Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বিমানে আসনের নীচে সওয়া কোটির সোনা

কাপড়ের মোড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ৪০টি বিস্কুট। সোনার। মোড়কের উপরে কালো রঙের প্লাস্টিকের আস্তরণ। বিমানের আসনের তলায় যেখানে ‘লাইফ জ্যাকেট’ রাখা থাকে, সেখানে এমন ভাবে প্যাকেটটি রাখা হয়েছিল যে, অন্য যাত্রী বা বিমানসেবিকাদের নজরে আসার কথাই নয়। বিমান পরিষ্কার করতে গিয়ে একটি আসনের তলা থেকে কালো রঙের প্লাস্টিকের একটি কোনা উঁকি মারতে দেখেন এক সাফাইকর্মী। টান মারতেই বেরিয়ে পড়ে চার কিলোগ্রাম ৬০০ গ্রাম ওজনের ওই প্যাকেট।

উদ্ধার হওয়া সোনা। রবিবার বিমানবন্দরে।  —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া সোনা। রবিবার বিমানবন্দরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪১
Share: Save:

কাপড়ের মোড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ৪০টি বিস্কুট। সোনার। মোড়কের উপরে কালো রঙের প্লাস্টিকের আস্তরণ।

বিমানের আসনের তলায় যেখানে ‘লাইফ জ্যাকেট’ রাখা থাকে, সেখানে এমন ভাবে প্যাকেটটি রাখা হয়েছিল যে, অন্য যাত্রী বা বিমানসেবিকাদের নজরে আসার কথাই নয়। বিমান পরিষ্কার করতে গিয়ে একটি আসনের তলা থেকে কালো রঙের প্লাস্টিকের একটি কোনা উঁকি মারতে দেখেন এক সাফাইকর্মী। টান মারতেই বেরিয়ে পড়ে চার কিলোগ্রাম ৬০০ গ্রাম ওজনের ওই প্যাকেট। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ওই পরিমাণ সোনার বাজারদর এক কোটি ২৫ লক্ষ টাকা।

রবিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমান বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় আসে। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পরে শুরু হয় সাফাই পর্ব। তখনই পাওয়া যায় ওই প্যাকেট। কলকাতা থেকে বিমানটির ডিমাপুর যাওয়ার কথা ছিল। সেটি আটকে যায়। আসেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ)-র জওয়ানেরা। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই প্যাকেটে কোনও বিস্ফোরক নেই। তার পরে ছেড়ে যায় বিমান। স্বর্ণগর্ভ প্যাকেটটি তুলে দেওয়া হয় বিমানবন্দরের শুল্ক দফতরের হাতে। ঠিক এক বছর এক মাস আগে, ২০১৩ সালের নভেম্বরে পটনা থেকে কলকাতায় নামার পরে জেট এয়ারওয়েজের একটি বিমানের শৌচাগারে লুকোনো একটি প্যাকেট পাওয়া গিয়েছিল। সেই প্যাকেটে ছিল ২৪ কিলোগ্রাম সোনা। তদন্তে জানা যায়, সেই বিমানটি আগের দিন দুবাই থেকে উড়ে মুম্বই এসেছিল।

রবিবার এয়ার ইন্ডিয়ার যে-বিমানে সোনা পাওয়া গিয়েছে, সেটিও শনিবার দুবাই থেকে উড়ে গোয়ায় পৌঁছয়। সে-দিনই সেটি গোয়া থেকে চলে যায় বেঙ্গালুরু। রাতে বিমানটি বেঙ্গালুরুতেই ছিল। এ দিন সকালে সেটি কলকাতায় আসে। প্রাথমিক ভাবে শুল্ক অফিসারদের সন্দেহ, দুবাই থেকে কোনও যাত্রী ওই সোনা বিমানে তুলে দিয়ে থাকতে পারে। এক অফিসারের কথায়, “যে-ভাবে প্যাকেটটি আসনের তলায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, তাতে মনে হয়, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সংশ্লিষ্ট যাত্রী নিজে সোনা নিয়ে নামতে চাননি। মনে হচ্ছে, যাঁরা বিমান সাফ করেন, তাঁদেরই কাউকে ওই সোনা আসনের তলা থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল।” তা হলে সেই সোনা কলকাতায় এল কী করে? গোয়াতেই তো নামিয়ে নেওয়ার কথা ছিল?

তদন্তকারীদের জল্পনা, হতে পারে গোয়ায় সেই সাফাইকর্মী কোনও কারণে কাজে আসেননি। হতে পারে, তাঁকে অন্য কোনও বিমান পরিষ্কার করতে পাঠানো হয়েছিল। আবার এমনটাও হতে পারে যে, সাফাইকর্মী ভয় পেয়ে যাওয়ায় আর সোনা নামাননি। বেঙ্গালুরুতে সারা রাত বিমানটি রাখা ছিল। মনে করা হচ্ছে, সেখানে বিমান সংস্থা কিংবা বিমানবন্দরের কারও উপরে সোনা নামিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব থাকলে তিনি সহজেই তা নামিয়ে আনতে পারতেন। কারণ, ইঞ্জিনিয়ারেরা বিমানের দরজা খোলা রেখেই অনেক রাত পর্যন্ত পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ করেন।

বিমানটির ১৩এ নম্বর আসনের তলায় মিলেছে ওই সোনা। দুবাই থেকে গোয়া, গোয়া থেকে বেঙ্গালুরু এবং বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় আসার পথে ওই আসনে তিন জন বসেছিলেন। শুল্ক অফিসারেরা তাঁদের তালিকা পেতে চাইছেন। দুবাই থেকে ওঠা ওই আসনের যাত্রী ছাড়াও বাকি দুই যাত্রীর সম্পর্কে তথ্য চান তাঁরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE