Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

দেখি, গরিব ঠিক বিচার পায় কি না

ধনী ও নির্ধন, আইন যে সকলের জন্যই এক— তার প্রমাণ পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এক মা।দুর্ঘটনায় সহ-আরোহী সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে সঙ্গে সঙ্গেই জামিনে মু্ক্তি পেয়ে গিয়েছেন গাড়িচালক, অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

বিচারপ্রার্থী: দুর্ঘটনায় ধৃত অর্ণবের মা করবী ঘোষ। শুক্রবার কলকাতা  হাইকোর্টে।—নিজস্ব চিত্র।

বিচারপ্রার্থী: দুর্ঘটনায় ধৃত অর্ণবের মা করবী ঘোষ। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১৫:১৫
Share: Save:

ধনী ও নির্ধন, আইন যে সকলের জন্যই এক— তার প্রমাণ পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এক মা।

দুর্ঘটনায় সহ-আরোহী সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে সঙ্গে সঙ্গেই জামিনে মু্ক্তি পেয়ে গিয়েছেন গাড়িচালক, অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

দুর্ঘটনায় লোকসঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পরে তাঁর গাড়ির চালক অর্ণব রাও কিন্তু জামিন না-পেয়ে ৫৯ দিন ধরে জেলবন্দি। একই রকমের দু’টি ঘটনা বা দুর্ঘটনায় দু’রকম আইনি ব্যবস্থা কেন, প্রশ্ন অর্ণবের মায়ের। উত্তরের খোঁজে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে ছেলের জামিনের মামলা দায়ের করে অর্ণবের মা করবী ঘোষ বললেন, ‘‘দেখি, গরিবের ভাগ্যে ঠিক বিচার জোটে কি না।’’ শুধু ওই মহিলা নয়, সমাজের একটি বড় অংশেরও অভিযোগ, প্রভাবশালী বলে বিক্রম মুক্ত থেকে গিয়েছেন। অত্যন্ত সাধারণ বলেই অর্ণবের ঠাঁই হয়েছে জেলে।

করবীদেবীর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু সিংহরায় জানান, মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ বিনা কারণে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে অর্ণবের বিরুদ্ধে। এবং ৫৯ দিন ধরে তাঁকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে বিনা কারণেই। হাইকোর্টে আর্জি জানানো হয়েছে, ইচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ঘটনা ঘটাননি অর্ণব। তাঁকে অবিলম্বে জামিন দেওয়া হোক।

‘‘গুড়াপ থানার পুলিশ জেনেবুঝে ছেলেকে জেলে আটকে রাখার ব্যবস্থা করেছে। চুঁচুড়া আদালতে বিচার পাব না জেনেই হাইকোর্টে জামিন চেয়ে মামলা করেছি,’’ বললেন করবীদেবী।

পুলিশ জানায়, ৭ মার্চ হুগলির গুড়াপে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে উল্টে যায় কালিকাপ্রসাদের গাড়ি। গাড়ি চালাচ্ছিলেন অর্ণব। তাঁর বাড়ি কসবার বোসপুকুর রোডে। সিউড়ির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ি উল্টে গুরুতর আহত কালিকাপ্রসাদকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দুর্ঘটনায় আহত হন কালিকাপ্রসাদের দলের পাঁচ জন।

পুলিশের অভিযোগ, বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন অর্ণব। সেই জন্য তাঁর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। ১৩ মার্চ চুঁচুড়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান গাড়িচালক। আদালত জামিন না-দিয়ে তাঁকে দু’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠায়। ১৫ মার্চ ফের আদালতে হাজির করানো হয় অর্ণবকে। আদালত তাঁকে জেল-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। সেই থেকে তিনি চুঁচুড়া জেলে রয়েছেন।

করবীদেবীর কৌঁসুলি জানান, ২৮ এপ্রিল শেষ রাতে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে প্রায় একই রকমের গাড়ি-দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মডেল সোনিকার। গাড়ি চালাচ্ছিলেন বিক্রম। ‘সেলিব্রিটি’ অভিনেতা ও শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে বিক্রমের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তিনি জামিনও পেয়ে গিয়েছেন। অথচ গরিব গাড়িচালক অর্ণব ৫৯ দিন ধরে জেলে রয়েছেন। হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ অভিযোগ করছেন, কোন ক্ষেত্রে অভিযুক্ত জামিন পাবেন আর কোন ক্ষেত্রে পাবেন না, পুলিশ যেন আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখছে!

এ দিন মামলা দায়ের করার পরে আদালত-চত্বরে দাঁড়িয়ে করবীদেবী জানান, ১১ এপ্রিল রাতে কসবা থানার কর্মীদের নিয়ে গুড়াপ থানার পুলিশ কসবার বাড়িতে অর্ণবের খোঁজে তল্লাশি চালায়। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তাঁর ছেলে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছিল, কোনও বিপদ হবে না। ছেলেকে নিয়ে তিনি যেন গুড়াপ থানায় চলে যান। কিন্তু অর্ণব তার পর থেকে ঘরে ফেরেননি। ‘‘গরিব বলেই কি আমার ছেলের জন্য আইনি ব্যবস্থা অন্য রকম হবে,’’ প্রশ্ন মায়ের।

অন্য বিষয়গুলি:

Kalika Prasad Bhattacharya Driver Justice Bail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE