মাধবী জানা
সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে খুন হলেন এক বৃদ্ধা। শুক্রবার রাতে, বরাহনগরের নিয়োগী পাড়ার ব্যারিস্টার পি মিত্র লেনে। মৃতার নাম মাধবী জানা (৭৬)।
স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জেনেছে, শুক্রবার সকালে বৃদ্ধার মাথায় চেলা কাঠ দিয়ে আঘাত করে তাঁর নাতি। বরাহনগর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে মাধবীদেবীকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সন্ধ্যায় তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে রাস্তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বৃদ্ধার ছোট মেয়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বৃদ্ধার নাতি ও বৌমা শিখা জানাকে শনিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্যারাকপুর আদালতে এ দিন শিখাদেবী ও তাঁর ছেলের ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়। মাধবীদেবীর ছোট মেয়ের অভিযোগ, তাঁর মাকে যখন তাঁর ভাইপো মারে, তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন তাঁর বৌদি। ছোট মেয়ের আরও অভিযোগ, তাঁর ভাইপো নিজের বাবা দেবাশিস জানাকেও ইট দিয়ে মেরে গুরুতর জখম করেছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বৃদ্ধার দোতলা বাড়ি-সহ পাঁচ কাঠা জমি নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়ার জন্য শিখাদেবী ও তাঁর ছেলে মাধবীদেবীর উপরে চাপ দিতেন। দেবাশিসবাবু, মাধবীদেবী তা চাইতেন না। এ নিয়ে নিত্য দিনই শিখাদেবী ও তাঁর ছেলের সঙ্গে দেবাশিস, মাধবীদেবীর ঝগড়া লেগে থাকত।
মাধবীদেবীর ভাড়াটে ঝুমা মণ্ডল পুলিশকে জানান, শুক্রবার সকাল ছ’টা নাগাদ প্রথমে দেবাশিসবাবুর সঙ্গে তাঁর ছেলের বচসা বাধে। বচসা রাস্তায় গড়ায়। দেবাশিসবাবুর বুকে ও মুখে ইট ছুড়ে মারে ছেলে। বাড়ির সদর দরজায় তখন বসেছিলেন মাধবীদেবী। এক সময় নাতি ঠাকুরমাকে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, তিনি সম্পত্তি লিখে দেবেন কি না। বৃদ্ধা লিখে দিতে অস্বীকার করলে আচমকাই রাস্তা থেকে চেলা কাঠ তুলে ঠাকুরমার মাথায় আঘাত করে সে।
প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলে দেবাশিসকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদবাড়ি লেনে ছোট মেয়ে সোমা প্রামাণিকের শ্বশুরবাড়ি পৌঁছন মাধবীদেবী। মা ও দাদাকে নিয়ে বরাহনগর থানায় যান সোমা। সেখানে কিছুক্ষণ পরে হাজির হন শিখা ও তাঁর ছেলে। থানার ডিউটি অফিসারের কাছে দু’পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ জানালে, ডিউটি অফিসার দু’পক্ষকেই লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। কিন্তু কোনও পক্ষই তা দেয়নি। সোমা নিজের মা ও দাদাকে বরাহনগর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে মাধবীদেবী ও দেবাশিসবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় অসুস্থ মাধবীদেবীকে সাগর দত্ত মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি। রাতে সোমা এফআইআর দায়ের করেন ভাইপো ও বৌদির বিরুদ্ধে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বাড়ি-সহ পাঁচ কাঠা জমি ছাড়াও বরাহনগর, নিয়োগী পাড়ায় মাধবীদেবীর আরও কিছু জমি রয়েছে। কয়েক বছর আগে ছোট মেয়ে সোমাকে মাধবীদেবী এক কাঠার কিছু বেশি একটি জমি দেন। তা নিয়ে শাশুড়ি ও বৌমার প্রায়ই বচসা হত। পুলিশ আরও জেনেছে, দেবাশিসবাবুর তেমন রোজগার নেই। বাড়িতে ছ’ঘর ভাড়াটে। সেই ভাড়ায় জানা পরিবারের সংসার চলত। কিছু দিন আগে মাধবীদেবী বৌমাকে বলেছিলেন, এক ভাড়াটের টাকা তাঁকেই দিতে। তা নিয়েও বচসা হয়েছিল। পুলিশ জানায়, মাধবীদেবীর স্বামী ২০০৯ সালে মারা গিয়েছেন। তাঁর এক ছেলে ও তিন মেয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy