Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Bus Accidents

চাকায় পিষ্ট যুবক, রোষে পুড়ল তিন বাস

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের বাড়ি বিহারে। সেখানে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা থাকেন।

অঘটন: দুর্ঘটনায় অনিলকুমার বর্মার (ইনসেটে) মৃত্যুর পরে জনরোষে জ্বলছে বাস। শুক্রবার, রিমাউন্ট রোডে। নিজস্ব চিত্র

অঘটন: দুর্ঘটনায় অনিলকুমার বর্মার (ইনসেটে) মৃত্যুর পরে জনরোষে জ্বলছে বাস। শুক্রবার, রিমাউন্ট রোডে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০৮
Share: Save:

মোটরবাইক চালকের মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল বাস। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। শুক্রবার এই দুর্ঘটনা ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল দক্ষিণ বন্দর থানার রিমাউন্ট রোড। পথ অবরোধ করে পরপর কয়েকটি বাসে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। তিনটি বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে তাদের লক্ষ্য করেও শুরু হয় ইটবৃষ্টি। শেষে র‌্যাফ নামিয়ে লাঠি চালিয়ে স্বাভাবিক করতে হয় পরিস্থিতি।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের বাড়ি বিহারে। সেখানে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা থাকেন। ওই যুবক বৃহস্পতিবারই গ্রামের বাড়ি থেকে কলকাতায় ফিরেছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত এ দিন বেলা সওয়া ১২টায়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১২সি/১ রুটের একটি বেসরকারি বাসের সামনে মোটরবাইক নিয়ে চলে আসেন স্থানীয় যুবক, পেশায় ট্রেলারচালক অনিলকুমার বর্মা (৩৫)। তাঁর বাইকে ছিলেন সনোজ যাদব এবং মহম্মদ ইউসুফ নামে আরও দু’জন। আচমকা বাসের সামনে পড়ে

যাওয়ায় টাল সামলাতে পারেননি অনিল। তিনি রাস্তায় পড়ে যান। তখনই বাসের চাকা তাঁর মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। সনোজ এবং ইউসুফ অন্য দিকে পড়ায় তাঁদের সামান্য চোট লাগে। দুর্ঘটনার পরে বাস ফেলে পালায় চালক ও কন্ডাক্টর।

এর পরেই স্থানীয় লোকজন এবং অনিলের প্রতিবেশীদের রোষ নেমে আসে রাস্তায়। শুধু দুর্ঘটনা ঘটানো বাসটিই নয়, সে সময়ে ওখানে থাকা বেশ কয়েকটি বাসে লাঠি নিয়ে ভাঙচুর চালায় জনতা। তিনটি বাসের যাত্রীদের নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ পৌঁছলে তাদের লক্ষ্য করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। মৃতদেহ নিয়ে যেতেও বাধা দেন লোকজন। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে ঘটনাস্থলে আসেন ডিসি (দক্ষিণ) মিরাজ খালিদ এবং ডিসি (বন্দর) ওয়াকার রাজা। লালবাজার থেকে পাঠানো হয় বিশাল বাহিনী ও র‌্যাফ। তারা লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। পরে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন পৌঁছে আগুন নেভায়।

দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, দাঁড়িয়ে আছে পুড়ে যাওয়া তিনটি বাস। জল দিয়ে আগুন নেভাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। এমনই একটি বাসের চালক শেখ মইদুল বসে ছিলেন ফুটপাতে। তিনি জানালেন, বাস নিয়ে আমতলার দিক থেকে আসছিলেন। হঠাৎই দেখেন, সামনে শ’খানেক লোক ইট আর লাঠি নিয়ে তেড়ে আসছে। তারা এসেই লাঠি দিয়ে বাসের কাচ ভাঙতে শুরু করে। মইদুল বলেন, ‘‘যাত্রীরা ভয়ে নেমে দৌড় লাগান। আমিও নেমে আসি। তার পরেই লোকজন বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। মালিককে সব জানিয়েছি।’’

সনোজ জানান, ১২সি/১ রুটের বাসটির সামনে চলে আসার পরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি অনিল। তার জন্যই ঘটে দুর্ঘটনা। যদিও এলাকাবাসীর দাবি, ওই বাসটি অন্য একটি বাসের সঙ্গে রেষারেষি করছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্দর এলাকার রাস্তা হওয়ায় দিন-রাত বড় ট্রেলার ও লরি চলে। তার উপরে মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। অথচ কোনও ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী থাকেন না। ফলে যে যাঁর মতো বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। চলে রেষারেষিও। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ জানতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হবে। বাসে ভাঙচুর এবং আগুন লাগানোর পাশাপাশি পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগে কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Bus Accidents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE