Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফ্ল্যাটে আগুন, ভিতরে চিৎকার ‘আন্টি বাঁচাও’

চারতলা থেকে নামা কালো ধোঁয়া ধীরে ধীরে গিলতে শুরু করেছে ফ্ল্যাটবাড়িটিকে। আগুন লেগেছে বুঝতে পেরে বাসিন্দারাও তখন যে যাঁর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে নেমে আসতে শুরু করেছেন। আগুনের আতঙ্কে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে সর্বত্র। তারই মধ্যে ভেসে এল এক শিশুর ক্ষীণ কন্ঠস্বর, ‘‘আন্টি বাঁচাও, আন্টি বাঁচাও! আগুন লেগেছে।’’

পুড়ে ছাই ঘর। বৃহস্পতিবার, ভিআইপি রোডের সেই ফ্ল্যাটে। — নিজস্ব চিত্র

পুড়ে ছাই ঘর। বৃহস্পতিবার, ভিআইপি রোডের সেই ফ্ল্যাটে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ২৩:৫৮
Share: Save:

চারতলা থেকে নামা কালো ধোঁয়া ধীরে ধীরে গিলতে শুরু করেছে ফ্ল্যাটবাড়িটিকে। আগুন লেগেছে বুঝতে পেরে বাসিন্দারাও তখন যে যাঁর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে নেমে আসতে শুরু করেছেন। আগুনের আতঙ্কে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে সর্বত্র। তারই মধ্যে ভেসে এল এক শিশুর ক্ষীণ কন্ঠস্বর, ‘‘আন্টি বাঁচাও, আন্টি বাঁচাও! আগুন লেগেছে।’’

মা নাইট ডিউটি সেরে ফিরবেন কিছুক্ষণের মধ্যে। তাই চারতলার ফ্ল্যাটে ছ’বছরের ছেলেকে একা রেখে বাড়ির কাছে একটি ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন বাবা। ইতিমধ্যেই ঘরে কোনও ভাবে আগুন লেগে যায় এবং ভিআইপি রোডের কাছে একটি আবাসনের ফ্ল্যাটটিতে আটকে পড়ে দেবাংশ মতোয়ানি নামে ওই শিশুটি। ফ্ল্যাটের সদর দরজা খোলা থাকলেও লোহার গেটে তালা থাকায় ফ্ল্যাটের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেনি দেবাংশ। এ ভাবে প্রায় আধঘণ্টা চলার পরে ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারাই তাকে উদ্ধার করেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ঘটনাটি ঘটে।

বাসিন্দারা জানান, পুলিশ ও দমকলকে খবর দেওয়ার পরে তাঁরা জানতে পারেন দেবাংশের আটকে পড়ার ঘটনা। ঝুঁকি নিয়ে তাঁরাই ওই ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে ছেনি-হাতুরি, হামানদিস্তা নিয়ে তালা ভাঙার চেষ্টা করতে থাকেন। ওই ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দা সত্যজিৎ সিংহ, অলোক দত্ত, সৌম্য চট্টোপাধ্যায়েরা আগুনের সামনে ঝুঁকি নিয়েই ছুটেছিলেন দেবাংশকে বাঁচাতে। তাঁদের কথায়, সব ফ্ল্যাটেই গ্যাস সিলিণ্ডার রয়েছে। যে কোনও সময়ে বড় বিপদ হতে পারত। দমকল এসে পরিস্থিতি সামলে দিয়েছে।

তবে দমকল আসার আগেই দেবাংশকে লোহার গেটের তালা ভেঙে উদ্ধার করেন বাসিন্দারা। অলোকবাবু জানান, হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙছে না দেখে খুব জোরে জোরে হামানদিস্তা দিয়ে তালার উপরে মারতে থাকেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘মিনিট পনেরো লাগে তালা ভাঙতে। শেষে লোহার গেটের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকি। কালো ধোঁয়ায় চোখ জ্বলে যাচ্ছিল। বাচ্চাটির নাম ধরে শুধু চেঁচাচ্ছিলাম। ইতিমধ্যেই সে বেরিয়ে আসে এবং আমরা ওকে নামিয়ে নিই।’’

প্রাথমিক তদন্তে দমকলের আধিকারিকদের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লাগে। এ দিন পুড়ে তছনছ হয়ে যায় চার কামরার ওই ফ্ল্যাটটি। ফ্ল্যাটের বাসিন্দা দেবাংশের বাবা ললিতবাবু এবং মা তনুজাদেবী জানান, তাঁদের দু’জনকে পেশাগত কারণে বাইরে বেরোতে হয় বলে ছেলে সাধারণত ক্রেশে থাকে। পুজোর ছুটি থাকায় সে বাড়িতে ছিল। তনুজাদেবী বলেন, ‘‘ঘরে গ্যাস সিলিণ্ডার ছিল। প্রতিবেশীরা তালা ভাঙতে পারায় আমার ছেলে রক্ষা পেয়েছে।’’

ললিতবাবুর কথায়, ‘‘কুড়ি বছর এই ফ্ল্যাটে আছি। বাচ্চাকে ফ্ল্যাটে একা রেখে কখনও সখনও খুব অল্প সময়ের জন্যই বাইরে যাই। স্ত্রী বাড়ির কাছাকাছি রয়েছে শুনেই একটু ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। ইতিমধ্যেই এই ঘটনা। আর কখনও এ ভাবে বেরোবো না।’’

ছোট্টো দেবাংশ অবশ্য হাভেভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছিল যে, সে খুব একটা ভয় পায়নি। তার কথায়, ‘‘আমি যেই দেখেছি ঘরে আগুন লেগেছে, তখনই চিৎকার করে নীচের আন্টিকে ডেকেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire accident police Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE