Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শঙ্করের দুষ্কর্মেই শেষ হল কর্মকার পরিবার

জমির দালালি থেকে জীবন শুরু করে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রোমোটারির পেশায়। দু’হাতে টাকা আয়ের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যান অসংযমী জীবনযাত্রায়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ধনী ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা সেই শঙ্কর কর্মকারের পরিবার যে এমন ভাবে শেষ হয়ে যাবে, তা অবশ্য ভাবতে পারছেন না হরিনাভির বাসিন্দারা।

স্ত্রী পৌলমী ও ছেলে অরিত্রের সঙ্গে শঙ্কর। পারিবারিক সংগ্রহ থেকে।

স্ত্রী পৌলমী ও ছেলে অরিত্রের সঙ্গে শঙ্কর। পারিবারিক সংগ্রহ থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৪
Share: Save:

জমির দালালি থেকে জীবন শুরু করে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রোমোটারির পেশায়। দু’হাতে টাকা আয়ের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যান অসংযমী জীবনযাত্রায়।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ধনী ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা সেই শঙ্কর কর্মকারের পরিবার যে এমন ভাবে শেষ হয়ে যাবে, তা অবশ্য ভাবতে পারছেন না হরিনাভির বাসিন্দারা। পুলিশের অনুমান, ব্যবসায় দেনার দায়ে ডুবে ছিলেন শঙ্কর। পাশাপাশি, একই সঙ্গে দু’টি পরিবার থাকায় বাড়ছিল মানসিক অশান্তিও। এর থেকে রেহাই পেতেই তিনি এমন নৃশংস পথ বেছেছেন বলে ধারণা পুলিশের।

পুলিশ জেনেছে, ব্যবসার সূত্রে জমি ও ফ্ল্যাট পাইয়ে দেবেন বলে অনেকের থেকে অগ্রিম বাবদ কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন শঙ্কর। কিন্তু জমি বা ফ্ল্যাট দিতে পারেননি তিনি। ফলে প্রায়ই হরিনাভির ফ্ল্যাটে নানা লোকজন এসে হুমকি দিতেন তাঁকে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ইদানীং তাই হরিনাভির বাড়ি ছেড়ে গরফাতেই বেশি থাকতেন শঙ্কর।

ব্যবসাক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্কটের কথা কার্যত স্বীকার করেছেন শঙ্করের ভাই শুভঙ্কর ওরফে কিঙ্করও। তিনি বলেন, “এ সব আমরাও শুনেছিলাম। তবে দাদা নিজে আমাদের কিছু বলেননি।”

স্থানীয়রা জানান, হরিনাভি এলাকাতেই জন্ম শঙ্করের। তাঁদের আর্থিক অবস্থা সচ্ছ্বল ছিল না। কোনও মতে স্কুল পেরিয়েই জমির দালালিতে নেমে পড়েছিলেন শঙ্কর। জমির কারবার করতে করতেই হরিনাভি এলাকায় প্রোমোটিং ব্যবসায় হাত লাগান তিনি। বাড়তে থাকে আয়।

পুলিশ জেনেছে, বছর ষোলো আগে স্থানীয় বাসিন্দা মনোজ দেবের মেয়ে পৌলমীর সঙ্গে বিয়ে হয় শঙ্করের। হরিনাভিতেই ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। সেখানেই একটি জমি-বাড়ির কারবারের অফিস খুলেছিলেন শঙ্কর। পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যবসা বহরে বাড়তে থাকায় রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে অফিস খোলেন তিনি।

স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, একাধিক মহিলার সঙ্গে মেলামেশা করতেন শঙ্কর। নিয়মিত মদ্যপানও করতেন। বাইপাসের কাছে এক পানশালায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর। পুলিশ জেনেছে, নানা মহলে মেলামেশার সূত্রেই বছর চারেক আগে রোহিণী চক্রবর্তী নামে বরাহনগরের এক মহিলার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। পরে রোহিণীর সঙ্গেই গরফার ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। রোহিণীর ভাই সঞ্জয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানিয়েছে, একটি গানের অনুষ্ঠানে রোহিণীর সঙ্গে শঙ্করের আলাপ। ভালবেসেই তাঁরা এক সঙ্গে থাকতেন। তবে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল কি না, জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। ইয়াশি শঙ্কর ও রোহিণীর সন্তান বলেই রোহিণীর পরিবারের দাবি। তদন্তকারীরা জেনেছেন, পানশালার বেশ কয়েক জন গায়িকার সঙ্গে শঙ্করের মেলামেশা ছিল। এই ঘটনার পিছনে শঙ্করের অসংযমী জীবন এবং একাধিক মহিলার সঙ্গে মেলামেশাকেই দায়ী করেছেন পৌলমীর বাবা। তিনি বলেন, “এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি চলছিল। তাতেই মেয়ে ও নাতিকে খুন হতে হয়েছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, দুই পরিবার নিয়ে অশান্তির কথা জানান রোহিণীর ভাইও। তবে দিদি তাঁদের বিশেষ কিছু বলতেন না বলেই তাঁর দাবি।

রোহিণী যে শঙ্করের অসংযমী জীবন নিয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন, তা শঙ্করের মৃতদেহ দেখেই বোঝা গিয়েছে বলে মত তদন্তকারীদের। পুলিশ জানায়, যে ভাবে তাঁর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে, তাতে রোহিণীর এই মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে পুরুষের অসংযমী জীবন নিয়ে সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে মহিলারা এ রকম কাণ্ড করেন। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালও বলেন, “পুরুষের হাতে একটানা নিগৃহীত হতে থাকলে এমন মনোভাব মহিলাদের মধ্যে আসতে পারে।”

অন্য বিষয়গুলি:

shankar karmakar murder harinavi garfa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE