অঙ্কন: সুমিত্র বসাক
ঠিক যেন চেনা হিন্দি কমেডি ছবির ক্ল্যাইম্যাক্স দৃশ্য!
রাস্তা দিয়ে পাঁইপাঁই করে দৌড়চ্ছেন এক যুবক। হাঁচোড়-পাঁচোড় করে কাদা মাড়িয়ে তাঁর পিছু পিছু দৌড়চ্ছেন বছর তিরিশের এক বাস কন্ডাক্টর। কাদা ঠেলে ছুটতে গিয়ে হাওয়াই চটিটাই গেল ছিঁড়ে!
তাতেও দমলেন না ওই কন্ডাক্টর। ছেঁড়া চটি বগলদাবা করেই ফের দৌড় শুরু। কিন্তু খালি পায়ে কাঁহাতক আর দৌড়নো যায়! দৌড়তে দৌড়তেই নজরে এল রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অটো। কিন্তু সে তো ভর্তি। তবে...?
“দাদা একটু তুলে নিন।”কাপড়চোপড়ে কাদামাখা বাস কন্ডাক্টরের কাতর আর্জি ফেলতে পারলেন না অটোচালকও। তাই নিয়ম ভেঙে সামনের সিটে দু’জন যাত্রী তুললেন তিনি। শুরু হল অটো-দৌড়।
তাতেও কি পারা যায়! সামনের যুবক তখন নিজেকে প্রায় ‘টপ গিয়ারে’ তুলে ফেলেছেন। কিন্তু মরিয়া বাস কন্ডাক্টরও। অটোয় ঝুলতে ঝুলতেই ‘পাকড়ো, ধরুন, ধর ব্যাটাকে’ বলে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন। চেঁচাচ্ছেন অটোর চালক ও সহযাত্রীরাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ভিড়ের মধ্যে তখন প্রায় গা-ঢাকা দিয়ে দিয়েছেন ওই যুবক।
গত বৃহস্পতিবার ঠাকুরপুকুর ৩-এ বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখে রাস্তার লোকজন অবশ্য কিছুটা চমকেই উঠেছিলেন। চমকে উঠেছিলেন কর্তব্যরত এক ট্রাফিক কনস্টেবলও। অটো থামিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানতে পারেন, সল্টলেকের ওয়েবেল থেকে জোকাগামী একটি এসি বাসে উঠেছিলেন এক যুবক। কন্ডাক্টর পাঁচ-ছ’বার ভাড়া চাইলেও ‘দিচ্ছি, দেব’ করে আর দেননি। বাসের চাকা যত গড়িয়েছে, যাত্রীর সংখ্যাও তত কমেছে। ক্লান্তির চোটে শেষ দিকে একটু আলগা দিয়েছিলেন কন্ডাক্টর।
সেই সুযোগেই ঠাকুরপুকুর ৩-এ বাসস্ট্যান্ড আসতেই গুটি গুটি বাস থেকে নেমে পড়েন ওই যুবক। তার পরেই হনহনিয়ে হাঁটা দেন। মিনিট খানেক পরেই ব্যাপারটা ঠাহর করেন কন্ডাক্টর। তার পরেই বিনা টিকিটের ওই যুবকের পিছু নেন তিনি।
পুলিশ তো ঘটনাটা জানল। কিন্তু ওই যুবকের হল কী?
ওই ট্রাফিক কনস্টেবল ব্যাপারটা শুনেই ওয়্যারলেসে খবর পাঠান তাঁর সামনের মোড়ে থাকা সহকর্মীকে। তা শুনেই ফের অটোয় চেপে ওই মোড়ের দিকে রওনা দেন কন্ডাক্টর। গিয়ে দেখেন, ওই যুবককে পাকড়াও করেছে পুলিশ। দেখেই লাফিয়ে গিয়ে কলার পাকড়ে ধরেন তিনি। বলেন, “ওয়েবেল থেকে ঠাকুরপুকুরের ভাড়া ৪০ টাকা। এ বার দাও দিকি।”
যুবক বুঝতে পারেন, তিনি যেমন বুনো ওল, কন্ডাক্টরও তেমনই বাঘা তেঁতুল। মানে মানে ক্ষমা চেয়ে পকেট থেকে ৪০ টাকা বার করে দেন তিনি। কন্ডাক্টরের চোখমুখই তখন বদলে গিয়েছে! দেখে মনে হচ্ছে, অলিম্পিকে ১০০ মিটারে উসেইন বোল্টকে সদ্য হারিয়েছেন তিনি।
৪০ টাকার জন্য এমন দৌড়?
ঠাকুরপুকুর বাজারের বাসিন্দা অন্তু চট্টোপাধ্যায় নামে ওই কন্ডাক্টরের প্রতিক্রিয়া, “ভাড়া আদায়ের জেদ চেপে গিয়েছিল আমার। তাই এমন দৌড়েছিলাম।” অন্তুবাবুর দৌড় আর জেদের বহর দেখে অটোচালক অবশ্য তাঁর প্রাপ্য ভাড়ার কথাই তোলেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy