দূষণ: শহিদ মিনারের সামনে প্লাস্টিক বর্জ্যের স্তূপ। ছবি: রণজিৎ নন্দী
দিল্লি, মহারাষ্ট্র পারে। ওড়িশাও পারে। পারে না পশ্চিমবঙ্গ!
দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, জনগণের কাছ থেকে প্লাস্টিক-বর্জ্য কিনে নেওয়ারও পরিকল্পনা করেছে ওই দুই রাজ্যের সরকার। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক টুইটারে জানিয়েছেন, আগামী ২ অক্টোবর গাঁধী জয়ন্তীর দিন থেকে তাঁর রাজ্যের সব পুরসভা এলাকায় প্লাস্টিকে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। দু’বছরের মধ্যে ওড়িশা থেকে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সম্পূর্ণ বন্ধ করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। কেরলের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সোমবার দিল্লিতে শীর্ষ পর্যায়ের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিটি রাজ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
কিন্তু এ রাজ্যে?
খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও) সম্প্রতি জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে তারা বিশেষ ভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের বক্তব্য, কলকাতার ভৌগোলিক গঠনের জন্য কেরলের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিতেই এ শহর ভেসে যেতে পারে। তাই পিএমও-র মতে, সর্বাগ্রে কলকাতায় প্লাস্টিক বন্ধ করা প্রয়োজন।
দার্জিলিং পাহাড়, বাঙুর অ্যাভিনিউ বা নিউ ব্যারাকপুরের মতো হাতেগোনা কয়েকটি এলাকায় প্লাস্টিকে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু কলকাতা পুর এলাকায় কিছুই হয়নি। মাঝেমধ্যে খুচরো অভিযান চলে। কিন্তু প্লাস্টিক-দূষণের ছবিটা বদলায় না। পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ২০১৭ সালের ‘প্লাস্টিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিপোর্ট’-এ বলা হয়েছে, প্রতি বছর ভারতে ১ কোটি ২৮ লক্ষ টন প্লাস্টিক-বর্জ্য তৈরি হয়। যার অনেকটাই পশ্চিমবঙ্গের অবদান। এ বার বিশ্ব জুড়ে পরিবেশ দিবসের থিমও ছিল প্লাস্টিক। বছর দুই আগে পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘টক্সিক লিঙ্ক’-এর সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, কলকাতায় রোজ গড়ে ১২০০ টন প্লাস্টিক-বর্জ্য তৈরি হয়।
পরিবেশবিদেরা বলছেন, কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে ৫০ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা প্লাস্টিক ব্যাগ দেদার বিকোচ্ছে। যা আইনত নিষিদ্ধ। প্লাস্টিক পচে না। ফলে সেই দূষণ দীর্ঘস্থায়ী। কেরলে সাম্প্রতিক বন্যার পরে দেখা গিয়েছে, বহু জায়গাতেই প্লাস্টিকে নিকাশি আটকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। কলকাতাতেও প্লাস্টিকের দাপটে নিকাশি বন্ধ হয়ে জল জমার ছবি বারবার দেখা গিয়েছে। কিন্তু তা থেকে প্রশাসন শিক্ষা নেয়নি। পরিবেশবিদেরা বলছেন, বর্ষার জল জমে ফি বছরই মহানগরে ডেঙ্গি-সহ নানা রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
দিল্লি, মহারাষ্ট্র, ওড়িশার মতো কলকাতা-সহ রাজ্যে সার্বিক ভাবে প্লাস্টিকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে না কেন? পরিবেশবিদেরা বলছেন, এ রাজ্যে পরিবেশ দফতরকে তো গুরুত্বই দেওয়া হয় না। কোনও মন্ত্রীর অন্য দফতরের সঙ্গে পরিবেশকে চাপানো হয়। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় দমকল, আবাসনের পাশাপাশি পরিবেশ সামলাতেন। এখন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে পরিবেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাম আমলেও অসুস্থ শৈলেন সরকারকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক ও পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় আইন হয়েছে। তাতে ৫০ মাইক্রনের থেকে পাতলা প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতা দেওয়া, উৎপাদনস্থলে নজরদারি চালানোর কথাও বলা হয়েছে। অনেকে বলছেন, আইন থাকলেও অভাব সদিচ্ছার। এক পরিবেশকর্মী বললেন, ‘‘দিল্লিতে কারও হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগ থাকলে তাঁকে যথেষ্ট হয়রান হতে হয়। ফলে দিল্লিবাসী এখন প্লাস্টিক-বিমুখ হয়ে উঠেছেন।’’ এখানে তা ভাবাও যায় না।
বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘প্লাস্টিক রোধে আইন ১৯৯৯ সালে প্রথম তৈরি হয়। কিন্তু প্রশাসন কোনও দিনই তা কঠোর ভাবে চালু করেনি। পাট শিল্প ধ্বংস করে প্লাস্টিককে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ, পাট পরিবেশবান্ধব।’’ পরিবেশকর্মীদের অনেকের মতে, আগে দরিদ্র মানুষেরা অনেকেই কাগজের ঠোঙা বানাতেন। প্রশাসন চাইলে প্লাস্টিকের বদলে ঠোঙা শিল্পকেও জোরালো করতে পারে।
পরিবেশ দফতরের কর্তারা বলছেন, এক ধাক্কায় নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বদলে ধাপে ধাপে সচেতনতা বাড়িয়ে প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে। নতুন পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ ও পাটের মতো পরিবেশবান্ধব উপাদানের ব্যবহার বাড়ানোয় জোর দিতে বলেছেন। যদিও পরিবেশবিদদের অনেকেরই বক্তব্য, এ কাজ তো বহু দিন ধরেই চলছে। তার ফল মিলবে কবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy