ভারতী ঘোষ। ফাইল চিত্র।
তিনশো পঁচাত্তর গ্রাম সোনা। আর সেই সোনা নোটবন্দির সময়ে, বাতিল নোটে বেশি টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে দাসপুরের বাসিন্দা চন্দন মাঝি এই অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েই প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ, তাঁর স্বামী, পাঁচ পুলিশ কর্মী-সহ মোট ন’জনের বিরুদ্ধে জুন মাসের শেষে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিআইডি। এ বার সেই সোনার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে তদন্ত চাইলেন এই মামলারই এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী!
সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় সেই সোনার উৎস নিয়ে তদন্ত করার আর্জি জানিয়ে মুম্বইয়ের লোকমান্য তিলক মার্গ থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন ভারতী ঘোষ মামলার সাক্ষী। এই সাক্ষী আবার এই মামলায় গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে এই থানা থেকেই শনিবার রাতে সিআইডিকে ধোঁকা দিয়ে চম্পট দিয়েছে ভারতী ঘোষের ছায়াসঙ্গী সুজিত মণ্ডল।
এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে, দাসপুরের চন্দন মাঝি আদালতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, বিমল ঘড়াই নামে এক ব্যবয়সায়ী তাঁকে এই সোনা কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাবে রাজিও হন চন্দন। কিন্তু চন্দনের অভিযোগ, সোনা হাতবদল হওয়ার পর টাকা পাননি তিনি। থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে অভিযোগও নেওয়া হয়নি। উল্টে পুলিশই তাঁকে হুমকি দিয়েছে। এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে সিআইডি। চার্জশিটে তদন্তকারী সংস্থা দাবি করেছে, তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ এই গোটা ষড়যন্ত্রের পিছনে। সেই অনুযায়ী— ভারতী, তাঁর দেহরক্ষী তথা পুলিশকর্মী সুজিত মণ্ডলকে তোলাবাজি, প্রতারণা, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং ষড়যন্ত্রের জন্য অভিযুক্ত করেছে সিআইডি তাঁদের চার্জশিটে।
ভারতীর প্রাক্তন দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন
মনীষীদের পাশে তৃণমূলের নিহত নেতা নান্টুর মূর্তি! জোর বিতর্ক
তাঁদের চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে— ২০১৬ সালের ১২ নভেম্বর মুম্বই থেকে এই সোনা কিনেছিলেন চন্দন। চার্জশিটে সোনা কেনার একটি রসিদও যুক্ত করেছেন তদন্তকারীরা। সেই রসিদ অনুযায়ী— মুম্বইয়ের ১৬ নম্বর বান্দ্রাওয়ালি বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলার ৪১ নম্বর ঘরের পি এস জুয়েলার্স থেকে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকায় সোনার গয়না কেনেন চন্দন। সোনা বিক্রেতা সংস্থার ঠিকানাও রয়েছে রসিদে—খান্দেয়াওয়াড়ির দাদি শেঠ আগিয়ারি লেন।
কিন্তু সত্যিই কী ওই সোনা সোজা পথে কেনা হয়েছিল?
শনিবার সেই প্রশ্নটাই নিজের অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন মামলার ওই সাক্ষী। কারণ তাঁর সন্দেহ, ওই সোনা নাকি আদৌ কেনা হয়নি। শনিবার মুম্বইয়ের লোকমান্য তিলক থানা সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে প্রাথমিক তদন্তও শুরু করেছে।
আরও পড়ুন
জঙ্গলমহলে পোস্টার, বিজেপি যোগের নালিশ
সিআইডির চার্জশিটে, চন্দন এত টাকার সোনা কেন কিনলেন এবং সেই টাকা কোথায় পেলেন সেই বিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই। এলাকার মানুষ জানেন, চন্দন মুম্বইয়ে সোনার গয়নার কারখানায় কাজ করতেন। মুম্বই থেকে ফিরে এখন বাড়ির সামনে ঠেলাতে রোল-চাউমিন বিক্রি করেন। সেই চন্দন হঠাৎ করে এত সোনা কিনলেন কেন, বা তাঁর টাকার উৎস কী, সে বিষয়েও নীরব সিআইডির চার্জশিট।
সূ্ত্রের খবর, মুম্বই পুলিশও প্রাথমিক তদন্ত করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি তথ্য পেয়েছেন। চন্দনের আদালতে পেশ করা পি এস জুয়েলার্সের রসিদের কোনও নকল (কপি) নেই। রসিদের একটি অংশ বিক্রেতার জন্য নির্দিষ্ট। সেই কপি যেমন পাওয়া যায়নি, তেমনি এত বড় অঙ্কের সোনা কিনলে রসিদে প্যান নম্বর থাকা আবশ্যিক। সেই নম্বরও নেই রসিদে। সিআইডির শীর্ষ কর্তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।
তবে সিআইডি সূত্রের খবর, এই অভিযোগ মুম্বইতে হতে চলেছে, সেই তথ্য শুক্রবারই পেয়েছিলেন সিআইডির কর্তারা। তাঁরা এটাও জানতেন, অভিযোগকারীর সঙ্গে থাকবেন এই মামলায় ফেরার সুজিত মণ্ডল। সেই অনুযায়ী মুম্বই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। সুজিত পৌঁছতেই খবর পাঠানো হয় সিআইডি দফতরে। তখন বড়জোর সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাত একটার পরে থানায় পৌঁছন সিআইডির আধিকারিকরা। ততক্ষণে সুজিত পগারপার। এ দিকে যে অভিযোগ জানানোর জন্য সুজিত নিজে যেচে অভিযোগকারীকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন, এবং সেই অভিযোগও নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে। সিআইডির আধিকারিকরা সুজিতের খোঁজ চালাচ্ছেন মুম্বইয়ে, কিন্তু তার মধ্যে একটাই প্রশ্ন— ‘চোরাই’ সোনার বাটপাড়ি নিয়েই কি তবে এত দিন তদন্ত করল সিআইডি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy