Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

কত সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপন, প্রশ্ন তিন মৃত্যুতে

মূলত, কিডনি, লিভারের মতো অতি জরুরি প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের সাম্প্রতিক তিনটি ঘটনায় তিন গ্রহীতার মৃত্যুতে এই উদ্যোগের সাফল্য প্রশ্নের মুখোমুখি।

মৃত মৌমিতা চক্রবর্তী।

মৃত মৌমিতা চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩৭
Share: Save:

দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো পশ্চিমবঙ্গেও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার বে়ড়েছে। কিন্তু এই ধরনের প্রতিস্থাপন শেষ পর্যন্ত ‘সফল’ হয়েছে বা হচ্ছে কতটা! এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছিলই। সোমবার মৌমিতা চক্রবর্তী নামে এক তরুণীর মৃত্যু সেই প্রশ্নকেই আরও জোরদার করল। মূলত, কিডনি, লিভারের মতো অতি জরুরি প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের সাম্প্রতিক তিনটি ঘটনায় তিন গ্রহীতার মৃত্যুতে এই উদ্যোগের সাফল্য প্রশ্নের মুখোমুখি।

খড়দহের বছর চব্বিশের মৌমিতা সোমবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে মারা যান। শুক্রবার রাতে তাঁর দেহে শিলিগুড়ির কিশোরী মল্লিকা মজুমদারের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতার জেরেই মৌমিতা মারা গিয়েছেন বলে চিকিৎসকদের অভিমত। কয়েক মাস আগে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে মারা যান ২৬ বছরের মধুমিতা বিশ্বাস। আর লিভার প্রতিস্থাপনের পরে মারা যান শচীন্দ্রনাথ মিশ্র। প্রশ্ন উঠছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো জটিল অস্ত্রোপচারের পরবর্তী চিকিৎসা নিয়ে কবে সতর্ক হবে স্বাস্থ্য দফতর?

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ থেকে চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের অগস্ট পর্যন্ত ১৯ জনের ‘ব্রেন ডেথ’ বা মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ন’জনের অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রহীতার দেহে। শেষ দেড় বছরে চার জনের ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হযেছিল। তাঁদের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে দু’জন কিডনি গ্রহীতা এবং এক জন লিভার গ্রহীতা মারা গেলেন। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সাফল্যের বিচারে এটা উদ্বেগজনক বলেই চিকিৎসকদের অভিমত।

স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে-কোনও ধরনের বিপদ ঘটতেই পারে। অস্ত্রোপচারের আগে রক্তের গ্রুপ, বয়সের মতো কয়েকটি প্রাথমিক বিষয়ের সাদৃশ্য দেখে প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে গ্রহীতার শরীর প্রতিস্থাপিত অঙ্গ গ্রহণ করবে কি না, সেই বিষয়ে ঝুঁকি থেকেই যায়।

তবে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের আগে সব মহলে যে-তৎপরতা থাকে, অস্ত্রোপচার-পরবর্তী চিকিৎসায় সেটা চোখে পড়ে না। রোগীর উপরে নজরদারিও কমতে থাকে। অধিকাংশ সময়েই ধরে নেওয়া হয়, রোগী বাঁচবে না। তাঁদের প্রশ্ন, প্রতিস্থাপনের পরে মৃত্যু যদি অত্যন্ত স্বাভাবিক বলেই গণ্য হবে, তা হলে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নতুন জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় কেন?

বিশেষজ্ঞেরা জানান, প্রতিস্থাপনে ঝুঁকি আছে। তা সত্ত্বেও এ রাজ্যের তুলনায় অন্যান্য জায়গায় সাফল্যের হার অনেক বেশি। প্রতিস্থাপিত অঙ্গ গ্রহণ না-করার প্রবণতা রোগীর শরীরে থাকেই। সেটাই অস্ত্রোপচার-পরবর্তী চিকিৎসায় চ্যালেঞ্জের বিষয়। এই দিকটি জোরদার করাই সব চেয়ে জরুরি। কিডনি কিংবা কর্নিয়ার মতো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অবশ্য অন্য রাজ্য সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সহজেই জিতে যাচ্ছে। তামিলনাড়ু ও দিল্লিতে কিডনি প্রতিস্থাপনে সাফল্যের হার ৯০ শতাংশেরও বেশি।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে আইটিইউয়ে রাখা হয়। সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। কাচে ঘেরা জায়গায় আশঙ্কাজনক রোগীকে রাখলে যে-বাড়তি সতর্কতা দরকার, অধিকাংশ জায়গায় সেটা দেখাই যায় না। ফলে বিপদ বাড়ে। মৌমিতা চক্রবর্তী কিংবা মধুমিতা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে এনেছে সংক্রমণই।

নজরদারির অভাবের অভিযোগ মানতে রাজি নয় স্বাস্থ্য দফতর। অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা অদিতিকিশোর সরকার বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের আগে কিংবা পরে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ে যথেষ্ট নজরদারি ও সতর্কতা রয়েছে। মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। তবে কোনও গাফিলতি নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Organ transplantation Moumita Chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE