কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।
প্রথম সন্তান জন্মেছে ছেলে। তাই হাসপাতাল চত্বরেই মোরগ বলি দিলেন বাবা! মঙ্গলবার বিকেলে এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে এই ঘটনায় বিস্মিত চিকিৎসক থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তাঁরা বলছেন, একুশ শতকে দাঁড়িয়েও ‘কুসংস্কারের’ বেড়াজাল কাটিয়ে এখনও অনেকেই যে বেরোতে পারেননি, এই ঘটনাতেই তা প্রমাণিত।
যে পরিবার এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা বিষয়টিকে ‘পারিবারিক সংস্কার’ বলে দাবি করেছে। সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিন পাঁচেক আগে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা, বছর কুড়ির এক তরুণী। এ দিন বিকেলে সন্তান-সহ তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। সেই মতো দুপুরেই মোরগ-সহ পুজোর বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন তরুণীর স্বামী ও পরিজনেরা। জানা গিয়েছে, ছুটির পরে মা-সন্তানকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেওয়ার আগে সঙ্গে থাকা লোকজন চলে যান প্রসূতি বিভাগ, অর্থাৎ ইডেন বিল্ডিংয়ের পিছনে।
অভিযোগ, নিরিবিলি ওই জায়গায় পান, সুপুরি, কর্পূর সাজিয়ে পুজোর আয়োজন করেন তাঁরা। সেখানে পানের উপরে লাড্ডু রেখে ফুল-মালা চড়ানো হয়। তার পরে গঙ্গাজল দিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করে সেখানে রাখা হয় মোরগটিকে। সেটিকেও মালা পরিয়ে, স্নান করিয়ে বলি দেওয়া হয়। অন্য কয়েক জন রোগীর আত্মীয় এমনটা দেখে তা জানান হাসপাতালের কর্মীদের। সেখান থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে তড়িঘড়ি হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন।
তবে, পুলিশ পৌঁছনোর আগেই মোরগ বলি দিয়ে, সেই কাটা মোরগ ও পুজোর সব উপকরণ ব্যাগে ঢুকিয়ে, জায়গাটি জল দিয়ে ধুয়ে চম্পট দেন প্রসূতির পরিজনেরা। প্রত্যক্ষদর্শী অন্য রোগীর পরিজনদের কথায়, ‘‘পুজোয় মোরগ বলি দিচ্ছে দেখে লোকও জড়ো হয়ে যায়। কয়েক জন আপত্তি করায় ওঁরা তড়িঘড়ি সব কিছু করে চলে যান। তার পরে ওঁদের হাসপাতাল চত্বরে দেখা যায়নি।’’
কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজের সব রকম বিরোধিতাকে নস্যাৎ করে ১৮৩৬ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শব-ব্যবচ্ছেদ করে চিকিৎসা জগতে ইতিহাস গড়েছিলেন মধুসূদন গুপ্ত। সেই হাসপাতালেই এমন কুসংস্কারের ঘটনায় হতবাক অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। তিনি বলছেন, ‘‘এমন কাণ্ড এ যুগেও ঘটতে পারে, ভাবতেও পারছি না। খুবই লজ্জাজনক।’’ ঘটনার তীব্র নিন্দা করে উপাধ্যক্ষ অঞ্জন অধিকারী বলেন, ‘‘এখনও কিছু মানুষের মধ্যে এমন কুসংস্কার বাসা বেঁধে রয়েছে। সেই মানসিকতা দূর করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’’
যদিও এই ঘটনায় অন্যায় দেখছেন না বলেই দাবি প্রসূতির স্বামীর। পেশায় সাফাইকর্মী ওই যুবকের দাবি, ‘‘এটা আমাদের পরিবারের রীতি। প্রথম সন্তান ছেলে হয়েছে, তাই তাকে বাড়ি আনার আগে হাসপাতালেই পুজো করেছি।’’ সমাজ এমন বিভিন্ন সংস্কার থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি বলেই জানাচ্ছেন সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম পুত্রসন্তানের জন্ম ঘিরে বিবিধ ধারণা রয়েছে। মন্দিরে বা পারিবারিক গুরুর চরণে নবজাতকের মাথা ছুঁইয়ে আনার সংস্কার এখনও অনেক পরিবারেই দেখা যায়। এখানে ঘটনাস্থল চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ স্থান হওয়ায় চমক তৈরি হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy