মমতার বিরুদ্ধে ‘পিতৃতান্ত্রিক মন্তব্য’-এ সিপিএমে অস্বস্তি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সমালোচনা করতে গিয়ে সমাজমাধ্যমে সিপিএমের অনেক কর্মী-সমর্থকই হিতাহিত জ্ঞান রাখছেন না। সেই আক্রমণ ব্যক্তিগত স্তরে চলে যাচ্ছে। দলে এ নিয়ে অভিযোগ কম নেই। কিন্তু আরজি কর আবহে সে বিষয়েই লিখিত বয়ানে ‘পাপস্খালন’ করতে চাইল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। যা প্রাক্ সম্মেলন পর্বে দলের মধ্যে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের ‘বার্তা’ বলেই মনে করছেন অনেকে। যে বার্তা দলের অন্দরেও আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ডের পর মহিলাদের বিভিন্ন আন্দোলন বাংলাকে আলোড়িত করেছে। নাগরিক আন্দোলনের সেই ভিড়ে মিশে থেকেছে সিপিএমও। সেই সব প্রসঙ্গ নিয়েই ‘মেয়েদের লড়াই’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য সিপিএম। তারই মুখবন্ধে মমতার বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে ‘পিতৃতান্ত্রিক’ মন্তব্যের জন্য দলেরই ‘সাইবার বিপ্লবী’দের দুষেছে সিপিএম। মুখবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘...কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অদ্ভুত পোস্ট করে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর কম বয়সের ছবি পোস্ট করে তাঁরা মন্তব্য করেন যে, এই ছবি যদি ঠিক সময়ে পাত্রপক্ষের হাতে যেত, তা হলে আজ রাজ্যের এই রকম অবস্থা হত না। অর্থাৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি গৃহবধূ হয়েই থেকে যেতেন, যদি রাজনীতির ময়দানে না আসতেন, তা হলে আজ রাজ্যের এই রকম অবস্থা হত না।’ এর পরেই লেখা হয়েছে, ‘এই মন্তব্যের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ থাকলেও এটি একটি অত্যন্ত জঘন্য পিতৃতান্ত্রিক বয়ান। এক জন মহিলাকে রাজনীতির ময়দান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ঘরে আটকে রাখার পক্ষে নিজের অবস্থান ঘোষণা।’
মুখবন্ধে এর পরের অংশেই যা লেখা হয়েছে, তা থেকেই স্পষ্ট সিপিএম দলের একাংশের কর্মীকেই কাঠগড়ায় তুলে ‘পাপস্খালন’ করতে চেয়েছে। সিপিএমের ওই পুস্তিকায় লেখা হয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা তো বিজেপি-ও করেছে, কিন্তু মতাদর্শগত ভাবে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা তাদের নেই। তা-ই মেয়েদের স্বাধিকারের পক্ষের লড়াই আসলে শুধুমাত্র শাসকদলের সমালোচনা ও বিরোধিতার থেকে অনেক বেশি প্রসারিত ও গভীর লড়াই। এটা এক মুহূর্তের জন্য ভুললে চলবে না।’
সিপিএমের ওই পুস্তকের ‘প্রকাশক’ হিসাবে নাম রয়েছে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য সুখেন্দু পাণিগ্রাহীর। সুখেন্দু দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য দফতরকে আগলে রাখেন। সমাজমাধ্যম ব্যবহার, রুচিবোধের পাঠ দিতে অতীতে রাজ্য স্তরে এবং জেলা স্তরে কর্মশালা করেছে সিপিএম। কিন্তু দলের নেতারাই একান্ত আলোচনায় মানেন, অর্ধেক লোককে মৌলিক বিষয়গুলিই শেখানো যায়নি। এ প্রসঙ্গে অতীতেও আলোকপাত করেন অনেকে। সিপিএমের এই ‘পাপস্খালন’ নিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সিপিএম যা লিখেছে, তা সব তত্ত্বকথা। এগুলো ওদের নেতাকর্মীরাই মানেন না। মমতাদিকে কুরুচিকর আক্রমণ করাটাই ওদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ। ওরা বরং বিমান বসুকে নিয়ে আমার পোস্ট থেকে শিক্ষা নিক।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘এখন বিজেপি দেশের ক্ষমতায় আছে বলে আমাদের এ সব কথা বলতে বাধ্য হতে হচ্ছে। কিন্তু আমরাও গোড়ায় নজর দিইনি।’’ ওই নেতা উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘অধুনাপ্রয়াত শ্যামলী গুপ্ত রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে একটি সভায় বলেছিলেন, মমতা কোনও দিনও মা হতে পারেননি বলে উনি মায়ের যন্ত্রণা বোঝেন না। আমরা তখন কেবল নিন্দা করেই থেমেছিলাম। বিষ যে তখন থেকেই অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছিল, তা তখনই বোঝা উচিত ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy