জগমতী সঙ্গওয়ান
বিদ্রোহীকে ঘুঁটি করেই বিদ্রোহের বার্তা!
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে সিপিএম কেন কংগ্রেসের দিকে সমঝোতার হাত বাড়াল এবং সীতারাম ইয়েচুরিরা কেন তাতে সায় দিলেন, এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন জগমতী সঙ্গওয়ান। প্রকাশ্যে ইস্তফার কথা ঘোষণা করায় পত্রপাঠ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সে দিনই তাঁকে বহিষ্কার করেছিলেন। তার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলে ইয়েচুরি এবং সূর্যকান্ত মিশ্রকে কয়েক হাত নিয়েছিলেন হরিয়ানার জগমতী। দল থেকে বহিষ্কৃত সেই নেত্রীই এ বার সিপিএমের গণসংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় এগ্জিকিউটিভ কমিটিতে (সিইসি) জায়গা পেয়েছেন! সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের পদ তাঁকে ছাড়তে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এত কিছুর পরেও সিইসি-তে জায়গা ধরে রাখার ঘটনায় ইয়েচুরি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বঙ্গ ব্রিগেডের সঙ্গে সংঘাতের বার্তাই দেখছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ।
সিপিএমের অন্দরে জগমতী বরাবরই পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। কংগ্রেসের হাত ধরার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কমিটিতে হইচই বাধানোর চিত্রনাট্যের নেপথ্যে বৃন্দারই মস্তিষ্ক ছিল বলে দলের একাংশের দৃঢ় বিশ্বাস! কার্যক্ষেত্রে চালের একটু গণ্ডগোলে দল থেকেই ছিটকে যেতে হয়েছিল জগমতীকে। তাঁর জায়গায় মহিলা সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মারিয়ম ধওয়ালে ইয়েচুরি শিবিরের নেত্রী (পলিটব্যুরোর তরফে ইয়েচুরিই মহারাষ্ট্রের দায়িত্বে) বলেই চিহ্নিত। কিন্তু নতুন কমিটিতে জগমতীর জন্য জায়গা রেখে দিয়ে ইয়েচুরি ও বঙ্গ শিবিরের সঙ্গে কারাটেরা সংঘাতের পথেই হেঁটেছেন বলে দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা। আর মহিলা সমিতিতে বৃন্দার প্রভাবের কথা ভূ-ভারতে কারও অজানা নয়!
বিদ্রোহের উপরে আইনি মোড়ক রাখার সুযোগ অবশ্য বৃন্দারা পেয়েছেন। সিপিএমের দলীয় এবং গণসংগঠনের গঠনতন্ত্র আলাদা। তাই সিটু, কৃষক সভা বা মহিলা সমিতিতে এমন কেউ থাকতেই পারেন, যাঁরা সিপিএমের সদস্য নন। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কারের পরে গণসংগঠনে থাকলে বিতর্ক অবধারিতই। সাম্প্রতিক অতীতে লক্ষ্মণ শেঠকে সিপিএম বহিষ্কার করার পরে তিনি সিটুর রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য রয়ে গিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সিটু থেকেও আলাদা ভাবে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। জগমতীর প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, ভেবেচিন্তেই ওঁকে কমিটিতে রাখা হয়েছে! ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে কি না, এখনই বলা কঠিন!’’
ভোপালে মহিলা সমিতির সদ্যসমাপ্ত একাদশ সর্বভারতীয় সম্মেলন থেকে মারিয়ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, বাংলার মালিনী ভট্টাচার্য পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন সভানেত্রী পদে। কোষাধ্যক্ষা হয়েছেন কেরলের সাংসদ পি কে শ্রীমতি। তাঁদের ৯৯ সদস্যের সিইসি-তে জগমতীকে রাখা নিয়ে সর্বভারতীয় সভানেত্রী মালিনীদেবী আইনি ব্যাখ্যাই দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এতে তো কোনও অসুবিধা নেই। শুধু জগমতীই নন, এমন আরও কয়েক জন সিইসি-তে আছেন, যাঁরা কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নন। স্বাধীন ভাবে গণসংগঠন তো করাই যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy