Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
বারাণসী ঘোষ স্ট্রিট

আবহাওয়াটাই ধরে রেখেছে আকর্ষণ

বহুকালের চেনা বাড়িগুলির কোনওটায় পড়েছে উজ্জ্বল রঙের প্রলেপ। কোনওটা বা কালের ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে মলিন। বারাণসী ঘোষ স্ট্রিট, আমাদের পাড়ার রাস্তাটা বিবেকানন্দ রোড থেকে শুরু করে এঁকে-বেঁকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে গিয়ে মিশেছে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

সঞ্জয় খন্না
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

বহুকালের চেনা বাড়িগুলির কোনওটায় পড়েছে উজ্জ্বল রঙের প্রলেপ। কোনওটা বা কালের ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে মলিন। বারাণসী ঘোষ স্ট্রিট, আমাদের পাড়ার রাস্তাটা বিবেকানন্দ রোড থেকে শুরু করে এঁকে-বেঁকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে গিয়ে মিশেছে। কাছেই সিংহী বাগান, রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিট এবং পার্বতী ঘোষ লেন।

আপাত দৃষ্টিতে মোটেই তাক লাগানো, ঝাঁ-চকচকে নয়! তবু জোড়াসাঁকোর ধার ঘেঁষা, ইতিহাসের গন্ধমাখা এই পাড়ায় মিশে আছে স্মৃতিমেদুর মাদকতা। বদলে যাওয়া সময়ের প্রভাবে পাড়ার চেহারাটাও অনেকটাই বদলেছে। এক কালের ঔপনিবেশিক স্থাপত্য ঢাকা পড়েছে হাল আমলের বাড়িতে। বেশ কিছু পুরনো বাড়ি ভেঙে তৈরি হয়েছে বহুতলও। তবু এখানকার দিন যাপনে রয়েছে এক সারল্য।

এক কালের বাঙালি পাড়াটায় আজ অবাঙালিদের সংখ্যাই বেশি। তবে মিশ্র সংস্কৃতি থাকা সত্ত্বেও পাড়ায় রয়েছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। অনেক পরিবর্তন এলেও হারায়নি পুরনো পড়শিদের সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক, বিপদে
পাশে থাকা। তবে কমেছে একে অপরের বাড়িতে যাওয়ার অভ্যাস। নতুনদের সঙ্গে যোগাযোগ কম। আর যেন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে না। আগে পাড়া মানে ছিল এক বৃহৎ পরিবার। যদিও সময়ের সঙ্গে একটু একটু করে বদলাচ্ছে সেই ধারণাটা।

আগে এ পাড়ায় বেশ কিছু বাড়ি সংলগ্ন রক ছিল। সেখানে সকালে-বিকেলে বসত আড্ডা। একে একে উধাও হয়েছে সেই রকগুলো। তাই বদলেছে আড্ডার চরিত্রটাও। এ পাড়ায় দুর্গাপুজোর সূচনা আমাদের বাড়ি থেকেই। আজও পুজোর ক’টা দিন পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ, যোগাযোগ হয়।

এখন পাড়াটা রাতেও আলো ঝলমলে। নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই, রাস্তা পরিষ্কার করা হয়। কাউন্সিলর স্মিতা বক্সী এলাকার উন্নয়নে তৎপর। তবে খারাপ লাগে, পাড়া পরিচ্ছন্ন রাখার পুর-উদ্যোগে থাকলেও নেই নাগরিক সচেতনতা। প্লাস্টিক বন্দি আবর্জনা আজও জানলা দিয়ে
আছড়ে পড়ে রাস্তায়। আমাদের বাড়ির পিছনে রয়েছে একটি মাঠ। সেটি পরিচ্ছন্ন না থাকায় মশার উপদ্রব এতটুকুও কমেনি।

পাড়ার সকালটা বরাবরই আকর্ষণীয়। আমাদের বাড়ির নীচে, রাস্তার ধারে রয়েছে একটি চায়ের দোকান। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই উনুনের ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে ছড়িয়ে পড়ে পাড়ার আনাচ-কানাচে। কেউ আসেন প্রাতর্ভ্রমণ সেরে,
কেউ বা বাজারে যাওয়ার প্রাক্কালে ধোঁয়া ওঠা চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে।

আগে পাড়ার ছেলেরা রাস্তায় খেলাধুলো করত। সে সময়ে প্রতি মুহূর্তে এত গাড়ি যাতায়াত করত না। রাস্তাতেই হতো ফুটবল ট্যুর্নামেন্ট, গলিতে ক্রিকেট খেলা। পাড়ার মুখেই রয়েছে এক চিলতে সবুজ ত্রিকোণ পার্ক। সেটি এখন সুসজ্জিত, পরিচ্ছন্ন। নির্দিষ্ট সময়ে তা খোলা-বন্ধ হয়। ছোটরা সেখানে বেড়াতে যায়।

এক কালে এ পাড়াতেও ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশ। আমাদের বাড়িটি লালাবাবুর বাড়ি নামেই পরিচিত। এক কালে সেখানেই বসত ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসর। আসতেন প্রবাদপ্রতীম শিল্পীরা। পাড়ায় মাঝেমাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলেও আগের সেই কৌলিন্য আর নেই। আগের তুলনায় পাড়াটা এখন অনেক ঘিঞ্জি। বেড়েছে জনসংখ্যা।

এক দিকে পাঁচ পুরুষের শিকড়ের টান, অন্য দিকে নানা পরিবর্তনের মাঝেও হারায়নি পাড়া পাড়া সেই আবহাওয়াটা। সেটাই আঁকড়ে ধরে রেখেছে আমাদের সকলকে।

লেখক ব্যবসায়ী

অন্য বিষয়গুলি:

people Atmosphere
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE