Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘আইন’ ছিঁড়ে প্রতিবাদের সমাবর্তন যাদবপুরে

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান এই ভাবেই আত্মপ্রকাশ করল উচ্চকিত প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কৃতী ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরী রইলেন তার সব চেয়ে নজর-কাড়া মুখ হয়ে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেললেন ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরী। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেললেন ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরী। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২০
Share: Save:

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা তাঁর। স্নাতকোত্তরে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থানাধিকারিণী। মঞ্চে দাঁড়িয়ে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে তিনি বললেন, ‘হম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’ তার পরে এগিয়ে গেলেন স্বর্ণপদক নিতে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান এই ভাবেই আত্মপ্রকাশ করল উচ্চকিত প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কৃতী ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরী রইলেন তার সব চেয়ে নজর-কাড়া মুখ হয়ে। সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষের কাছ থেকে পদক নেওয়ার পরে ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘‘দেশ জুড়ে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে। আমার মনে হয়েছিল, স্বর্ণপদক নেওয়ার জন্য মঞ্চে ওঠার সুযোগটা প্রতিবাদ জানানোর কাজে লাগানো উচিত।’’ দেবস্মিতার বাবা এবং দিদি দর্শকাসনে ছিলেন। দেবস্মিতা জানান, তাঁর প্রতিবাদে ওঁরাও খুশি।

প্রতিবাদের আবহ অবশ্য তৈরিই ছিল। অনেক পড়ুয়া এ দিন ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’ লেখা ব্যাজ পরে ডিগ্রি নিয়েছেন। এবং অনেকেই স্পষ্ট জানিয়েছেন, রাজ্যপাল এলে তাঁর হাত থেকে ডিগ্রি নিতেন না। যেমন, দর্শন বিভাগে স্নাতক স্তরের স্বর্ণপদক পাওয়া ছাত্রী তীর্ণা ভট্টাচার্য। তিনি জানালেন, রাজ্যপাল যদি শেষ পর্যন্ত সমাবর্তন মঞ্চে আসতেন, তা হলে তাঁর হাত থেকে ডিগ্রি নিতেন না। তীর্ণার কমলা রঙের রোবে দু’টি ব্যাজ লাগানো। একটিতে লেখা ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’, অন্যটিতে লেখা ‘গো ব্যাক ধনখড়’।

আরও পড়ুন:লুকিয়ে হবে না এনআরসি, বললেন শাহ

বস্তুত, এ বারের সমাবর্তন স্বতন্ত্র হয়ে রইল প্রতিবাদের নানা ধরনে। কেউ মঞ্চে উঠে প্রতিবাদ করেছেন, কেউ প্রতিবাদের ব্যাজ পরে এসেছেন। কেউ পদক নেওয়ার মুহূর্তটাই প্রতিবাদের কাজে লাগিয়েছেন। কেউ অনড় থেকেছেন রাজ্যপালের বিরোধিতায়। রাজ্যপাল না-আসা সত্ত্বেও প্রায় ৩০ জন পড়ুয়া এ দিন ডিগ্রি নেননি। ডিগ্রি না-নিয়েই সার্বিক ভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং তার প্রতিবাদ আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনার বিরুদ্ধে সমাবর্তন স্থলের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের পক্ষে সোমাশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘সংবিধান-বিরোধী আইন মেনে নেওয়া যায় না। জামিয়া, আলিগড়ের পড়ুয়াদের উপরে পুলিশ চড়াও হয়েছে। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।’’ এরই প্রতিবাদে তাঁরা সমাবর্তনে ডিগ্রি নিলেন না।

২০১৪ সালে ‘হোক কলরব’ আন্দোলন চলাকালীনও সমাবর্তন মঞ্চে ডিগ্রি নিতে অস্বীকার করেছিলেন কৃতী ছাত্রী গীতশ্রী সরকার। এ দিন দেবস্মিতার প্রতিবাদ প্রসঙ্গে গীতশ্রী বলেন, ‘‘দেবস্মিতা যাদবপুরের ঐতিহ্য মেনেই প্রতিবাদ জানিয়েছে। ও একা নয়, পড়ুয়ারা যে যে-ভাবে পেরেছে, ক্যাম্পাস জুড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy