ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দল যাতে সভা করতে না পারে, পাকাপাকি ভাবে এ বার সেই ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হল কলকাতা পুরসভা!
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ২১ বছর আগে সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। সেই ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’কে স্মরণ করেই প্রতি বার ২১ জুলাই তৃণমূল সেখানে সভা করে। ভবিষ্যতে ওই বিশেষ দিনে তৃণমূল ছাড়া বছরের অন্য কোনও দিন কেউই যাতে সেখানে সভা করতে না পারে, তার জন্য ‘প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হবে।
শুধু তৃণমূলের জন্য ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের রাস্তার বন্দোবস্তই নয়, নিজেদের মতো করে বামেদের সমাবেশ-স্থল বেছে দেওয়ার চেষ্টাও করতে চাইছে পুরসভা! তাদের বক্তব্য, খাদ্য আন্দোলনের স্মরণে ওই বিশেষ দিনে (৩১ অগস্ট) সিদো-কানহো ডহরে সভা করা যাবে। আর ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন পালন করা যাবে রেড রোডে নেতাজির মূর্তির পাদদেশে। অর্থাৎ তালিকায় কংগ্রেস এবং বিজেপি নেই!
পুরসভার এমন উদ্যোগ নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন তুলেছে সব বিরোধী দল। প্রথমত, সিদো-কানহো ডহরে (আগেকার এসপ্ল্যানেড ইস্ট) বহু কাল যাবৎ রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ। সেখানে সভার অমুমতির প্রশ্ন আসছে কী করে, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। নেতাজির জন্মদিনও কোনও রাজনৈতিক সভা নয়। তা ছাড়াও প্রশ্ন উঠছে, শুধু বামেদের জন্য নিজেদের মতো দু’টি স্থান বেছে নিয়ে তৃণমূলের পুরবোর্ড কি কোনও রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে? রাজ্য বিজেপি-র সম্পাদক রীতেশ তিওয়ারি যেমন সরাসরিই বলেছেন, “বিজেপি-কে রুখতে তৃণমূল এবং সিপিএমের অ-লিখিত জোট এর থেকে স্পষ্ট! সিপিএমের সভা করার জায়গাও এ বার তৃণমূল ঠিক করে দিচ্ছে! ভিক্টোরিয়া হাউসে অমিত শাহের সভা নিয়ে যেমন হয়েছিল, পুরসভা এই রকম কোনও কালা কানুন করলে তার বিরুদ্ধেও আমরা আইনি পথে যাব।”
সদ্যই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপি’র সভায় সম্মতি না দিতে চেয়ে আদালতের লড়াইয়ে হেরে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল পুরসভাকে। এ বার ওই জায়গা ব্যবহারে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দল যাতে সুযোগই না পায়, সেই ব্যাপারে একটি প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিতে চলেছে পুরসভা। মেয়রের বক্তব্য, “আদালতের নির্দেশে ওরা (বিজেপি) অনুমতি পেয়েছিল। এ বার পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে ওই প্রস্তাব নিয়ে পুর অধিবেশনে পাশ করাব। আইনসভার সিলমোহর থাকবে ওই সিদ্ধান্তে।”
মেয়রের এমন সিদ্ধান্ত অবশ্য মানতে নারাজ বামেরাও। তাঁদের প্রতি পুরভোটের আগে তৃণমূলের বোর্ড কি কোনও বার্তা দিল? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য, “এই অদ্ভুত সিদ্ধান্তের বার্তা একটাই। নিজেদের কাজকে নায্যতা দেওয়া এবং তার জন্য বিরোধীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা!” প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেছেন, “এই সরকার যত বিপাকে পড়ছে, তত অন্যদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। গণতন্ত্রে সকলের অধিকার সমান। পুরসভা এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিলে আমরা রাজনৈতিক এবং আইনি পথে মোকাবিলা করব।”
সিপিএমের আর এক নেতা রবীন দেব জানাচ্ছেন, ২০০৩ সালের ২৯ অক্টোবর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কলকাতার সভা-সমাবেশের স্থান নির্দিষ্ট করতে চেয়েছিলেন। তৃণমূল সেই সর্বদল বৈঠক বয়কট করেছিল। পরে ক্ষমতায় এসে মমতাও এক বার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার পরে কিছু এগোয়নি। রবীনবাবুর বক্তব্য, “পুরসভার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ারই নেই! এখানে পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরের অনুমতি লাগে। পুরসভা বড়জোর তাদের অধীনে পার্ক বা জায়গায় সভার অনুমতি এবং তার জন্য ফি ধার্য করতে পারে।” তিনি জানাচ্ছেন, খাদ্য শহিদ দিবসে বাম নেতারা স্মারক স্তম্ভে মালা দেন রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। সভা সিদো-কানহো ডহরে করতে চাওয়ার প্রশ্নই নেই।
পুরসভার মাসিক অধিবেশনে এ দিন কংগ্রেস কাউন্সিলর মালা রায়ের প্রস্তাব ছিল, পুরসভার অন্তর্গত রাস্তায় ও পার্কে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের জন্য পুরসভার অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হোক। পার্ক সার্কাস ময়দানে রাহুল গাঁধীর সভায় অনুমতি না দেওয়া এবং ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপি-র সভা নিয়ে কলকাতা পুর-প্রশাসনের অনিচ্ছার কথাও তোলেন মালাদেবী। তাঁর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মেয়র শোভনবাবু বলেন, “বিচারসভা ও আইনসভার মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘ কালের। মানুষের জন্য আইন। পুরসভারও একটা এক্তিয়ার আছে।” পরে নিজের ঘরে বসে মেয়র বলেন, “আমরা খুব শীঘ্রই ওই তিনটি জায়গায় অন্য কোনও দলকে সভা করতে অনুমতি দেব না। এক মাত্র তৃণমূল এবং বাম দল কেবলমাত্র বিশেষ দিনে বিশেষ জায়গায় সভা করতে পারবে।” যা শুনে মালাদেবীর বক্তব্য, “১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যুব কংগ্রেসের ডাকে মহাকরণ অভিযান হয়েছিল। সরকারি ভাবে কিন্তু সেটাই রেকর্ড আছে। তৃণমূলের তখন জন্মই হয়নি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy