চলছে ঝিল সাফাই। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
বিক্রমগড় ঝিল বাঁচাতে অবশেষে শুরু হল উন্নয়ন প্রকল্প। তিন পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পে সেজে উঠবে ঝিলটি। প্রথম পর্যায়ে দক্ষিণ কলকাতার বিজয়গড়-গল্ফগ্রিন এলাকায় এই বিশাল ঝিলের পাড় বাঁধানো হবে শাল-খুঁটি দিয়ে। এর জন্য কলকাতা পুরসভা বরাদ্দ করেছে ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। ঝিলের দখলদারদের পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করার প্রস্তাবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আপাতত শুরু হয়েছে ঝিলের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার কাজ। এর পরে প্রায় ১০ হাজার খুঁটি নিয়ে আসা হবে পাড় ঘেরার জন্য। প্রতিটির উচ্চতা এবং ব্যাস যথাক্রমে ১০ ফুট ও ৬ ইঞ্চি। কলকাতা পুরসভার ডিজি (প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট) সুব্রত শীল বলেন, “এই কাজ শেষ হতে প্রায় ১০ মাস লাগবে। এর পরে পর্যায়ক্রমে ঝিল-সংলগ্ন ফাঁকা জমিতে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হবে।
ঝিলের ধার ঘেঁষে টালি বিছানো পথ হবে। থাকবে বসার জায়গা ও আলোর ব্যবস্থা।”
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয় বিক্রমগড় ঝিল বাঁচানো আন্দোলন। ২০১২ সালে নথিভুক্ত হয় স্থানীয় জলাভূমি ও পরিবেশ কল্যাণ সমিতি। পরে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এলাকায় গিয়ে ঝিল বাঁচাতে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। শোভনবাবু বলেন, “বিক্রমগড় ঝিল নিয়ে হাজারো সমস্যা ছিল। আমরা পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্রমান্বয়ে সে সব কাটিয়ে কাজ শুরু করেছি।” পুরসভার ৯৩ ও ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এই ঝিলের আয়তন এক সময়ে ছিল ১৪ একর। ১০ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত বলেন, “বাম-আমলে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ঝিলের প্রায় ৬ একর দখল হয়ে গিয়েছে। এদের স্থানান্তরিত করে ঝিলের প্রকৃত আদল ফেরানো যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে।”
বিক্রমগড় জলাভূমি ও পরিবেশ কল্যাণ সমিতির সম্পাদক দীপক ভট্টাচার্য দাবি করেন, “সিপিএমের মদতপুষ্ট দখলদার রুখতে আমরা পুলিশের লাঠি খেয়েছি। মিথ্যে অভিযোগে হাজতে যেতে হয়েছে। দেরিতে হলেও আশার কথা, শুভশক্তির জয় হচ্ছে।” অন্য দিকে, পশ্চিম ঢাকুরিয়া আঞ্চলিক কমিটি এবং কাটজুনগর কলোনি কমিটির সদস্য স্থানীয় সিপিএম নেতা অম্বর রায়চৌধুরী এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের আমলেই ঝিল সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। রাজনৈতিক পালাবদল হলেও আমরা এই সংস্কারের ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। অথচ, তৃণমূলের ডাকা বৈঠকে আমি এসে কিছুটা অপমানিত হয়েছি। এখন ওঁরা সংস্কারের যে কমিটি করেছেন, তাতে আমাদের কোনও প্রতিনিধিই রাখেননি।”
ঝিলকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে দখলদার সরানো হবে কী ভাবে? সমিতি সূত্রে জানানো হয়েছে, এ ধরনের উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে এখন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরির জন্য অনুদান দিচ্ছে। ঝিলের এক ধারে আবাসন করে ঝিলের অন্তত পাঁচ একর দখলমুক্ত করা সম্ভব।
পুরসভার নথিতে দেখা যাচ্ছে, ঝিলের পাড় বাঁধাতে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৭ অগস্ট। আবেদনের মেয়াদ ছিল ২ সপ্তাহ। তাতে লেখা ছিল, ২৭০ দিনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু কেন তা হয়নি? সুব্রত শীল বলেন, “টেন্ডারে অন্তত তিন জন আবেদনকারী থাকার কথা। প্রথম টেন্ডারে কেউ আবেদন না করায় প্রথা মেনে ফের টেন্ডার ডাকা হয়। তখন আবেদন করে দু’জন। তাতে গৃহীত ঠিকাদারের স্বীকৃতি নিতে টেন্ডার কমিটি এবং মেয়র-পারিষদের বৈঠকে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। এই সব করতে গিয়ে অনেকটা সময় চলে গিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy