Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

বিধাননগরে ডেঙ্গিতে মৃত্যু নাট্যকর্মীর, দায় নিচ্ছে না পুরসভা

ডেঙ্গি সংক্রমণে শহরে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ল। বৃহস্পতিবার সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক নাট্যকর্মীর মৃত্যু হয়। মৃতের নাম ঈশিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (২৭)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডেঙ্গির সংক্রমণে বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয় গিয়ে মৃত্য হয়েছে তাঁর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৫ ২১:৫৫
Share: Save:

ডেঙ্গি সংক্রমণে শহরে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ল। বৃহস্পতিবার সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক নাট্যকর্মীর মৃত্যু হয়। মৃতের নাম ঈশিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (২৭)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডেঙ্গির সংক্রমণে বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয় গিয়ে মৃত্য হয়েছে তাঁর। সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই নিয়ে ডেঙ্গিতে সল্টলেকে দু’জনের মৃত্যু হল। পুজোর আগে সায়ন দে নামে বছর পাঁচেকের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।

ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনায় পুর-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, যে সময়ে মশার প্রকোপ বাড়ে, ঠিক সেই মরশুমেই পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। প্রশাসক বসানো হয়েছিল। তার পরে ভোট এবং পুজো পর্ব কেটেছে। ফলে মশা তাড়াতে যে যুদ্ধকালীন পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল তা হয়নি।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বিধাননগর পুরসভা জানিয়েছে, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সারা বছর ধরে কাজ হয়েছে। যে সময় সম্পর্কে অভিযোগ উঠছে, তখনও বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ ও অন্যান্য কাজ হয়েছে।

সল্টলেকের জিডি ব্লকের বাসিন্দা ঈশিতার স্বামী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুজোর মধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঈশিতা। প্রথমে জ্বর কমে গেলেও ফের জ্বর আসে। চোখমুখ ক্রমশ লালচে হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে সল্টলেকের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। এর পরে ওই মহিলাকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকরা। সেখানে ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু ফের তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। একটি একটি করে অঙ্গও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। উপরন্তু ফুসফুসে জল জমে যায়। এর পরে তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। এ দিন সকালে ৭টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ডেঙ্গি শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেই ঈশিতা। তার জেরেই সেপসিস এবং মাল্টিওরগ্যান ফেইলিওরে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

ঈশিতা রূপচক্র, রঙমহল নাট্য আকাদেমির মতো বিভিন্ন নাট্যসংস্থায় যুক্ত ছিলেন। কিছু দিন পরেই লক্ষ্ণৌতে একটি নাটক প্রতিযোগিতায় তাঁর অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

সায়ন-ঈশিতার বাড়ি এলাকায় জিডি ব্লকে ইতিমধ্যে ঝোপজঙ্গল সাফ করা, ব্লিচিং ছড়ানো, মশার তেল স্প্রে ছড়ানোর কাজ হয়েছে বলে দাবি পুরসভার। কিন্তু মৃতার বাড়ির পাশের প্লটেই দেখা গেল অসংখ্য ফুলের টব পড়ে রয়েছে। তাতে জলও জমেছিল। এ ছাড়াও বাড়ির পার্শ্বস্থ এলাকাতেও মশার বংশবৃদ্ধির সহায়ক পরিবেশের নমুনাও দেখতে পাওয়া গিয়েছে।

বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ৪৫০-র বেশি বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসে পুরনির্বাচনের মুখেই সল্টলেকের সিডি ব্লকে সায়ন দে নামের এক পাঁচ বছরের শিশু ডেঙ্গি সংক্রমণে মারা যায়। পুজোর পরে বাগুইহাটিতে জ্যাংরাতে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁদেরও প্রাথমিক পরীক্ষায় ডেঙ্গির উপসর্গ মিলেছিল। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালেও প্রায় ৬০ জনেরও বেশি ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। সূত্রের খবর, তাঁদের অনেকেরই প্রাথমিক পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।

পুজোর আগেই অবশ্য সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলররা শপথ নিয়েছিলেন। তার পরেই স্মার্ট সিটি নিয়ে পুরসভার তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। সম্প্রতি পুরনিগম মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পথে নেমেছে। রাজারহাট-গোপালপুর এলাকা থেকে সল্টলেকে ১৩৮ জন পুরকর্মীরা পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০০ জনকে ব্লিচিং ছড়ানো, মশার তেল স্প্রে ছড়ানোর কাজে নামানো হয়। বাড়ি বাড়ি সচেতনতার কাজেও পথে নামেন কাউন্সিলররা।

এ দিন ডেঙ্গির মৃত্যুর পরেও অবশ্য মশাবাহিত রোগে আক্রান্তদের পরিসংখ্যান দিতে পারেনি পুরপ্রশাসন। মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। মৃতার পরিবারকে সমবেদনা জানাই।’’ তাঁর দাবি, পুজোর পরে দায়িত্বভার নিয়েই পুরবোর্ড মশাবাহিত রোগ বিশেষত ডেঙ্গি প্রতিরোধে সবরকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তার জেরে পরিস্থিতি আগের থেকে উন্নত হয়েছে বলেই দাবি মেয়রের।

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Actress Dies Saltlake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE