Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সেতুর রেলিংয়ে পুজোর হোর্ডিং, শঙ্কা বিপদের

পুজোর হোর্ডিং, ব্যানারের জন্য বাঁশের কাঠামোয় ছেয়ে গিয়েছে শহর। বাদ পড়ছে না সেতুও। মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে বিশেষজ্ঞেরা শহরের বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে।

প্রস্তুতি: সেতুর রেলিংয়ে তৈরি হয়েছে হোর্ডিংয়ের খাঁচা। মঙ্গলবার, ঢাকুরিয়া সেতুতে। নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি: সেতুর রেলিংয়ে তৈরি হয়েছে হোর্ডিংয়ের খাঁচা। মঙ্গলবার, ঢাকুরিয়া সেতুতে। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৩
Share: Save:

পুজোর হোর্ডিং, ব্যানারের জন্য বাঁশের কাঠামোয় ছেয়ে গিয়েছে শহর। বাদ পড়ছে না সেতুও। মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে বিশেষজ্ঞেরা শহরের বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। সেই কাজ শেষ হয়নি এখনও। অথচ তার আগেই বহু সেতুর রেলিংয়ে হোর্ডিং, ব্যানার লাগানোর জন্য বাঁশের কাঠামো ঝুলিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছু কিছু কাঠামোয় ইতিমধ্যে হোর্ডিংও লাগিয়ে দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগে কী ভাবে এমনটা হল, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

এর জেরে কি সেতু কোনও ভাবে দুর্বল হতে পারে? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আলাদা ভাবে বাঁশের কাঠামো দুর্বলতার কারণ না হলেও সেতুর সার্বিক স্বাস্থের কথা ভেবে তার উপরে কোনও রকম স্থায়ী ভার না চাপানোই ভাল। বাঁশের বড় ও উঁচু কাঠামো থেকে ঘটতেই পারে বিপর্যয়।

শহরের অন্যতম জীর্ণ বিজন সেতু থেকে শুরু করে দক্ষিণের ঢাকুরিয়া সেতু বা উত্তরের মানিকতলা সেতু— সব জায়গাতেই ইতিমধ্যে লাগানো হয়ে গিয়েছে বাঁশের কাঠামো। বিজন সেতুর ফুটপাতের বিভিন্ন জায়গায় চাঙড় বেরিয়ে আছে। সেই সব ভাঙাচোড়া ফুটপাতের রেলিংয়েও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বাঁশের কাঠামো। বিজন সেতু নিয়মিত পায়ে হেঁটে পারাপার করেন কসবার রাজীব চৌধুরী। তিনি বলেন, “এই সেতু দিয়ে যাওয়ার সময়ে রীতিমতো আতঙ্ক হয়। ফুটপাতের কয়েকটা জায়গার মাটি সরে গিয়েছে। হেঁটে যাওয়ার সময়ে মাঝেমাঝে কম্পন টের পাওয়া যায়।’’ এরই মধ্যে আবার বাঁশের কাঠামোর মতো ভারী জিনিস চাপানো হচ্ছে সেতুতে। এর জেরে বড় কোনও বিপদ হবে না তো, প্রশ্ন তোলেন আতঙ্কিত রাজীবাবু।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ভারী বাঁশের কাঠামো ঝুললে সেতুর সার্বিক ক্ষতি না হলেও রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারে। জীর্ণ সেতুর রেলিংও বেশির ভাগ সময়ে দুর্বল থাকে। বাঁশের কাঠামো রেলিংয়ে লাগানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করে গর্ত করলে, তা সেতুর পক্ষে সমস্যার কারণ হতে পারে। পরবর্তীকালে সেই গর্ত চুঁইয়ে জল ঢুকে সেতুর ইস্পাত বা লোহায় প্রবেশ করে ক্ষতি করতে পারে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেটিরিয়াল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সোমনাথ ঘোষ বলেন, “অনেক সময়ে দেখা যায়, বিশাল বড় হোর্ডিং লাগানো হয়েছে সেতুর উপরে। বেশি জোরে হাওয়া দিলে সেই সব হোর্ডিং ভেঙে পড়তে পারে। সেতুর রেলিং যদি দুর্বল হয়, তখন রেলিং-সহ হোর্ডিং ভেঙে বড়সড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।”

উল্টোডাঙার এক পুজো কমিটির কর্মকতাদের অবশ্য দাবি, তাঁরা সেতুতে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেই বাঁশের কাঠামো লাগিয়েছেন। পুজোয় সেতুতে বাঁশের কাঠামো লাগানো থেকে বিপদের আশঙ্কা নেই বললেই চলে বলে দাবি করেছেন কেএমডিএ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার (রাস্তা ও সেতু) ভাষ্কর মজুমদার। তিনি বলেন, “সার্বিক ভাবে সেতুর কোনও ক্ষতি করে না বাঁশের কাঠামো। সেতুর রেলিংয়ে বা উপরে যাতে কোনও খোঁড়াখুঁড়ি না হয়, সেটা আমরা খেয়াল রাখছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Kolkata Flyover Collapse Majerhat Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE