বেহাল: আয় তলানিতে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও তাই দূর অস্ত্। তাপ্পি মেরেই পথে নেমেছে বাস। মঙ্গলবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল আগেই। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার বেসরকারি বাসের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় আগামী কাল, বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাস ও মিনিবাসের মালিকেরা।
মঙ্গলবার ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’, ‘মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ এবং ‘ইনট্রা অ্যান্ড ইন্টার রিজিয়ন বাস অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে একটি চিঠি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছে। তাতে বাসমালিকেরা স্পষ্টই জানিয়েছেন, সরকার যদি বুধবারের মধ্যে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে ইতিবাচক কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়, তা হলে বাস তুলে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়া মিলে দিনে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বেসরকারি বাস প্রতিদিন রাস্তায় নামে। আর কলকাতা ও শহরতলি মিলিয়ে চলে প্রায় ১২০০ মিনিবাস। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন রুটে বাসের সংখ্যা কমেছে বলে দাবি বাসমালিক সংগঠনগুলির।
আরও পড়ুন: ফেরারি-কাণ্ডে পুলিশ এখনও আঁধারেই
এখন বহু রুটে সকালের দিকে বাস চললেও দুপুরে বাস নিয়ে বেরোতে চাইছেন না চালক ও কন্ডাক্টরেরা। তাঁদের যুক্তি, সে সময়ে যে যাত্রী হয়, তাতে লাভ তো দূরের কথা, তেলের টাকাও ভাল করে ওঠে না। বাসমালিকদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা ভেবেই তাঁরা এত দিন আন্দোলনে যাননি। কিন্তু এখন আর উপায় নেই। ডিজেলের দাম যেখানে পৌঁছেছে, তাতে তাঁদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।
বাস ধর্মঘট শুরু হলে পরিস্থিতি যে ঘোরালো হতে পারে, সে আশঙ্কা করছে প্রশাসনও। তবু ভাড়া বাড়াতে রাজি নয় তারা। বাসমালিকদের যুক্তি, যে আমজনতার কথা ভেবে সরকার ভাড়া বাড়াতে রাজি নয়, বাস কমে গেলে সেই আমজনতাই তো সব চেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়বে। এই সরল অঙ্কটা সরকার বুঝতে পারছে না কেন? উল্লেখ্য, ভাড়া না বাড়লে ১৮ জুন থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ট্যাক্সিচালকেরাও।
গত মার্চে ডিজেল লিটার প্রতি ৬৩ টাকা ছোঁয়ার পরেই বাসমালিকেরা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে চিঠি দেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানান মন্ত্রী। এ নিয়ে একটি কমিটিও গড়ে দেন তিনি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত আজও হয়নি। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বাসের ভাড়া নিয়ে এখনও কিছু ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফোন করা হলেও মন্ত্রী ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজের। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ বিষয়ে যা বলার মন্ত্রীই বলবেন।’’
বাসমালিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে ডিজেলের দাম বাড়লেও ২০১৪-র সেপ্টেম্বরের পর থেকে বাসভাড়া বাড়েনি। অথচ, ঘুরপথে প্রায় সব সরকারি বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। পুরনো অ-লাভজনক রুট বন্ধ করে বেশি ভাড়ার ‘স্পেশাল’ বাস নামানো হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি বাসের ন্যূনতম ভাড়া ছ’টাকাতেই আটকে। মিনিবাসের ক্ষেত্রে যা সাত টাকা।
‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রথম পর্যায়ে বাসের ন্যূনতম ভাড়া ছয় থেকে বাড়িয়ে ন’টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। মিনিবাসের ক্ষেত্রেও সাত টাকা থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম ভাড়া ন’টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বাসমালিকদের বক্তব্য, গত কয়েক বছরে ডিজেল ছাড়াও বিমা, যন্ত্রাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে ভাড়া বাড়েনি। এমনকি, দিল্লি, বেঙ্গালুরু বা মুম্বইয়েও বাসের ভাড়া অনেকটাই বেশি। ‘মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র নেতা প্রদীপনারায়ণ বসু এবং স্বপন ঘোষের দাবি, নানা কারণে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রুটে মিনিবাসের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy