আট মাস আগে দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। বর্ধিত মজুরির অর্থ কলকাতা পুলিশের সদর কার্যালয় লালবাজারে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবু শহরের যানশাসনে কর্মরত সিভিক পুলিশ মজুরির সেই বর্ধিত অংশ হাতে পাচ্ছেন না। লালবাজারের এই আচরণে ক্ষুব্ধ পুরকর্তারা।
শহরে সিভিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবাশিস রায়কে চিঠি দিয়ে সম্প্রতি পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ জানিয়েছেন, সিভিক পুলিশকর্মীরা কম টাকায় কাজ করছেন। বর্ধিত হারে মজুরি না পেয়ে প্রাপ্য মাসোহারা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিক কলকাতা পুলিশ। বুধবার এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দেবাশিসবাবু বলেন, “খুব শীঘ্রই ওঁদের বকেয়া-সহ নতুন হারে মজুরি দেওয়া হবে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতায় প্রায় ১৬০০ সিভিক পুলিশ রোজ পথে নামেন। তাঁদের দৈনিক মজুরি ১৪১ টাকা। এঁদের বেতন হয় কলকাতা পুলিশের মাধ্যমে। এর মধ্যে ৮২৯ জনের মজুরি দেয় পুরসভা। প্রতি মাসে তারা মজুরির অর্থ পাঠিয়ে দেয় কলকাতা পুলিশের কাছে। বাকিদের মজুরি দেয় লালবাজারই। এই অবস্থায় গত অগস্ট মাসে পুরসভা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, তাদের অধীনে থাকা ৮২৯ জন সিভিক পুলিশের দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ২৩২ টাকা করা হয়েছে। ওই মাসের নতুন হারের মজুরি বাবদ ৪০ লক্ষ টাকা তারা লালবাজারে পাঠিয়ে দেয়। সেই টাকার মধ্যে বর্ধিত বেতনের অংশ এখনও পড়ে রয়েছে লালবাজারের কোষাগারে।
কলকাতা পুলিশের বক্তব্য, পুরসভা নতুন হারে মজুরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে আগেই। কিন্তু তাদের অধীন শহরের প্রায় অর্ধেক সিভিক পুলিশের জন্য ওই হারে মজুরি দেওয়ার জন্য এখনও অনুমোদন মেলেনি। একই কাজে নিযুক্ত সিভিক পুলিশদের দু’রকম মজুরি-কাঠামো হতে পারে না। তাই পুরসভার অধীন ৮২৯ জনের বর্ধিত মজুরি দেওয়া যাচ্ছে না। লালবাজারের এই বক্তব্য পুর কমিশনারকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার।
প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা পুলিশ অনুমোদন দিতে দেরি করছে বলে পুরসভার অধীন সিভিক পুলিশকর্মীরা কেন বঞ্চিত হবেন? পুরকর্তাদের বক্তব্য, গত পুজোর আগে তাদের অধীন সিভিক পুলিশদের বোনাস আগেভাগে দিয়ে দিয়েছিল লালবাজার। তখন তারা পুরসভার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করেনি। এখন তা হলে সেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন? এ নিয়ে সম্প্রতি পুর কমিশনারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সিভিক পুলিশকর্মীরা।
২০০৮ সালে কলকাতায় প্রথম সিভিক পুলিশ নিয়োগ শুরু হয়। তখন দৈনিক মজুরি ছিল ৮৯ টাকা। ২০০৯ সালে তা বেড়ে হয় ১৪১ টাকা। সিভিক পুলিশকর্মীদের বক্তব্য, গত পাঁচ বছর ধরে একই বেতন রয়েছে। অথচ এর মধ্যে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। তা ছাড়া, দৈনিক মজুরির ক্ষেত্রে শ্রম দফতরের নিয়মও মানা হচ্ছে না। দেরিতে হলেও পুরসভা বর্ধিত বেতন অনুমোদন করায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন সিভিক পুলিশরা। এখন তা-ও না মেলায় ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে তাঁদের মধ্যে বলে সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy