Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Keshpur

পুরনো অস্ত্র নষ্টের তোড়জোড় কেশপুরে

কেশপুরে অবশ্য সম্প্রতি নতুন করে হারানো জমি ফিরে পাচ্ছে বলে দাবি করেছে সিপিএম। ফলে নতুন সংঘাতের বাতাবরণও তৈরি হচ্ছে। ছোটখাট ঝামেলা যে হচ্ছে না, তা নয়।

অশান্ত কেশপুরে এক সময় এ ছিল চেনা দৃশ্য। ফাইল চিত্র

অশান্ত কেশপুরে এক সময় এ ছিল চেনা দৃশ্য। ফাইল চিত্র

বরুণ দে
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:০৩
Share: Save:

গত শতকের শেষ কয়েক বছরে কেশপুর হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতির সব থেকে উত্তপ্ত এলাকা। সিপিএম-তৃণমূলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিয়মিত ব্যবহার হত দেশি আগ্নেয়াস্ত্র। পুলিশি তল্লাশিতে সে সব অস্ত্র উদ্ধারও হয়েছে বহু। এ বারে দাবিদারহীন সেই অস্ত্রের ভান্ডার নষ্ট করতে চেয়ে মহকুমা প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় অনুমতি চাইল কেশপুর থানা। কারণ, থানার বক্তব্য, মালখানায় আটকে পড়ে থাকা এই সব অস্ত্র হয়ে উঠেছে তাদের মাথাব্যথার কারণ।

কেশপুরে অবশ্য সম্প্রতি নতুন করে হারানো জমি ফিরে পাচ্ছে বলে দাবি করেছে সিপিএম। ফলে নতুন সংঘাতের বাতাবরণও তৈরি হচ্ছে। ছোটখাট ঝামেলা যে হচ্ছে না, তা নয়। তবে এখনও ১৯৯৮-২০০০ সালের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সে সময়, বিশেষ করে ২০০০ সালে পরপর উদ্ধার হয়েছিল দেশি অস্ত্র। সেগুলিকেই নষ্ট করতে চাইছে থানা। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। তবে জানা যাচ্ছে, উদ্ধার হওয়া দাবিহীন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ম মেনে নষ্ট করা যায়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক শুধু বলেন, ‘‘পুলিশ একটি চিঠি পাঠিয়েছে বলে শুনেছি। তার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ আর মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘শুনেছি বিপুল সংখ্যক দেশি বন্দুক, হাত কামান প্রভৃতি রয়েছে।’’

এ সব অস্ত্রশস্ত্র উস্কে দেয় অতীত স্মৃতিও। ২০০০ সালে লাগাতার দেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল। যেমন, সে বছর ৫ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হয় ৫টি লোহার কামান, ৭টি লোহার বাটযুক্ত দেশি বন্দুক। ৯ সেপ্টেম্বর মেলে একটি দেশি হাত কামান, লম্বায় প্রায় সাড়ে তিন ফুট। আর একটি দেশি হাত কামান, লম্বায় সাড়ে চার ইঞ্চি নলযুক্ত। দু’টি হাতে তৈরি বন্দুক। লম্বায় প্রায় চার ফুট। এতে ১২ বোরের গুলি ব্যবহার করা যায়। এই তালিকা দীর্ঘ। তাতে রয়েছে ভকসলের মতো হাত কামানও। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর থেকেই কেশপুরে দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে। রাজনৈতিক মহল বলছে, সংঘর্ষের সূত্রপাত এক উপনির্বাচন ঘিরে। পাঁশকুড়া লোকসভা আসনে (অধুনা ঘাটাল) সেই উপনির্বাচনে বাম নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তকে পরাজিত করেন তৃণমূলের বিক্রম সরকার। এর পরেই কেশপুরের হারানো গ্রামাঞ্চল দখলে ঝাঁপিয়েছিল বাম-বাহিনী। সেই শুরু। এক সময়ে এই কেশপুর নিয়েই মমতা স্লোগান তোলেন, ‘কেশপুর, সিপিএমের শেষপুর’। যদিও পালাবদল হতে আরও বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হয় তৃণমূলকে। প্রশ্ন করা হলে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের বক্তব্য, ‘‘জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তখন তৃণমূলের লোকেরাই অস্ত্র আমদানি করেছিল।’’ ওই পর্বে কেশপুরে তৃণমূলের ‘রবিনহুড’ মহম্মদ রফিকের পাল্টা দাবি, ‘‘অস্ত্রের কারবার করেছিল সিপিএমই। আমাদের দল তখন নতুন। টাকা কোথায়, যে অস্ত্র কেনা হবে!’’

ইতিহাসের সাক্ষী সেই সব অস্ত্রই এ বারে নষ্ট করে দিতে চায় কেশপুর থানা।

অন্য বিষয়গুলি:

Keshpur Weapons
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy