আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডে চতুর্থ দিনের শুনানি শেষ হয়েছে কিছু ক্ষণ আগে। শুনানির লাইভ স্ট্রিমিং দেখার পর কী বলছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা?
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানরত আরজি করের সার্জারি বিভাগের জুনিয়র ডাক্তার দেবদূত ভদ্র বলছেন, ‘‘আজকের শুনানি যথেষ্ট সন্তোষজনক। আইনজীবী আমাদের সমস্যাগুলো যথাযথ ভাবে আদালতে তুলে ধরেছেন। আমরা জিবি করে আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব। তবে আরজি করে যা যা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তার সবটা এখনও হয়নি। পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি কিংবা নিরাপত্তারক্ষী এখনও মোতায়েন হয়নি। আমরা চাই সেগুলো দ্রুত করা হোক।’’
মহিলাদের বিষয়ে রাজ্যের বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্টের অসন্তোষ প্রকাশে কী বলছেন তাঁরা? এক চিকিৎসক রিয়া বেরার কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে যে ছেলেরা পড়াশোনা করছে, আমরাও তাদের সমান পড়াশোনা করেই এই জায়গায় পৌঁছেছি। তা হলে কর্মক্ষেত্রে আমরা সমান সুযোগ পাব না কেন? আমরা তো খাঁচার পাখি নই!’’
আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাতোর মতে, ‘‘তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আরও সুস্পষ্ট আলোচনার প্রয়োজন ছিল। তবে পাশাপাশি আমরা মনে করি, নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আমাদের যা যা দাবি ছিল, সেগুলিকে সুপ্রিম কোর্ট আজ মান্যতা দিয়েছে। অর্থাৎ, আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি এখন আইনসঙ্গত দাবিতে পরিণত হয়েছে। এখন রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে কাল যা যা সদর্থক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি যাতে বাস্তবায়িত হয়, সে দিকে তাকিয়ে আছি।’’ ভবিষ্যতে যাতে কোনও প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য প্রতিষ্ঠানে মতপ্রকাশের পরিসরকে আরও গণতান্ত্রিক করার ডাক দিয়েছেন অনিকেতরা। এ বিষয়ে আগেই রাজ্যের সহযোগিতা চেয়েছেন তাঁরা। অনিকেত আরও জানাচ্ছেন, আরজি করে এখনও অবধি মহিলা চিকিৎসকদের জন্য কোনও অন-কল রুম কিংবা রেস্ট রুম তৈরি হয়নি। বহু জায়গায় সিসিটিভিও বসেনি। তবে অদূর ভবিষ্যতে নিরাপত্তার বিষয়টি রাজ্য প্রশাসন গুরুত্ব নিয়ে দেখবে বলে বিশ্বাস তাঁদের। অনিকেত জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকাল ৪টে নাগাদ সমস্ত কলেজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকের পর নিজেদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা।
তবে আর এক আন্দোলনকারী অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, এটি একটি ‘প্রাতিষ্ঠানিক খুন’। অর্থাৎ, এর নেপথ্যে শুধুমাত্র নিরাপত্তা কিংবা তথ্যপ্রমাণ লোপাটের প্রশ্ন নেই। বরং যাঁরা এই ঘটনা ঘটানোর সাহস পেয়েছেন, তাঁরা জানতেন তাঁরা ধরা পড়বেন না। তাঁরা কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির মদতে এমন সাহস পেলেন, সে সব নিয়েও ভাবার অবকাশ আছে। এই প্রশ্ন আমরা গত কাল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সামনেও তুলেছি। এবং এই প্রশ্নগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে না দেখলে আমরা যে কর্মবিরতি তুলে কাজে ফিরতে পারব না, তা-ও জানিয়েছি।’’
মঙ্গলবার আরজি কর মামলার চতুর্থ শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। সিবিআইয়ের তরফে ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। রাজ্য সরকারের তরফে ছিলেন কপিল সিব্বল। মামলায় যুক্ত ছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিমেরাও। সেখানে আরজি কর-কাণ্ডে তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সিবিআইকে এক প্রকার বাহবা দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। তদন্তের স্বার্থে সিবিআইকে ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে না আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্যাতিতার নাম উইকিপিডিয়া থেকে সরানোরও নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। আন্দোলনরত ডাক্তারেরা কর্মবিরতি কবে তুলবেন জানতে চাওয়া হলে ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা বলেন, “জেনারেল বডি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার জন্য একটু সময় লাগবে।” এ ছাড়া, মহিলাদের সুরক্ষা প্রসঙ্গে রাজ্যের বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
প্রসঙ্গত, আরজি করের ঘটনার পর থেকে গত ৩৯ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সোমবার রাতে তাঁদের আন্দোলনের কাছে এক প্রকার ‘নতিস্বীকার’ করেছে সরকার। চিকিৎসকদের দাবি মেনে সিপির পদ থেকে মঙ্গলবার দুপুরেই সরানো হয়েছে বিনীত গোয়েলকে, সে জায়গায় বহাল হয়েছেন মনোজ বর্মা। শুধু তা-ই নয়, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকেও অপসারণ করা হচ্ছে। আন্দোলনকারী চিকিৎসক অনিকেত কর বলছেন, ‘‘এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে আমাদের ৩৮ দিনের আন্দোলনের আংশিক জয়।’’ কিন্তু কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত এখনই নয়; বৈঠকে যে যে আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, সেগুলো কার্যকর হলে তবেই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তারেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy