‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার একটি দৃশ্যে উমা দাশগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র।
খুদে পড়ুয়াদের অঙ্কের ক্লাস নিচ্ছেন দুর্গা। যাক, সে দিনের ঝড়জলের রাতে দুর্গা তা হলে মারা যায়নি।
প্রথম দিন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের শিশু ও প্রাথমিক বিভাগের চতুর্থ শ্রেণিতে পথের পাঁচালীর ‘দুর্গা’ উমা দাশগুপ্তকে ক্লাস নিতে দেখে এমনই মনে হয়েছিল ওই স্কুলে সদ্য যোগ দেওয়া, অঙ্কেরই আর এক শিক্ষিকা শম্পা দাসের। শম্পা বলেন, ‘‘আমি তখন সদ্য ওই স্কুলে যোগ দিয়েছি। ওঁর তখন অবসর নিতে কয়েক মাস বাকি। বাইরে থেকে ওঁকে ক্লাস নিতে দেখে মনে হয়েছিল, ইনিই পথের পাঁচালীর দুর্গা? ঘোর কাটতে চাইছিল না। প্রথমে মনে হয়েছিল, খুব রাশভারী ব্যক্তিত্ব। কিন্তু অচিরেই সেই ভুল ভাঙে। দেখলাম, ক্লাসের পরে কী ভাবে উনি খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠলেন।’’
সোমবার উমা দাশগুপ্তের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকে এমনই নানা স্মৃতির টুকরো উঠে আসছিল যাদবপুর বিদ্যাপীঠের শিশু ও প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষিকাদের কথায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রূপশ্রী সাহা বলেন, ‘‘উনি ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এখানে শিক্ষকতা করেছেন। অঙ্ক আর ইংরেজি পড়াতেন। ওঁর আমলের শিক্ষিকারা প্রায় সকলেই অবসর নিয়েছেন। কিন্তু অবসর নেওয়ার পরেও ওঁর সঙ্গে স্কুলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। মাঝেমধ্যেই চলে আসতেন। আমাদের সঙ্গে গল্প করতেন।’’
শম্পার কথায়, ‘‘পথের পাঁচালী নিয়ে উমাদিকে সকলে কত প্রশ্ন করতেন। উনি বার বার একই কথা বলতে চাইতেন না। তাই আমি আগেভাগে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি। এক দিন বলেই ফেললাম, আপনাকে স্কুলে দেখার পরে ফের পথের পাঁচালী দেখলাম। এ বার আর দুর্গার মৃত্যুর দৃশ্যটা দেখে আগের মতো কষ্ট পেলাম না। শুনে উনি খুব হেসেছিলেন। আমাকে পথের পাঁচালীর শুটিংয়ের কিছু অজানা গল্পও বলেন।’’
শম্পার মনে পড়ে, উমা তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘গ্রামের মিষ্টি বিক্রেতা কাঁধে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, পথের পাঁচালীর সেই দৃশ্যটার কথা মনে পড়ে? পিছন পিছন যাচ্ছে অপু আর দুর্গা। তাদের পিছনে একটি কুকুর। ওই কুকুরটা যাতে আমাদের পিছনে পিছনে আসে, তার জন্য সত্যজিৎ রায় আমার হাতে একটা সন্দেশ দিয়ে দিয়েছিলেন।’’
স্কুলের কয়েক জন শিক্ষিকা জানালেন, তাঁদের উমাদি অবসর নেওয়ার সময়ে বলেছিলেন, খুদে পড়ুয়াদের নিজের সন্তানের মতো দেখতে। পরে সেই সন্তানদের দেখার জন্যই বোধহয় মাঝেমধ্যে স্কুলে চলে আসতেন। রূপশ্রী জানান, স্কুলে উমা দাশগুপ্তের একটি স্মরণসভা করবেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘উমাদি নেই ঠিকই। তবে আমাদের একটাই সান্ত্বনা, পথের পাঁচালী দেখলেই ওঁকে দেখতে পাব। সেই চোদ্দো বছরের দুর্গার তো মৃত্যু হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy