(বাঁ দিকে) সরিয়ে নেওয়া হল তৃণমূলের পতাকা। (ডান দিকে) পার্টি অফিস সাজাচ্ছেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সুশান্ত সরকার।
ব্যারাকপুরের পর এ বার জিরাট।
‘শান্তি অভিযানে’ নেমে ফের দখল করে নেওয়া সিপিএমের একটি দলীয় কার্যালয়ের চাবি ফিরিয়ে দিল শাসক দল। ক’দিন আগে যে লাল পতাকা খুলে নেওয়া হয়েছিল, তা আবার উড়তে শুরু করল।
ভোটের ফল বেরোতেই রাজ্য জুড়ে বারবার হিংসা আর হানাহানির অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের ফল প্রকাশের পরে কোনও হিংসাত্মক ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু হিংসা থেমে থাকেনি। হুগলিতেও শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, দখল, মারধর-হুমকির অভিযোগ ওঠা বন্ধ হয়নি। এ সবের মধ্যেও অবশ্য কিছু কিছু এলাকায় হিংসা রুখতে শাসক দলের উদ্যোগও সামনে এসেছে।
ক’দিন আগেই কালনার কুলটিবাজারে সিপিএমের শাখা অফিসে হামলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে কালনা-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায় ঘোষণা করেন, সিপিএম চাইলে ওই কার্যালয় আবার আগের অবস্থায় ফেরানোর জন্য অর্থ সাহায্য করতে চান দলের তরফে। বৃহস্পতিবার, ব্যারাকপুরের ১৪ নম্বর রেল গেটের কাছে এক সময়ে সিটু পরিচালিত অটো ইউনিয়নের দখল করে নেওয়া অফিসের তালা খুলে ফের সিপিএম নেতাদের হাতেই চাবি তুলে দেন সেখানকার বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত ও ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস-সহ তৃণমূল নেতারা। ওই রাতে একই ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয় জিরাটের সিপিএম কার্যালয়টিও।
জিরাট এলাকাটি বলাগড় ব্লকের অন্তর্গত। তৃণমূলের ব্লক স্তরের নেতা তপন দাস বলেন, ‘‘আমাদের কিছু ছেলে হয়তো অতি উৎসাহে ওই অফিসটি দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দলনেত্রী বদলার রাজনীতি চান না। আমরাও চাই না। তাই ওই অফিসের চাবি ওঁদের হাতে তুলে দেওয়া হল।’’
জিরাটের বহু মানুষ সমুদ্রে মাছ ধরতে যান। ওই সব মৎস্যজীবীদের মধ্যে বাম মনোভাবাপন্নেরা বেশ কয়েক বছর আগে জিরাট কলোনি বাজারে সিপিএমের ওই কার্যালয়টি তৈরি করেন। কার্যালয়ের নাম দেওয়া হয় ‘বলাগড় নাবিক সমিতি’। গত ১৯ মে ফল প্রকাশের রাতেই তৃণমূলের ছেলেরা ওই কার্যালয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিপিএমের পতাকা খুলে নেওয়া হয়। তালা ভেঙে সেখানে ঢোকে হামলাকারীরা। কার্যালয়ের নামও নীল কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়। নিজেরা নতুন করে তালাও দিয়ে দেয় হামলাকারীরা।
এই ক’দিন কার্যালয়টি তালাবন্ধই ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে বলাগড় ব্লক আইএনটিটিইউসি সভাপতি তথা জিরাট পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অশোক পোদ্দার, দলের নেতা তপন দাস-সহ তৃণমূলের বেশ কয়েক জন ওই কার্যালয়ের সামনে সিপিএমের স্থানীয় নেতাদের ডেকে নেন। তার পরে নিজেরা কার্যালয়ের দরজা খুলে চাবি ওই সিপিএম নেতাদের দিয়ে দেন। কার্যালয় দখল করে নেওয়ার ব্যাপারে নেতা হিসেবে দায় স্বীকার করে অশোকবাবুরা জানান, রাজনৈতিক সহাবস্থান রেখেই তাঁরা চলতে চান। এলাকায় যাতে অশান্তি না হয় দু’পক্ষই তা দেখবে।
শুক্রবার দুপুরে ওই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, সিপিএমের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা রয়েছেন। আসেন তপনবাবুও। কার্যালয়ে তৃণমূলের একটি দলীয় পতাকা রাখা ছিল। সিপিএম কর্মীরা সেটি তপনবাবুর হাতে দিয়ে দেন। নাবিক সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হরিপদ দাস বলেন, ‘‘বিরোধী দলের উপর হামলা জিরাটের সংস্কৃতি নয়। এ বার ওরা আমাদের পার্টি অফিস দখল করে নেওয়ায় হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ওদের নেতারা চাবি ফিরিয়ে দেওয়ায় আমরা সত্যিই খুব খুশি হয়েছি।’’
এই সৌজন্যের নজির জেলার সর্বত্র দেখানো হোক, এমনটাই এখন চাইছে বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy