আজহার মোল্লা বাগানে ভেঙে পড়া ছ’তলা নির্মীয়মাণ বহুতলটির পুর বিল্ডিং বিভাগের অনুমতি তো ছিলই না। —ফাইল ছবি।
বন্দর এলাকার গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াবুরুজে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের নিয়ম না মানার অভিযোগ তো আছেই। শুধু তা-ই নয়, নিয়ম অনুযায়ী, ১৫ মিটার কিংবা তার বেশি উঁচু বসতবাড়ি অথবান্যূনতম তিন মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে দমকলের ছাড়পত্রও আবশ্যিক। কিন্তু অভিযোগ, বন্দর এলাকায় অধিকাংশ নির্মাণের ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয় না। রবিবার মাঝরাতে গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা বাগানে ভেঙে পড়া ছ’তলা নির্মীয়মাণ বহুতলটির পুর বিল্ডিং বিভাগের অনুমতি তো ছিলই না। পাশাপাশি, উচ্চতা ১৫ মিটারের বেশি হওয়া সত্ত্বেও চার ফুট গলিতে ওই বহুতল নির্মাণে দমকলের ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি।
দমকলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সেই রাতে বহুতল ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে একাধিক ইঞ্জিন এসেছিল ঠিকই। কিন্তু পাহাড়পুর রোড থেকে আজহার মোল্লাবাগানের ঘটনাস্থলে যাওয়ার রাস্তা এতটাই সরু যে, ইঞ্জিন ঢোকানোই যায়নি। পাহাড়পুর রোডেই গাড়ি রাখতে হয়।’’
দমকল দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বন্দর এলাকায় বেআইনি নির্মাণের রমরমা বন্ধ করতে পুরসভা এখন থেকে কঠোর মনোভাব না নিলে ভবিষ্যতে ওই এলাকায় বড়সড় আগুন লাগলে কিংবা অন্য বড় দুর্ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা আমাদের পক্ষে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষত, বড় আগুন লাগলে মূল রাস্তা থেকে পাইপের মাধ্যমে জল পৌঁছনোও কঠিন হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও রকম নিয়ম না মেনে সরু গলিপথে বহুতল গজিয়ে উঠছে। আমাদের কাছে অভিযোগ এলে তবে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু বেআইনি বহুতলের নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে একমাত্র পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। তারা আগেভাগে সজাগ না হলে আগামী দিনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।’’
দমকলের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর উদয়নারায়ণ অধিকারী জানাচ্ছেন, দু’ধরনের নির্মাণের ক্ষেত্রে দমকলের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। একটি উঁচু বহুতল (হাইরাইজ়), অন্যটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ (হাই-রিস্ক) বাড়ি। কোনও বহুতলের উচ্চতা ১৫ মিটার কিংবা বেশি হলেই দমকলের ছাড়পত্র আবশ্যিক। আবার, অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ি শুরু হয় ন্যূনতম তিন মিটার উচ্চতা থেকে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাড়িতে বিস্ফোরক মজুত করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজকর্ম চালানোর জন্য দমকলের অনুমতি অবশ্যই প্রয়োজন।
অভিযোগ, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজের মতো ঘিঞ্জি জায়গায় এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে তৈরি হচ্ছে একের পর এক বহুতল। যেমন হয়েছিল আজহার মোল্লা বাগানের নির্মীয়মাণ বহুতলটি। এ-ও অভিযোগ, বন্দর এলাকায় কম উচ্চতার বহু বাড়িতে দমকলের অনুমতি ছাড়াই চলছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা।
উদয়নারায়ণের পর্যবেক্ষণ, ‘‘শুধু বন্দর এলাকাই নয়, শহরের আরও একাধিক জায়গায় নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্মাণকাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে আরও বড় বিপদ সময়ের অপেক্ষা মাত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy