প্রথমে ট্যাক্সি চুরি। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যে ওই চোরাই ট্যাক্সিতেই এক তরুণীকে জবরদস্তি উঠিয়ে নিয়ে অপহরণের চেষ্টা। খাস কলকাতার চেতলায় রবিবার রাত ৮টার ওই ঘটনায় দুষ্কৃতীদের স্পর্ধা দেখে অবাক পুলিশের একাংশ। দুই দুষ্কৃতীর এক জন অবশ্য ধরা পড়ে গিয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম লালবাবু।
দিন কয়েক আগে হুগলি জেলার পোলবায় এক তরুণীকে ভোরবেলায় অপহরণের চেষ্টা করে একদল দুষ্কৃতী। তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল ওই তরুণীকে। চেতলার ঘটনা অত দূর না গড়ালেও জনবহুল তল্লাটে সন্ধ্যা পার হতে না হতেই দুষ্কৃতীদের দুঃসাহস দেখে প্রমাদ গণছে কলকাতা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, রবিবার সন্ধ্যায় ট্যাক্সিটি চুরি করা হয়েছিল ভবানীপুর থেকে। আর তার ঘণ্টা দেড়-দুইয়ের মধ্যে চুরির জায়গা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে ঘটে ওই তরুণীকে অপহরণের চেষ্টার ঘটনা।
পুলিশ জানায়, রবিবার রাত ৮টা নাগাদ চেতলার সব্জি বাগান দিয়ে ৩৫ বছরের ওই তরুণী হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ চলন্ত ওই ট্যাক্সির দরজা খুলে এক ব্যক্তি ওই তরুণীকে ভিতরে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, তরুণীর চিৎকার শুনে সেখানে উপস্থিত কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবল ছুটে যান। তা দেখে ট্যাক্সিটিকে ধাওয়া করেন স্থানীয় কয়েক জনও। শেষমেশ তাঁরা ট্যাক্সিটি অতিক্রম করে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে তার যাত্রাপথ আটকে দেন। বাধ্য হয়ে থেমে যায় ট্যাক্সি। তরুণীকে উদ্ধার করেন স্থানীয়েরা। তবে এলাকার মানুষ ট্যাক্সির ভিতরে বসে থাকা লালবাবুকে ধরে ফেললেও ফাঁকতালে পালিয়ে যায় অন্য জন। রবিবার রাতে ওই তরুণীর বাবা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। গ্রেফতার হয় লালবাবু।
এক পুলিশ কর্তা জানান, তদন্তে জানা গিয়েছে লালবাবু কলকাতার এক কুখ্যাত ট্যাক্সিচোর। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের হাতে সে একাধিক বার ধরাও পড়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার গ্রেফতার হওয়ার পরে জেরায় লালবাবু ওই তরুণীকে অপহরণের চেষ্টার কথা স্বীকার করে। তার কাছেই জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর এলাকার গাঁজাপার্কের কাছ থেকে ট্যাক্সিটি চুরি করে সে। এক পুলিশকর্তা জানান, এর আগেও বেশ কয়েক বার ট্যাক্সি চুরির জন্য পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল লালবাবু। এক বার সে কালীঘাট থানার সামনে থেকে পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা একটি ট্যাক্সি চুরি করেও পালিয়ে যায়।
কিন্তু ট্যাক্সিচোর লালবাবু হঠাৎ ওই তরুণীকে অপহরণ করতে গেল কেন?
এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, ওই ঘটনায় রহস্যের জট পুরোপুরি কাটেনি। ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত কি না, ওই মহিলার সঙ্গে দুষ্কৃতীদের পূর্ব পরিচয় ছিল কি না—সব দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘ওই রাতে ট্যাক্সিতে লালবাবুর সঙ্গী যে ছিল, তাকে গ্রেফতার করতে পারলে ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে। তার পরেই ধোঁয়াশা কাটবে বলে আশা করছি।’’
পুলিশ জেনেছে, ওই তরুণী বিবাহিত, তবে স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। তাঁর সন্তান থাকে বাবার কাছে। তরুণী মাঝেমধ্যে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ান বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি। দুষ্কৃতীরা তা নজর করেই অপহরণের চেষ্টা করেছিল কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy