Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

কাজ শুরু কামারকুণ্ডু উ়ড়ালপুলের

দাবি ছিল কয়েক দশকের। অবশেষে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার কামারকুণ্ডু লেভেলক্রসিংয়ে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হল। রেল এবং রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে ওই কাজ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওই পথে দীর্ঘ কয়েক দশকের যানজটের সমস্যা পুরোপুরি মোকাবিলা করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।

চলছে নির্মাণ ভাঙার কাজ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

চলছে নির্মাণ ভাঙার কাজ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপঙ্কর দে
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৫
Share: Save:

দাবি ছিল কয়েক দশকের। অবশেষে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার কামারকুণ্ডু লেভেলক্রসিংয়ে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হল। রেল এবং রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে ওই কাজ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওই পথে দীর্ঘ কয়েক দশকের যানজটের সমস্যা পুরোপুরি মোকাবিলা করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘উড়ালপুলের কাজ দ্রুত শেষ করতে রেলের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করা হচ্ছে।’’ হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল জানান, উড়ালপুল তৈরির জন্য প্রকৃতই যাঁদের জমি অধিগৃহীত হবে, তাঁরা বিধিবদ্ধ ক্ষতিপূরণ পাবেন। কাজ চলাকালীন ওই এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য বিকল্প হিসেবে একটি অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করা হবে।

পূর্ব রেলের হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার কামারকুণ্ডু স্টেশন সংলগ্ন তারকেশ্বর-বৈদ্যবাটি রোডে ওই লেভেলক্রসিং। স্থানীয়েরা রাস্তাটিকে ‘১২ নম্বর রুট’ বলেন। নীচে দিয়ে গিয়েছে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইন। ওই লাইন দিয়ে হাওড়া ও শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দূরপাল্লার ট্রেন চলে। চলে বহু লোকালও। লেভেলক্রসিংয়ের অদূরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। ফলে, সব সময় লেভেলক্রসিংয়ে গাড়ির ভিড় লেগেই থাকে। কলকাতার সঙ্গে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বা বর্ধমানে সড়কপথে সংযোগেরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ওই ‘১২ নম্বর রুট’। তারকেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার সময়েও বহু পুণ্যার্থীকে লেভেলক্রসিং পেরোতে হয়।

কিন্তু ওই লেভেলক্রসিংয়ে একবার রেলগেট বন্ধ হলে নাভিশ্বাস ওঠে যাত্রীদের। দীর্ঘক্ষণ আটকে যায় যানবাহন। হয় যানজটও। অ্যাম্বুল্যান্সও এগোতে পারে না। রোগীকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তাঁদের আত্মীয়েরা। সবচেয়ে দুর্বিষহ অবস্থা হয় শ্রাবণী মেলার (এ বার ইতিমধ্যেই যা শুরু হয়ে গিয়েছে) সময়। তারকেশ্বরের পুণ্যার্থীদের চাপে রেলগেট বন্ধ করা দুষ্কর হয়। গত বছরই শ্রাবণী মেলার সময় ওই লেভেলক্রসিংয়ে ভিড়ের চাপে এক মহিলা পদপিষ্ট হয়ে মারা যান। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্যই এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে ওই লেভেলক্রসিংয়ে উড়ালপুল তৈরির দাবি তুলছিলেন। অবশেষে সেই কাজ শুরু হওয়ায় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁরা। প্রকল্পটি হলে যাতায়াতে গতি আসবে বলে মনে করছেন গাড়ি-চালকেরা।

চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রকল্পের কাজ। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত উড়ালপুলের অংশে রাস্তার ধারে প্রায় ৭০ শতাংশ জবরদখলকারী নিজেরাই উঠে গিয়েছেন। যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কিছু জমির মালিক রয়েছেন। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে, সরকারি জমিতে যাঁরা দোকান করে রয়েছেন, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন না।

জেলা পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার সুমন জানা বলেন, ‘‘যাতায়াত চালু রাখতে আপাতত ওই রাস্তার পাশে একটি বাইপাস করা হবে। সেখান দিয়েই গাড়ি চলাচল করবে। তার পরেই মূল কাজ আরম্ভ হবে। পুণ্যার্থীদের যাতায়াতে অসুবিধা হবে না।’’

প্রস্তাবিত উড়ালপুলের রাস্তায় সরকারি জমিতে যাঁরা দোকান চালান এবং বসবাসও করেন, তাঁরা প্রকল্পটি প্রয়োজনীয়তার কথা মানলেও পুনর্বাসনেরও দাবি তুলেছেন। সব মিলিয়ে ওই জমিতে প্রায় ৫০০ মানুষের বাস। সামনে পুজোর মরসুম হওয়ায় উপার্জন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন। তাঁদের মধ্যে চায়ের দোকানি নবকুমার পালের আক্ষেপ, ‘‘ডানকুনি উড়ালপুল তৈরির সময় তৃণমূল পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন করে। সেখানকার দোকান-মালিকদের ঘর করে দেওয়া হয় হাউজিং মোড়ে। আমরা কেন পাব না?’’ মুদি-দোকানি রতন দাস বলেন, ‘‘মন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে সব জানিয়েছি। আমরা তো উন্নয়নের পক্ষে। চাই শুধু পুনর্বাসন।’’ আর এক দোকানি শেখ জিয়ারুল বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা দোকান সরিয়ে নিতে বলছেন। আমরা তো উন্নয়নের পক্ষে। উড়ালপুল হোক, আমাদের পুনর্বাসনও দেওয়া হোক। দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) তো জোর করে জমি নেওয়ার বিপক্ষে। তা হলে কেন আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করবে না সরকার?’’

মন্ত্রী বেচারামবাবু বলেন, ‘‘অ্যাপ্রোচ রোডের ধারেই আপাতত দোকানদাররা ব্যবসার কাজ চালাতে পারবেন। উড়ালপুলের কাজে ৮-১০টি বা়ড়ি ভাঙা পড়ছে। তাঁদেরই সরকারি প্রকল্পে ঘর করে দেওয়া হবে। উড়ালপুলটি অত্যন্ত জরুরি। সেই লক্ষ্যেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE