মেট্রোর পরে এ বার সরকারি বাস। ‘স্মার্ট কার্ড’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিল ‘কলকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন’ (সিএসটিসি)।
সিএসটিসি-র অধিকর্তা ভীষ্মদেব দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতাধীন ‘ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা আইটিএস প্রকল্পে এই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। তিনি জানান, মূলত এটি কেন্দ্রের প্রস্তাব। যে কারণে মোট খরচের তিন ভাগের এক ভাগ দেবে কেন্দ্র। বাকিটা রাজ্য সরকার দেবে বলেই জানান তিনি। ১৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে দরপত্র ডেকেছে নিগম।
কেমন হবে এই ব্যবস্থা?
ভীষ্মদেববাবু জানান, সিএসটিসি-র প্রতিটি বাসের দরজার কাছে একটি করে যন্ত্র থাকবে। বাসে উঠেই ওই মেশিনে স্মার্টকার্ডটি ছোঁয়াতে হবে যাত্রীকে (যাঁর কাছে স্মার্ট কার্ড রয়েছে)। গন্তব্যে পৌঁছে বাস থেকে নামার সময়ে কার্ডটি ফের ওই যন্ত্রে ছোঁয়ালে বেরিয়ে আসবে টিকিট। যাঁদের কাছে স্মার্ট কার্ড থাকবে না, তাঁদের ক্ষেত্রে বিকল্প কন্ডাক্টরের হাতে থাকা ইটিএম। তাতেও একই ধরনের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান অধিকর্তা।
নিগম সূত্রের খবর, এই ব্যবস্থায় যাত্রী এবং পরিবহণ নিগম, দু’তরফেরই সুবিধা হবে। কারণ হিসেবে এক আধিকারিক জানান, খুচরো নিয়ে প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাক্টরদের বচসা বেধে যায়। কখনও বা খুচরোর অভাবে কম ভাড়া নিয়েই যাত্রীদের ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু এই যন্ত্র থাকার ফলে সরাসরি কোনও টাকার লেনদেন হবে না। তেমনই খুচরো নিয়েও কোনও সমস্যা হবে না।
নিগম সূত্রের খবর, সিএসটিসি-র প্রতিটি ডিপো থেকেই নির্দিষ্ট টাকার অঙ্কের ওই স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া, নিগমের সঙ্গে যে সমস্ত ব্যাঙ্ক চুক্তিবদ্ধ হবে, সেগুলির কলকাতার সমস্ত শাখা থেকে কার্ড পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ওই স্মার্ট কার্ডের সাহায্যে প্রাপ্ত টিকিটের টাকা যাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে। স্মার্ট কার্ডের টাকা ফুরিয়ে গেলে ফের ‘রিচার্জ’ করা যাবে ব্যাঙ্কের শাখা এবং ডিপো থেকেও।
পাশাপাশি আইটিএস প্রকল্পে আরও দু’ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে দাবি ভীষ্মদেববাবুর। তিনি জানান, প্রত্যেকটি বাসের গতিবিধি নজরে রাখতে ‘রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং’ পদ্ধতি চালু করবে নিগম। এই পদ্ধতিতে বাস কখন কোথায় আছে, তা জানা যাবে কন্ট্রোল-রুম থেকে। পাশাপাশি বিভিন্ন রুটের কোন বাস কোথায় আছে, স্মার্টফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করেও তা অনায়াসে জেনে ফেলতে পারবেন যাত্রীরা।
নিগম সূত্রের খবর, কেন্দ্রের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দ্রুত শহরের পথে নামতে চলেছে নতুন ব্যবস্থার এই সমস্ত বাস। ভীষ্মদেববাবু বলেন, “প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সমস্ত ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে। আশা করি, যাত্রীরা এগুলির মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা পাবেন।” এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বাসযাত্রী সমিতির সভাপতি ধনঞ্জয় দত্ত বলেন, “স্মার্ট কার্ডের বিষয়ে বহু আগে নিগমকে বলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তারা যে এই ব্যবস্থা চালু করছে, তাতে আমরা খুশি।” তিনি জানান, নিগমগুলিকে বারংবার চেকিং ব্যবস্থা ঠিক করতে বলা হয়েছিল। কারণ তারা লোকসানের কথা বলত বটে, কিন্তু কারণ বোঝার চেষ্টা করত না। তবে স্মার্ট কার্ড চালু হলেও চেকিং ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। অন্যথায় এত কোটি টাকা নিয়োগ করেও হাল ফেরানো যাবে না। ধনঞ্জয়বাবু জানান, জেএনএনইউআরএম-এর বাসে ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ রয়েছে। আরও আগে কলকাতায় এই ব্যবস্থা শুরু করা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।
তবে কলকাতায় বাসে যে রকম ভিড় হয়, তাতে স্মার্ট কার্ড পরিষেবা কতটা ভাল ভাবে চালু করা যাবে তা নিয়ে সন্দিহান পরিবহণ দফতরের একাংশ। যদিও সিএসটিসি-কর্তৃপক্ষের দাবি, কোনও অসুবিধা হবে না। এই ব্যবস্থা ঠিক ভাবেই চলবে। তবে যাত্রীরা বলছেন, শহরে বেসরকারি বাসের তুলনায় সিএসটিসি-র বাস সংখ্যায় অনেক কম। ফলে স্মার্ট কার্ড যদি বেসরকারি বাসেও চালু করা যেত, তবেই নতুন ব্যবস্থার সুফল পুরোপুরি পাওয়া যেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy