সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডল। — ফাইল চিত্র।
আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় শনিবারই গ্রেফতার হয়েছেন টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। গ্রেফতার দেখানো হয়েছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও (আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন সন্দীপ)। তাঁদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি, টালবাহানার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, তদন্তের অভিমুখও নাকি ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা! মূল অভিযুক্তকে বাঁচানোর জন্যই কি এই তৎপরতা? না কি ‘আরও কিছু’ ধামাচাপা দিতে? কী বলছে সিবিআই?
সিবিআইয়ের দাবি, এই মৃত্যুপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে বৃহত্তর ‘ষড়যন্ত্র’ থাকতে পারে। আর তাতে জড়িত থাকতে পারেন পুলিশ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ— সকলেই। রবিবার আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, ঘটনার দিন দেহ উদ্ধারের পরেই সন্দীপ এবং অভিজিতের ফোনে কথা হয়েছিল। সকাল ১০টা ০৩ মিনিট নাগাদ খবর পান, অথচ তারও প্রায় এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছন তিনি। টালা থানার তৎকালীন ওসি এত দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন কেন? শুধু তাই নয়, দ্রুত ঘটনাস্থল ঘেরা হল না কেন? কেন একাধিক বার সেখানে অবাধে ঢুকলেন, বেরোলেন নানা মানুষ? কেন ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা আইন অনুযায়ী ঘটনাস্থলের ভিডিয়োগ্রাফি করা হল না? এমনকি বাজেয়াপ্ত প্রক্রিয়াও শুরু হল ঘটনার অনেক পরে। এ সবের সুযোগ নিয়ে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন সিবিআই কর্তারা। অভিযুক্তকে কিংবা ‘অন্য কাউকে’ বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্যই এমন করা হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও।
গত ৯ অগস্ট চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পর একটি জিডি অর্থাৎ জেনারেল ডায়েরি নথিভুক্ত হয়েছিল। সেই ৫৪২ নং জিডিতে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, ‘‘আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুমে সেখানকারই এক পড়ুয়া চিকিৎসকের অচেতন দেহ পাওয়া গিয়েছে।’’ অথচ ওই চিকিৎসককে যে মৃত অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়, তত ক্ষণে তা কারও অজানা নয়। তা হলে ‘অচেতন দেহ পাওয়া গিয়েছে’ লেখা হল কেন? এ কি নিছক ভুল? না কি ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য দিয়ে তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা? প্রশ্ন তুলছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। শুধু তা-ই নয়, ঘটনার দিন দুপুর ২টো ৫৫ মিনিটে হাসপাতালের সুপার অভিযোগ জানান। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মৃতার পরিবার অভিযোগ করে। কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার অনেক পরে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। অভিযোগ, এর পরেই পুলিশের তৎপরতায় তড়িঘড়ি দাহ করে ফেলা হয় দেহ। এমনই নানা প্রশ্নে পুলিশের গাফিলতির কথা তুলে ধরেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
প্রসঙ্গত, আরজি করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন সন্দীপ। বর্তমানে সেই মামলাতেই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রয়েছেন তিনি। শনিবার রাতে চিকিৎসক খুনের ঘটনাতেও গ্রেফতার হন সন্দীপ। একই সঙ্গে গ্রেফতার হন অভিজিৎও। আরজি কর-কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। ছিল তথ্যপ্রমাণ লোপাট, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও। রবিবার অভিজিৎকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য শিয়ালদহ আদালতে আবেদন করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। সে সময়েই বিচারকের সামনে গ্রেফতারির সপক্ষে সাত দফা কারণ ব্যাখ্যা করে সিবিআই। সেখানে তথ্যপ্রমাণ লোপাট, দেরিতে এফআইআর দায়ের, ঘটনাস্থল বিকৃত করা— এমন নানা অভিযোগ উঠেছে অভিজিতের বিরুদ্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy