দিনের মাথায়, ১৩ সেপ্টেম্বর আইটিইউ থেকে তাঁকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই গণেশের অবস্থার অবনতি শুরু হতে থাকে। একটা সময়ের পরে জ্ঞান হারাতে থাকেন গণেশ। পরের দিনই তাঁকে ফের আইটিইউ-তে স্থানান্তর করা হয়।
ফের সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই করানো হয় তাঁর। চলে আসে বায়োপ্সি রিপোর্টও। আর তাতেই জানা যায়, এক বিরল ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত গণেশ। রানিকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই অবস্থায় একমাত্র কেমোথেরাপি করা যেতে পারে। কিন্তু গণেশের যা শারীরিক অবস্থা, তাতে ওই ধকল তিনি নিতে পারবেন না।
মাথায় যে টিউমার রয়েছে, তা কি বুঝতে পারেননি গণেশ? রবিবার রানিকে পাওয়া গেল আইটিইউ-এর বাইরে। মেঝেতে চুপচাপ বসেছিলেন তিনি। জানালেন, কোনও দিন গণেশ কিছু বলেননি। এখন স্বামীর কী অবস্থা, তা কি রানি জানেন? মাথা নেড়ে জানালেন, চিকিৎসকেরা সবই বলেছেন তাঁকে। এমনকি, তাঁর স্বামী যে আর সুস্থ হতে না-ও পারেন, তা এর মধ্যে বুঝে গিয়েছেন রানি। এক দিকে হাসপাতালে শয্যাশায়ী স্বামী, অন্য দিকে বাড়িতে বৃদ্ধা শাশুড়ি আর শিশুপুত্র— দু’দিকের দায়িত্ব একা হাতে সামলাতে সামলাতে রানি শুধু বুঝেছেন সামনে অপেক্ষা করছে আরও কঠিন সময়। নতুন অনেক লড়াই অপেক্ষা করে রয়েছে তাঁর জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy