Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Fraud Case

ভুয়ো অভিযোগ করে সিমের দখল নিয়ে কলকাতায় সাড়ে সাত লক্ষের প্রতারণা

গত ২২ ফেব্রুয়ারি হেয়ার স্ট্রিট থানায় দায়ের হওয়া একটি অভিযোগের তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছেন কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখার গোয়েন্দারা। অভিযোগকারীর নাম দেবরাজ দত্ত।

A Photograph representing fraud case

লালবাজারের সাইবার শাখার গোয়েন্দারা জানান, প্রতারণার এমন ফাঁদ পাততে সমাজের যে কোনও স্তরের মানুষকে নিশানা করা হচ্ছে। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৩ ০৭:০৭
Share: Save:

গ্রাহক জানতেনই না যে, তাঁর নামে মোবাইল ফোন এবং সিম কার্ড হারিয়ে যাওয়ার জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে থানায়। সেই জিডি-র কাগজ দেখিয়েই তুলে নেওয়া হয়েছে গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত ফোন নম্বরের ‘ডুপ্লিকেট সিম কার্ড’। বেহাত হয়ে গিয়েছে তাঁর ইমেল আইডি-ও। এর পরে ফোন নম্বর এবং ইমেল আইডি ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক থেকে চাওয়া হয়েছে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত নতুন ডেবিট কার্ড। সেই সূত্রেই হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় সাত লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা!

গত ২২ ফেব্রুয়ারি হেয়ার স্ট্রিট থানায় দায়ের হওয়া একটি অভিযোগের তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছেন কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখার গোয়েন্দারা। অভিযোগকারীর নাম দেবরাজ দত্ত। এই ঘটনায় পুলিশ বিশ্বজিৎ মজুমদার ও দীপঙ্কর ঘোষাল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। বিশ্বজিতের বাড়ি বনগাঁয়। দীপঙ্করের মধ্যমগ্রামে। হাতিয়ে নেওয়া টাকার মধ্যে চার লক্ষ ২০ হাজার গিয়েছিল বিশ্বজিতের অ্যাকাউন্টে। দীপঙ্কর টাকা হাতানোর আগে ডেবিট কার্ড ডেলিভারি নিয়েছিল। ধৃত দু’জন ছাড়াও এই চক্রে আরও কয়েক জন জড়িত বলে তদন্তকারীদের অনুমান।

লালবাজারের সাইবার শাখার গোয়েন্দারা জানান, প্রতারণার এমন ফাঁদ পাততে সমাজের যে কোনও স্তরের মানুষকে নিশানা করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে সতর্ক নন। কখনও কোনও দোকানে ‘মন্তব্য’-এর খাতায় নাম, ফোন নম্বর এবং ইমেল আইডি লিখে আসেন তাঁরা। কখনও ‘ফিডব্যাক ফর্ম’-এ জানিয়ে আসেন, বাড়ির ঠিকানা থেকে জন্মের তারিখ। এর সঙ্গে রয়েছে রাস্তার কিয়স্ক বা শপিং মল থেকে বিশেষ ছাড়ে সিম কেনার প্রবণতা।তদন্তকারীরা দেখেছেন, এমন কিয়স্কে বা সিম কার্ডের দোকানে কাজ করা অনেকেই সাইবার-প্রতারণায় জড়িত। কেউ সিম কার্ড কেনার জন্য আধার কার্ড নিয়ে এলে সেটির ছবি তুলে রাখা হয়। পরে সেই ছবি বিক্রি করে দেওয়া হয় প্রতারকদের কাছে। তা দিয়েই তোলা হয় ‘প্রি-অ্যাক্টিভেটেড’ সিম কার্ড।

পুলিশ জানাচ্ছে, আরও একটি পদ্ধতিতে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তার নাম এবং ইমেল আইডি জোগাড় করা হচ্ছে। এর পরে সেই ইমেলে হয় ব্যাঙ্কের নাম করে, অথবা কোনও বিমা সংস্থা বা অন্য কোনও ভাবে লাগাতার মেল পাঠানো হচ্ছে। এই ভাবেই জেনে নেওয়া হচ্ছে ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর-সহ নানা ব্যক্তিগত তথ্য। এর পরে ওই ব্যক্তির নামে থাকা সিম কার্ড হারিয়ে গিয়েছে বলে থানায় ভুয়ো অভিযোগ করা হচ্ছে। সেই অভিযোগপত্র এবং একটি আবেদন নিয়ে গিয়ে টেলিকম সংস্থার কাছ থেকে তোলা হচ্ছে ডুপ্লিকেট সিম কার্ড! আসল ব্যক্তি যত ক্ষণে বুঝতে পারছেন, তত ক্ষণে ওই নম্বর দিয়ে প্রতারণার কাজ সারা হয়ে গিয়েছে! প্রতারিত ব্যক্তি জানতেই পারেননি যে, তাঁর ফোন নম্বরটি কেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

লালবাজার সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে মূলত তিনটি প্রয়োজনে এমন জালিয়াতি চালানো হচ্ছে। যে কোনও তদন্তে অন্যতম সূত্র মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান বা কল ডিটেলস রেকর্ড। যা সাধারণত সিম কার্ডের মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব। সেটাই যাতে বন্ধ করে দেওয়া যায়, তাই অন্যের নামে সিম কার্ড সক্রিয় করে কাজ সারতে চাইছে প্রতারকেরা। দ্বিতীয়ত, টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলে দেখা হয়, সেটি কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা ই-ওয়ালেটে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকে ফোন নম্বর। ই-ওয়ালেট ফোন নম্বর ছাড়া খোলাই সম্ভব নয়। সেই নম্বরের সূত্র ধরে যাতে পুলিশ প্রতারকের নাগাল না পায়, তাই চালানো হচ্ছে অন্যের নামে সিম তোলার জালিয়াতি। তৃতীয় প্রয়োজনটি সব চেয়ে ভয়ঙ্কর। কাউকে ঠকানোর সময়ে সেই ব্যক্তিকে বুঝতেই না দিতে এবং তাঁর ফোনের আগাম দখল পেতে, তাঁর অজানতেই বার করে নেওয়া হচ্ছে তাঁর নামের ডুপ্লিকেট সিম। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে প্রতারকদের পুলিশের জালে পড়তে হয়েছে ডেবিট কার্ডটি নিজেদের ঠিকানায় ডেলিভারি নেওয়ায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud Case mobile sim card arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE