ধৃত মিতার দেওর ও শাশুড়ি। —ফাইল চিত্র।
দশমীতে তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থেকেই পলাতক শাশুড়ি-দেওর। উলুবেড়িয়ার কুশবেড়িয়ার সেই গৃহবধূ মিতা মণ্ডলের খুনের অভিযোগে আগেই গ্রেফতার হয়েছিল তাঁর স্বামী ও শ্বশুর। কিন্তু হাওড়া জেলা পুলিশের ‘তৎপরতা’ সত্ত্বেও খোঁজ মিলছিল না শাশুড়ি ও দেওরের। সোমবার নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মিতার বাবা-সহ বাপের বাড়ির আত্মীয়েরা। ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর গভীর রাতেই মিতার শাশুড়ি কল্পনা মণ্ডল ও দেওর রাহুল মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এ দিন উলুবেড়িয়ার একটি আদালতে তোলা হলে তাদের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
কাকতালীয় ভাবেই কি? উঠছে প্রশ্ন! তবে কি এ ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের কোনও গাফিলতি ছিল? অবশ্য এমন সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা পুলিশের এক কর্তা। তাঁর সাফাই, “এমন ভাবে তদন্ত হয় না। সিআইডি-র সঙ্গে জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানেই ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
গড়িয়ার শান্তিনগরের বাসিন্দা মিতা দাসের বিয়ে হয়েছিল মাসছয়েক আগে। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই মিতাকে মারধর করত তাঁর স্বামী রানা মণ্ডল। এমনকী, মিতার বাপের বাড়ির থেকে পণের জন্যও টাকাপয়সা দাবি করেছিল সে। বিজয়া দশমীর ভোরে ফুলেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে মিতার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, মৃত অবস্থায় তাঁর দেহ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। মিতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাপের বাড়ির তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। মিতাকে খুনের অভিযোগে সেই রাতেই তাঁর স্বামী রানা ও শ্বশুর বিজেন্দ্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিতার স্বামী। মিতা আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে দাবি করে সে। যদিও সে দাবি মানতে নারাজ মিতার বাবা সহদেব দাস। মিতার কাকা রঞ্জিতবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘জামাই নেশাগ্রস্ত ছিল। প্রায়ই ভাইঝিকে মারধর করত। মিতা মাঝেমধ্যেই ওর মায়ের কাছে টাকা চাইত। ওকে খুন করা হয়েছে।’’
মিতার বাড়িতে তদন্তে সিআইডি আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েক দিনে ভাইরাল যাদবপুরের প্রাক্তনী মিতার ঘটনা। সোমবার সন্ধ্যায় যাদবপুরে মিতার অস্বাভাবাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে মিছিলও করেন তাঁর একদা সহপাঠী-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়ারা। তাতে সামিল হয়েছিলেন শহরের বহু মানুষও। ফলে চাপ বাড়ছিল জেলা পুলিশের উপর। নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
মিতার দেহের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে ঝুলন্ত অবস্থায়। ময়নাতদন্তের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা জানান, ঝুলন্ত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে দেহে কিছু লক্ষণ (মল বেরিয়ে আসা, কান থেকে রক্ত বেরিয়ে আসা ইত্যাদি) ফুটে ওঠে। এই ধরনের মৃত্যুকে সাধারণ ভাবে আত্মহত্যাই ধরা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মিতার দেহেও সেই সব লক্ষণ মিলেছে। একই সঙ্গে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ-ও জানানো হয়, এটি ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট। চূড়ান্ত রিপোর্ট মিলবে ভিসেরা পরীক্ষার পরেই। এটা আত্মহত্যা না হত্যা— তখনই তা পরিষ্কার হবে। তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনার রাতে মিতার স্বামী, অভিযুক্ত রানা স্ত্রীকে প্রচণ্ড মারধর করেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে। তার পর মৃতপ্রায় স্ত্রীকে সে ঝুলিয়ে দেয়, নাকি মারধরের জেরে মিতা আত্মঘাতী হন, তা নিয়েও অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে।
আরও পড়ুন
মিতার পথেই পায়েলের বিচার চায় পরিবার ও বন্ধুরা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy