Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ওপারের হুকুমেই ৩ খুনের ছক ছিল মুসার

মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসা গ্রেফতার হওয়ায় বীরভূমের লাভপুরে একটি সম্পন্ন বনেদি পরিবারের তিন জনকে হত্যার ছক বানচাল হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০৪:৩১
Share: Save:

মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসা গ্রেফতার হওয়ায় বীরভূমের লাভপুরে একটি সম্পন্ন বনেদি পরিবারের তিন জনকে হত্যার ছক বানচাল হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি।

ওই গোয়েন্দারা মনে করছেন, বাংলাদেশে পরপর পুরোহিত হত্যার ধাঁচে লাভপুরে এ দেশে প্রথম আইএস জঙ্গিদের আক্রমণ হতে যাচ্ছিল। তিন বয়স্ক (দুই বৃদ্ধ এবং এক বৃদ্ধা) সদস্য ছাড়া ওই পরিবারের নবীন প্রজন্মের সদস্যেরা এখন লাভপুরে থাকেন না।

গোয়েন্দাদের দাবি, মুসার ‘বস’ এক আইএস জঙ্গি বাংলাদেশ থেকে এই নির্দেশ দিয়েছিল। মুসার থেকে মেলা তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সেই ‘বস’কে ধরতে তৎপর হয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকেও ওই জঙ্গির বিষয়ে জানানো হয়েছে।

জেরায় গোয়েন্দারা জেনেছেন, মুসার সঙ্গে ভারতে আইএসের প্রধান শফি আরমারের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। শফিই তাকে বাংলাদেশের এক ব্যক্তির নির্দেশ মেনে কাজ করতে বলে।
কারণ, দু’জনেই বাংলায় কথা বলে। শফি মুসাকে জানায়, বাংলাদেশের ওই ব্যক্তি ‘বাংলা শাখা’র দায়িত্বে রয়েছে। মুসা জানিয়েছে, আইএসের ‘বাংলা শাখা’ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ নিয়ে। লক্ষ্য, দুই বাংলাকে নিয়ে এমন একটি রাষ্ট্র গড়া, যা শরিয়তি আইন মেনে চলবে।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মুসার ‘বস’-এর বয়স বছর ৪৫। বাংলাদেশে সে জামাত-ই-ইসলামির নেতা
হিসেবে পরিচিত। আইএসের অন্দরে সে শফি আরমারের পরের ধাপের নেতা। মূলত ‘সিঙ্গল ম্যান মডিউল’ (এক জনকে নিয়ে একটি শাখা) ব্যবহার করে গুপ্তহত্যার ভার দেওয়া হয়েছিল তাকে। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ওই জঙ্গি বেশ কয়েক বার মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ঘুরে গিয়েছে। টাকা-পয়সা পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে নতুন নিয়োগের যাবতীয় কাজ করে সে। তাকে ধরতে বাংলাদেশের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।’’

কিন্তু মুসা কেন লাভপুরের একই পরিবারের তিন বয়স্ককে মারার ছক কষেছিল?

গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, শত্রুতার জেরে নয়, স্রেফ আইএস জঙ্গিদের উপস্থিতির প্রমাণ দিতেই এই কাজ করতে মুসাকে পাঠানো হয়েছিল। আইএস ভাবধারায় ‘উদ্বুদ্ধ’ মুসার জন্য এটি ছিল ‘হাত পাকানো’র প্রথম কাজ। সে জন্য ‘টার্গেট’ও তাকেই ঠিক করতে দেওয়া হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের পরেই মুসার বাংলাদেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে বাংলাদেশের ‘বস’ তাকে পাকিস্তান এবং পরে আফগানিস্তানে পাঠিয়ে পুরোদস্তুর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত। গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় মুসা তাঁদের জানিয়েছে, প্রশিক্ষণ শেষে তাকে ফের ‘বাংলা শাখা’র কাজে লাগানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।

মুসাকে জেরা করছেন এমন এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘এই গ্রেফতারি আমাদের চিন্তা বাড়িয়েছে। এখন প্রায় প্রতিটি খুনের পিছনে জঙ্গি হামলার বিষয়টিও নজরে রাখতে হবে।’’ গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, জেরা-পর্বে মুসা তাদের জানিয়েছে, বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ বা ঢাকার গুলশনের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই। সেই সূত্রেই স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘আইএস-এর একটি মডিউল এর সঙ্গে অন্য মডিউলের কোনও যোগ নেই। জানি না, মুসার মতো আরও কেউ এ রাজ্যে লুকিয়ে রয়েছে কি না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

musa IS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE