সাজিয়ে তোলা হচ্ছে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি। ছবিটি তুলেছেন রাজকুমার মোদক।
এক গাছ থেকে আরেক গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে রং-বেরঙের পাখি। তাদের ডাকে চার দিক মুখরিত। রাজার হালে হলদে-কালো ডোরাকাটা রাম ও শ্যামের পায়চারি। জঙ্গল চিরে বেরিয়ে গিয়েছে বুড়ি তোর্সা। তার গা জুড়ে শ্যাওলা।
প্রবল গ্রীষ্মেও রূপ হারায় না দক্ষিণ খয়েরবাড়ি। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এবং চিতাবাঘ উদ্ধার কেন্দ্রের ওই রূপ আরও ঝকঝকে করে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে বন উন্নয়ন নিগম এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে তা নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। কটেজ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা পাওয়ার জন্য প্রত্যেক ঘরে বসানো হচ্ছে ইনভার্টার। শীত কালে গরম জলের জন্য বসছে গিজারও। রং করা হচ্ছে চার দিক। এলাকা ঘিরে উঠবে পাঁচিল।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলি নতুন করে সাজিয়ে তুলছি। দক্ষিণ খয়েরবাড়িতেও কাজ হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে তা পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।” রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিভিন্ন জায়গাতে ইতিমধ্যে কটেজ সংস্কার নতুন কটেজ তৈরি করা হচ্ছে। পর্যটকরা যাতে সব রকম সুবিধা পান। তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধায় পড়তে না হয়, সে দিকে তাকিয়েই কাজ করা হচ্ছে।”
বন্যপ্রাণী বিভাগের কোচবিহার রেঞ্জের ডিএফও জেবি ভাস্কর জানান, ওই কাজ করার জন্য ইতিমধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তিনি বলেন, “সংস্কারের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। দ্রুত সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করছি।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই দক্ষিণ খয়েরবাড়ি পর্যটকদের কাছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্র আকর্ষণের বিষয়। গরমের সময়েও প্রতিদিন ওই কেন্দ্রে ৫০০ পর্যটক ভিড় করেন। স্থানীয় তো বটেই কলকাতা থেকেও প্রচুর পর্যটক সেখানে যান। শীতকালে তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
নানা সুবিধা দিতে ২০০৫ সালে ওই কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয় তিনটি কটেজ। এ ছাড়া একটি ডরমেটরির ব্যবস্থাও রয়েছে। কটেজগুলি ডবল বেডের। ডরমেটরিতে এক সঙ্গে ১৪ জন লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তোর্সা নদীর ঠিক ধার ঘেঁষেই সেগুলি তৈরি করা হয়। দীর্ঘদিনের অব্যবহারে সে সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। পলেস্তরা খসে পড়েছে। তা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়। অনেকেই অভিযোগ জানাতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, শীত কালে গরম জলের ব্যবস্থা ছিল না সেখানে। এক বার বিদ্যুৎ গেলে অন্ধকারে থাকতে হত। বন দফতরের কর্মীরা জানান, এ বারে ওই অবস্থার আমূল পরিবর্তন করা হচ্ছে। ঘরগুলি নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। করা হচ্ছে রং। ঘরে বসানো হচ্ছে গিজার, ইনভার্টার। শুধু কটেজ নয়, কটেজ সংলগ্ন নৌকাঘাটও রং করা হচ্ছে। সেখান থেকে বুড়ি তোর্সায় বোটিং করানো হয়। ওই পর্যটন কেন্দ্রে বর্তমানে তিনটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এবং সাতটি চিতাবাঘ রয়েছে। জঙ্গল জুড়ে রয়েছে নানা পাখি। সেগুলি দেখতে মানুষ ভিড় করছেন প্রতিদিন।
কর্মীরা জানান, তিনটি বাঘের একটির নাম রাম, একটি শ্যাম এবং অন্যটি রাজা। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে সব রকম চেষ্টা করছি। দীর্ঘদিন দক্ষিণ খয়েরবাড়ির দিকে কেউ নজর দেয়নি। তা সুন্দর করে গড়ে তোলা হচ্ছে। পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy