অমিত শাহ ও বি এল সন্তোষ। ফাইল চিত্র
জানুয়ারি মাসের শেষ দু’দিন রাজ্যে থাকার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। আর সেই সফরের যে কর্মসূচি এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে তাতে শুধুই রাজনৈতিক সমাবেশ আর রোড-শো থাকছে না। বাংলায় এসে ধর্মীয় আবেগ ছোঁয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে অমিতের।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৯ জানুয়ারি রাতে কলকাতায় আসতে পারেন অমিত। দ্বিতীয় দিন ৩০ জানুয়ারি তিনি যাবেন উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে। সেখানে মতুয়া সম্প্রদায়ের মন ছোঁয়াই হবে তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। ঠাকুরনগরে সমাবেশ ছাড়াও মতুয়াগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দিতে পারেন অমিত। সেই সঙ্গে কোনও মতুয়া পরিবারে মধ্যাহ্নভোজনের পরিকল্পনাও রয়েছে। ওই দিনই অমিত যাবেন মায়াপুরে ইস্কন মন্দিরে। সেখানে পূজারতিতে অংশ নিতে পারেন তিনি। এ হেন কর্মসূচি সম্পর্কে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বাংলার বিভিন্ন শ্রদ্ধাস্থানে যেতে চান অমিত।’’ ৩১ জানুয়ারি সকালে অমিত যেতে পারেন কলকাতার বালিগঞ্জে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রধান কার্যালয়ে। ওই দিনই হাওড়ার ডুমুরজোলায় অমিতের সমাবেশ ও উলুবেড়িয়ায় রোড-শো হওয়ার কথা।
অমিতের বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে যাওয়ার বিষয়টি দেখভাল করছেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাত। তিনি ঠাকুরনগর, বালিগঞ্জ এবং মায়াপুরে গিয়ে প্রস্তুতি দেখে এসেছেন ইতিমধ্যেই। তবে এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাজ্য নেতৃত্বের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছে না বিজেপি। অমিত শাহ এবং তার পরে জেপি নড্ডার বাংলা সফরের প্রস্তুতি যাচাই করতে রবিবার রাজ্যে চলে এসেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ।
অমিত ফিরে যাওয়ার পর পরই ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজ্যে আসার কথা বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার। বিজেপি সূত্রে খবর, নড্ডা দু’দিনের সফরে আসছেন। এ বার তাঁর সফর মূলত উত্তরবঙ্গে হবে বলে জানা গিয়েছে। সমাবেশ হতে পারে মালদহ ও কোচবিহারে। আর সেখানেও কোনও না কোনও ধর্মীয় স্থানে যাবেন নড্ডা।
অমিত ও নড্ডার সফরের প্রস্তুতি নিয়ে রবিবারই দলের রাজ্য নেতৃত্বকে নিয়ে শিলিগুড়িতে বৈঠকে বসেন বিএল সন্তোষ। উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্বের পাশাপাশি সেই বৈঠকে যোগ দিতে রবিবার সকালেই শিলিগুড়ি গিয়েছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায়। তবে সেই বৈঠকে নেই রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রবিবার মুর্শিদাবাদের কর্মসূচি মিটিয়ে তাঁর বীরভূম যাওয়ার কথা সোমবার। আর সোমবারই কলকাতায় দক্ষিণবঙ্গের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন সন্তোষ।
নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই অমিত বা নড্ডা কয়েক দফায় বঙ্গ সফর করেছেন। আর প্রতিটি কর্মসূচিরই আগে তাঁরা কোনও না কোনও ধর্মীয় স্থান বা মন্দিরে গিয়েছেন। নড্ডা যেমন ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে সরিষা রামকৃষ্ণ মিশনের শাখায় গিয়েছেন তেমনই মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনায় গঙ্গা মূর্তির সামনে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আবার কলকাতায় কালীঘাট মন্দির বা কাটোয়ায় সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। একই ভাবে অমিতও দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণী, মেদিনীপুরে কালী মন্দির বা বোলপুরে হনুমান মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরেই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
তবে শুধু হিন্দু দেবদেবীই নয়, বিভিন্ন হিন্দুগুরুর ভক্তদের আবেগও ছুঁতে মরিয়া বিজেপি। তার ইঙ্গিত মিলেছে শনিবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে নেতাজি জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যেও। তিনি বক্তৃতায় বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মনীষীদের পাশাপাশি বাঙালি ধর্মগুরুদের নামও উল্লেখ করেছেন। ছিল চৈতন্যদেব, মা আনন্দময়ী, অনুকুল ঠাকুর, হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম। এ বার তিন গুরুর আবেগ-কেন্দ্র ঠাকুরনগর, মায়াপুর ও বালিগঞ্জ থাকতে পারে অমিতের সফরসূচিতে।
সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার মানুষের ধর্মীয় আবেগকে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। রাজ্য নেতারাও একই কাজ করে চলেছেন। শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রামে বজরংবলীর পুজোয় অংশ নিয়েছেন। আর দিলীপ তো একের পর এক হিন্দু সম্মেলনে অংশ নিয়ে চলেছেন তাঁর পুরনো সংগঠন ‘হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’-এর নামে। ইতিমধ্যেই ঠাকুরনগরে গিয়ে পুজো দিয়ে এসেছেন কৈলাস-মুকুলও। মুর্শিদাবাদে কৈলাসের কীর্তনের আসরে ছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, সব্যাসাচী দত্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy