Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ballygunge

দুর্ঘটনায় মাকে হারিয়ে অথৈ জলে দুই মেয়ে, অনিশ্চিত ছোট মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা

দুর্ঘটনার পর থেকে জেঠতুতো দাদা ও মাসির সাহায্যেই কোনও মতে দিন কাটছে বালিগঞ্জে গাড়ির ধাক্কায় মৃত ষষ্ঠী দাসের দুই মেয়ের।

অসহায়: তিলজলায় ভাড়ার ঘরে পূজা ও পুষ্পা। ছবি: সুমন বল্লভ।

অসহায়: তিলজলায় ভাড়ার ঘরে পূজা ও পুষ্পা। ছবি: সুমন বল্লভ।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৪৭
Share: Save:

টিউশন ক্লাসের প্রায় আড়াই মাসের টাকা বাকি রয়েছে। দেওয়া হয়নি ঘর ভাড়ার মাসিক পাঁচ হাজার টাকাও। আয় কিছুই নেই। দুর্ঘটনার পর থেকে জেঠতুতো দাদা ও মাসির সাহায্যেই কোনও মতে দিন কাটছে বালিগঞ্জে গাড়ির ধাক্কায় মৃত ষষ্ঠী দাসের দুই মেয়ের। পরিস্থিতি এমনই যে, ছোট বোন আগামী বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আদৌ দিতে পারবে কি না, সেটাও বলা যাচ্ছে না।

মাস তিনেক আগে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে একটি বিলাসবহুল বেপরোয়া গাড়ি তীব্র গতিতে এসে ফুটপাতে উঠে যায়। সজোরে ধাক্কা মারে কাজ থেকে বাড়ির পথ ধরা, বছর পঞ্চাশের ষষ্ঠী দাসকে। গুরুতর জখম অবস্থায় ষষ্ঠীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ওই গাড়িটির গতি এতটাই বেশি ছিল যে, দুমড়ে-মুচড়ে যায় তার সামনের অংশ।

দুর্ঘটনার পরে জানা যায়, ষষ্ঠীর স্বামীও মারা গিয়েছেন জানুয়ারি মাসে। তার পরেই সংসারের হাল ধরতে বালিগঞ্জের একটি জায়গায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর উপরেই ছিল ছোট মেয়ের পড়াশোনা-সহ গোটা সংসারের ভার। শনিবার তিলজলায় ষষ্ঠীর এক কামরার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ভিতরে লোহার খাট পাতা। সেই খাটই কার্যত গোটা ঘর জুড়ে রয়েছে। ঘরের এক পাশে রাখা রান্নার সরঞ্জাম থেকে শুরু করে সংসারের জিনিস। খাটের কোণে অগোছালো ভাবে রাখা বইয়ের পাশে বসে দুই বোন।

জানা গেল, দিদি পূজা দাস পড়াশোনা না করলেও বোন পুষ্পা ভিআইপি নগর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মাধ্যমিক পাশ করার পরে ছোট মেয়েকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করানোর পাশাপাশি একাধিক টিউশনের ব্যবস্থাও করেছিলেন ষষ্ঠী। সে সব আপাতত বন্ধ। পূজার দাবি, বাকি সব টিউশন ক্লাস বন্ধ রেখে এক জায়গায় পড়তে যায় বোন। সেখানকার মাইনেও প্রায় আড়াই মাস বাকি। পূজা বলেন, ‘‘এই ঘরের জন্যই মাসে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। এ ছাড়াও আছে বিদ্যুতের বিল থেকে শুরু করে সংসারের খরচ। দাদা, মাসিই সবটা দেখেন। কিন্তু ওঁদেরও তো সংসার আছে।’’ পুষ্পা বলল, ‘‘বন্ধুদের কাছ থেকে নোট নিয়ে কাজ চালিয়ে নিই। কী করব, আগে পেট চালানোর কথা ভাবব, না কি পড়াশোনা!’’

জানা গেল, দুর্ঘটনার মাস দুই পরে সরকারি তরফে ক্ষতিপূরণের অল্প কিছু টাকা মিলেছিল। ওইটুকুই। পূজার এক দাদা রবি দাস বললেন, ‘‘ওই টাকা দিয়ে আর কত দিন চলবে! ওদের ভবিষ্যতের কথাও তো ভাবতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ballygunge Accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy