Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Singur

সিঙ্গুরের জমিতে স্বপ্নের বীজ ছড়াচ্ছে বিজেপি, টাটাকে ফেরাতে লক্ষ্য মোদী-শাহর আশ্বাস

গত লোকসভা নির্বাচনে হুগলি আসনে বিজেপির জয়ে অনেকটাই অবদান ছিল সিঙ্গুরের। লকেট এগিয়ে ছিলেন ১০ হাজারের বেশি ভোটে।

নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে সিঙ্গুরের দিকে তাকিয়ে মোদী-শাহ।

নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে সিঙ্গুরের দিকে তাকিয়ে মোদী-শাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৩৩
Share: Save:

নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে সিঙ্গুরের মাটিতে শিল্পের স্বপ্ন-বীজ ছড়াচ্ছে বিজেপি। সেই লক্ষ্যে মাস দু'য়েক আগে থেকেই জমি উর্বর করার কাজ শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি সূত্রে খবর, খোদ অমিত শাহর নির্দেশে টাটার ছেড়ে যাওয়া রুক্ষ জমি চষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। আপাতত সেই কাজ একনিষ্ঠ ভাবে করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন লকেট। ইতিমধ্যেই সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী মুকুল রায়কে সিঙ্গুরে নিয়ে গিয়েছেন লকেট। তার প্রেক্ষিতেই বিজেপি নেতারা টাটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দরবার করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। এ বার লক্ষ্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়ে সেই আশ্বাস দেওয়ানো। রাজ্য বিজেপি-র একাংশের দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই অমিত আসতে পারেন সিঙ্গুরে। শোনাতে পারেন শিল্প নিয়ে আসার আশ্বাস। টাটাকে ফেরাতে চেষ্টার প্রতিশ্রুতি।

গত ৯ জানুয়ারি পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থেকে রাজ্যে বিজেপি-র ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ শুরু করেছিলেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। গোটা রাজ্যে কৃষক‌দের বাড়ি থেকে ‘এক মুঠো চাল’ সংগ্রহের পরে কৃষক ভোজ হবে গ্রামে গ্রামে। তাতে যোগ দিতে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজ্যে আসতে পারেন নড্ডা। ওই কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক লকেট জানিয়েছেন, ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, সেই সময়েই সিঙ্গুরে সভা হতে পারে অমিতের। ইতিমধ্যেই সেই আবেদন পৌঁছেছে অমিতের কাছে। তবে লকেটের দাবি, এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘অনেক সফরই হবে অমিত’জির। তবে ওঁর সফরসূচি না জানা পর্যন্ত কোনও কর্মসূচি সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না।’’ তবে সিঙ্গুরকে য‌ে তাঁরা ‘বাড়তি গুরুত্ব’ দিচ্ছেন, তা মেনে নিয়েছেন দিলীপ।

সিঙ্গুরের জনসভায় মুকুল রায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায়।

সিঙ্গুরের জনসভায় মুকুল রায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায়।

তিন দশকেরও বা‌মফ্রন্টের হাতে থাকা বাংলায় রাজনৈতিক ‘পরিবর্তন’ আনার চূড়ান্ত যাত্রা সিঙ্গুর থেকেই শুরু করেছিলেন মমতা। তার পরে আসে নন্দীগ্রাম। সম্প্রতি নন্দীগ্রামে সে কথা মনেও করিয়ে দিয়েছেন মমতা। সেই প্রেক্ষিতে তৃণমূলের কাছে সিঙ্গুর মানে একটি বিধানসভা আসন নয়, সিঙ্গুরের আন্দোলন থেকে গোটা রাজ্যের কাছে কৃষি ও কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে মমতার সেই রাজনীতিকে ‘ভুল’ বলে প্রমাণ করতে মরিয়া বিজেপি।

গত লোকসভা নির্বাচনে হুগলি আসনে লকেটের জয়ে অনেকটাই অবদান ছিল সিঙ্গুরের। এককালে বামেদের ‘দুর্গ’ হুগলি আসনে ৭ বার জেতা সিপিএম প্রার্থী রূপচাঁদ পাল ২০০৪ সালের নির্বাচনেও পেয়ছিলেন ৫৪ শতাংশ ভোট। এর পরে ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে জেতেন তৃণমূলের রত্না দে নাগ জেতেন। দু’বারই তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপির উত্থান হয় ২০১৯-এর নির্বাচনে। ৭২ হাজারেও বেশি ব্যবধানে জেতেন লকেট। এর মধ্যে সিঙ্গুর বিধানসভা এলাকা থেকেই তিনি এগিয়েছিলেন ১০ হাজারের বেশি ভোটে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিধানসভার প্রস্তুতি শুরু করেছিল বিজেপি। লকেটের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় সিঙ্গুর। গত কয়েক মাসে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই সেখানে কোনও না কোনও কর্মসূচি করেছেন তিনি। এমনকি, সিঙ্গুরে রাত্রিবাস করেও নিজেকে ‘ঘরের মেয়ে’ প্রমাণের চেষ্টা করেছেন লকেট। দিনের পর দিন কৃষকদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন। পাড়ায় পাড়ায় মাঠে বসে ‘চাটাই বৈঠক’ করেছেন। যার নাম ‘শুনুন চাষিভাই’। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘সিঙ্গুরে কৃষির পাশাপাশি শিল্পও চাই। তেমনই টাটাদেরও চাই। কারণ, ওঁরা এখান থেকে ফিরে গিয়েছেন।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, এর পুরোটাই অমিতের পরামর্শ ও নির্দেশমতো। সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই গত ২ জানুয়ারি সিঙ্গুরে মুকুলকে নিয়ে সভা করেন লকেট। যেখানে গিয়ে মুকুল বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের মাটিতে এলে পাপবোধ জন্মায়। যে ভাবে আন্দোলন করে টাটাকে তাড়ানো হয়েছিল, তাতে সারা ভারত বাংলা সম্পর্কে জেনে গিয়েছিল। তাই পাপবোধ জন্ম নেয়। অন‍্যায় হয়েছিল। ভুল করেছিলাম।’’ ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরে শিল্প স্থাপনের আশ্বাসও দেন মুকুল। ৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে গিয়েও দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীদের পাশে নিয়ে মুকুল বলেন, সিঙ্গুরে টাটাকে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করবেন তাঁরা।

বিজেপি-র ওই চেষ্টা আঁচ করেই মমতা ঘোষণা করেছিলেন, সিঙ্গুরের প্রাকৃতিক চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেখানে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে উঠবে। সিঙ্গুর রেলস্টেশনের কাছে ১১ একর জমিতে কাজ হবে। জানান, ওই পার্ক গড়তে কারও থেকে কোনও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। যে প্রসঙ্গে লকেট বলছেন, ‘‘২০১১ সালে সিঙ্গুরে যখন টাটার কারখানা তৈরির কাজ ৯৫ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল, তখন উনি ওদের বিদায় দিয়েছিলেন। এখন জমিটার এমন অবস্থা, যে আর কৃষিও হবে না। এখন ভোটের সময় তাঁর হঠাৎ সিঙ্গুরের কথা মনে পড়ল!”

সিঙ্গুরের মাঠে কৃষকদের নিয়ে ‘চাটাই বৈঠক’ লকেটের।

সিঙ্গুরের মাঠে কৃষকদের নিয়ে ‘চাটাই বৈঠক’ লকেটের।

লকেট জানিয়েছেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিঙ্গুরে শিল্প ফেরাতে দরবার করবেন তো বটেই, অমিতকেও সিঙ্গুরে আসতে অনুরোধ করবেন। লকেটের কথায়, ‘‘আমরা চাই এখান থেকে শুরু করে রাজ্যের সর্বত্র শিল্পায়ন হোক। বাংলায় ডবল ইঞ্জিন সরকার হলেই সেটা সম্ভব। সিঙ্গুর শুধু একটা বিধানসভা আসন নয়। এই রাজ্যে কৃষি বনাম শিল্পের বিবাদের জন্মস্থান। বিজেপি দুইয়ের সহাবস্থান চায়। সিঙ্গুর তার প্রতীক হবে।’’

তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘সিঙ্গুর আর মমতা'দির নাম সমার্থক। তিনি সিঙ্গুরে গিয়ে দাঁড়ালে মানুষ তাঁকে কাছে টেনে নেবে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে কোনও শাহ, মোদী ছিলেন না। ওটা মমতার জমি। তৃণমূলের জমি। ছিল, আছে, থাকবে।’’ তবে সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি যদি শিল্প আনতে চায় আনুক না। তাতে তো ভালই হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল তখনও শিল্পের বিরুদ্ধে ছিল না। এখনও নেই। শুধু টাটা কেন, ইচ্ছুক কৃষকদের জমিতে যে কেউ শিল্প করতে এলে তাঁকে স্বাগত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Narendra Modi Tata Nano Singur Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy